রাজস্থানে জয়পুর হাইকোর্টের বিচারপতি প্রথমে চমৎকৃত হইয়াছেন, পরে ক্রুদ্ধ। তাঁহার ক্রোধ অহেতুক নহে। ভিডিয়ো সংযোগে আদালতের কাজ চালাইতে গিয়া বিচারক যদি আবিষ্কার করেন, উকিল বাড়ির পোশাক পরিয়াই সওয়াল শুরু করিতেছেন, বিরক্তি স্বাভাবিক। আদালতের নিজস্ব আচরণবিধিতে পোশাকের বিশেষ ভূমিকা আছে। তাহা লইয়া তর্কবিতর্ক কম হয় নাই। সাহেবি আমলের পোশাক কেন আজও বলবৎ থাকিবে, প্রচণ্ড গরমের দেশে বিলাতি কেতার অনুকরণে কোট পরিবার দায় হইতে কেন আইনজীবীদের স্বাধীনতা মিলিবে না, সেই প্রশ্ন অনেক বার উঠিয়াছে, উঠিতেই পারে। উকিলের শামলা লইয়া কমলাকান্তের সুতীব্র কৌতুকের কথাও কোনও সাহিত্যরসিক স্মরণ করাইয়া দিতে পারেন। কিন্তু তর্কের কথাই হউক, রসের কথাই হউক, তাহা আদালতের রীতি অমান্য করিতেপারে না। আইন এবং বিধান যতক্ষণ জারি রহিয়াছে, ততক্ষণ তাহা মানিতে হইবে, গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহরে যত কষ্টই হউক না কেন। বিচারপতি শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য আইনজীবীকে তিরস্কার করিয়াছেন। ঠিক করিয়াছেন।
তবে কিনা, উকিল মহোদয়ের বিসদৃশ পোশাকের রহস্যটিও বোধ করি দুর্বোধ্য নহে। অনুমান করা চলে, যে বিসদৃশ অবস্থায় কাজ করিতে হইতেছে তাহাই এই গোলমালের মূলে— বাড়ি এবং কাজের জায়গার পার্থক্যটি তিনি সম্ভবত খেয়াল করেন নাই। অর্থাৎ, বিভ্রমের মূলে রহিয়াছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নামক কোভিড-তাড়িত বন্দোবস্তটি। প্রযুক্তি অনেক ধরনের কাজের ক্ষেত্রেই এই বিশেষ সুযোগটি করিয়া দিয়াছে, ফলে যে যাহার গৃহে বন্দি থাকিয়াও আপন কাজ সারিতে পারিতেছেন, এমনকি যে কাজে অনেকের সমবেত উপস্থিতি ও মতবিনিময়ের প্রয়োজন হয় তেমন কাজও চলিতেছে ভিডিয়ো-যোগে। এমন দূর-সমন্বয় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও চলিতেছে অনেক দিন যাবৎ, কিন্তু এখন তাহা সামগ্রিক কর্মক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনিয়াছে। করোনা-উত্তর কাণ্ডেও অনেক কাজ সম্ভবত এই ভাবেই চলিবে। সেই পরিবর্তনের সূত্র ধরিয়া অস্পষ্ট হইবে বাড়ি এবং কর্মস্থলের বিভাজনরেখাটিও। রাজস্থানের আইনজীবী যে ভুল করিয়াছেন, এই নূতন পৃথিবীতে বহু মানুষ হয়তো সেই ভুল করিতে থাকিবেন।
এই পরিবর্তন দৈনন্দিন জীবনের পক্ষে ভাল না মন্দ? বাড়িতে বসিয়া অফিসের কাজ সারিতে পারিলে আপাতদৃষ্টিতে অনেক সুবিধা হয়, অনেক সময় বাঁচে, পরিশ্রমও। কিন্তু হিসাবি নাগরিক ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া বলিতেই পারেন, অফিস বাড়িতে চলিয়া আসিলে বাড়ি বলিয়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকিবে কি? প্রশ্নটি উড়াইয়া দিবার নহে। যাঁহারা বাড়ি হইতে কাজ করিতে অভ্যস্ত, তাঁহাদের অনেকেরই দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক অবকাশের সুযোগ কম, এই কঠিন সত্য তাঁহারা ঠেকিয়া শিখিয়াছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে দুই পরিসরের দূরত্ব আরও কমিলে সেই সত্য হয়তো কঠিনতর হইবে। ভবিষ্যতের কোনও এক মে দিবসে বাড়ি হইতে কাজ করা নাগরিক হয়তো আবিষ্কার করিবেন, তাঁহার জীবনে ‘আট ঘণ্টার কর্মদিবস’-এর ধারণাটিই প্রযুক্তির কৃষ্ণগহ্বরে বিলীন হইয়া গিয়াছে, সর্বদাই ‘অফিস টাইম’। বাড়িই অফিস, সুতরাং অফিস যাইবার বালাই নাই, বাড়ি ফিরিবারও সুযোগ নাই। এবং জাগ্রত অবস্থায় বাড়ির পোশাক পরিবার প্রয়োজনও ফুরাইয়াছে।
আরও পড়ুন: কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy