Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Greenland

ভীতিপ্রদ

হিসাব বলিতেছে, উনিশশো নব্বইয়ের দশকে গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলিবার যা পরিমাণ ছিল, বর্তমানে তাহার গতি সাত গুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহাতে মনুষ্যজাতির মুখ্য ভূমিকা লইয়া সন্দেহ নাই।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

প্রকৃতি আর মানুষে যে দ্বন্দ্ব বাধিয়াছে, কেবল করোনাভাইরাসই তাহার প্রমাণ নহে। বিগত গ্রীষ্মে বিশ্বের তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছিল যে মাত্র দুই মাসে ছয় লক্ষ কোটি টন বরফ হারাইয়াছে গ্রিনল্যান্ড, এবং তাহার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২.২ মিলিমিটার বাড়িয়া গিয়াছে। হিসাব বলিতেছে, উনিশশো নব্বইয়ের দশকে গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলিবার যা পরিমাণ ছিল, বর্তমানে তাহার গতি সাত গুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহাতে মনুষ্যজাতির মুখ্য ভূমিকা লইয়া সন্দেহ নাই। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই গ্রহের উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাইতেছে। বরফে সূর্যালোকের অধিক প্রতিফলন ঘটে, বরফের গভীরে থাকা কৃষ্ণকায় পৃষ্ঠদেশও অধিক তাপ শোষণ করিতে সক্ষম, ফলে গলনের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হইতেছে। দক্ষিণ মেরু কিংবা সুউচ্চ পর্বতমালায় চোখ রাখিলে ইহার ভয়াবহতা বুঝা যাইবে। অতি দ্রুত হারে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হইতেছে বিশ্বের বৃহত্তম বরফের চাদর আন্টার্কটিকা। গলিতেছে হিমালয় পর্বতের হিমবাহগুলিও। উপকূল অঞ্চলে উঁচু হইতেছে জলস্তর।

এই ঘটনায় ভয় পাইতেই হয়, কেননা এই রূপ হইবার কথা ছিল না। যে পরিমাণ অতিরিক্ত বরফ গলিয়া যাইতেছে, আগামী পঞ্চাশ বৎসরেও তেমন হইবার কথা ছিল না। ২০১২ সালের জুলাই মাসের পর ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ডের এই বরফের গলন বিগত ৭০০ বৎসরের ইতিহাসে মাত্র তিন বার ঘটিল। গত বৎসর অগস্ট মাসের একটি দিনে সেইখানে ১২৫০ কোটি টন বরফ হ্রাস পাইয়াছে। জলের উপর দিয়া স্লেজ কুকুরদের গাড়ি টানিবার দৃশ্য কে ভুলিতে পারে? এক জলবায়ু বিজ্ঞানী অঙ্ক কষিয়া দেখাইয়াছেন, এই বরফগলা জল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা প্রদেশ বা জার্মানি দেশটিকে পাঁচ ইঞ্চি জলের নীচে নিমজ্জিত করিতে পারে। বস্তুত, গ্রিনল্যান্ডে যে পরিমাণ বরফ আছে, তাহা গলিয়া গেলে সমগ্র বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ ফুট বৃদ্ধি পাইবে। গ্রীষ্মের সময় যে বরফ গলিয়া যায় এবং শীতকালে পূরণ হইয়া যায়, উপর্যুপরি শুষ্ক বসন্ত এবং উষ্ণতম জুন ও জুলাই মাসের দৌলতে সেই কাজ কঠিন হইতেছে।

মানুষ অবশ্য এখনও অকুতোভয়। কালেভদ্রে বরফ গলিয়া যাইবার চমকপ্রদ চিত্র দেখিয়া হুতাশ বিনা আর কিছুই সে করে না। আবার তাহা বিস্মৃতও হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ, যাহা জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ, যথাশীঘ্র নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অথচ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং শক্তিশালী নীতি প্রণয়নের অভাবে তাহা হইয়া উঠে না। জলবায়ু সম্মিলনগুলি কাটিয়া যায় মূলত কূটনৈতিক চাপানউতোরে। যেন, পৃথিবীকে বাঁচাইবার তুলনায় দেশের ক্ষুদ্রস্বার্থ রক্ষা জরুরিতর। আইপিসিসি-র চতুর্থ রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রায় দেড় দশক কাটিয়া গেল। পরিবেশ রক্ষার্থে কোনও দেশই এখনও নিজের দায়িত্ব সম্পূর্ণ স্বীকার করিয়া উঠিতে পারিল না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যায় নেতাদের দেখিয়া আশঙ্কা হয়, ধ্বংস হওয়া ভিন্ন পরিবেশের, এবং এই দুনিয়ার, কোনও ভবিতব্য নাই। তাঁহারা ভুলিয়াছেন, অতিমারিও যদি বা ভ্রান্তি সংশোধনের সুযোগ দেয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন দিবে না। তাহার ক্ষতি অপরিবর্তনীয় এবং অপূরণীয়। উত্তর মেরুর গলিতে থাকা বরফকে যদি বহু দূরবর্তী বিপদ বলিয়া বিভ্রম হয়, তাঁহারা স্মরণে রাখিতে পারেন, জল গড়াইতে সময় লাগে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Greenland Global Warming Green House Gas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy