Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Muharram

মহরম এলেই স্মৃতিপটে ভাসে কারবালার মর্মান্তিক দৃশ্য

মহরম মাসটি হিজরি অব্দের চারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাসের মধ্যে অন্যতম। এই মাসেই হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন।

মহরমের শোভাযাত্রা।

মহরমের শোভাযাত্রা।

রোশেনারা খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:১৫
Share: Save:

পবিত্র মহরম মাসে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত। মহরম হিজরি অব্দের প্রথম মাস। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় এই মাসের ১০ তারিখে ‘আশুরা’ পালন করে থাকেন। ‘আশুরা’ শব্দটি ‘আশরা’ শব্দের অপভ্রংশ। আরবিতে ‘আশরা’ শব্দটির অর্থ ‘দশ’।

মহরম মাসটি হিজরি অব্দের চারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাসের মধ্যে অন্যতম। এই মাসেই হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন। এই মাসে তিনি যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মহরম মাসের ১০ তারিখটিও বিভিন্ন কারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটি একাধারে পুণ্য অর্জনের ও শোকপালনের দিন। ধর্মমতে মহরম মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ্‌তালা আসমান-জমিন, বেহেস্ত-দোজখ, চন্দ্র-সূর্য, হাওয়া-পানি ইত্যাদি-সহ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন। আজকের দিনেই তিনি হজরত আদমকেও সৃষ্টি করেছিলেন। মহাপ্লাবনের সময় হজরত নুহুর নৌকা এই দিনেই জুদি পাহাড়ের পাদদেশে জমি পেয়েছিলেন। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, এই আশুরার দিনেই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন: নিরাপত্তার ঘেরাটোপ, পথে নেই তাজিয়া, বেনজির মহরম পালন কাশ্মীরে​

রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হোল আশুরার রোজা। আশুরার দিন রোজা রাখলে ও বিশেষ নামাজ আদায় করলে অধিক পুণ্য অর্জন হয়। হজরত মহম্মদ বলেছেন, আশুরার দিন যে ব্যক্তি তাঁর পরিবারের জন্য মুক্তহস্তে ব্যয় করবেন, আল্লাহপাক তাঁকে সারা বছরের সচ্ছলতা দান করবেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে আশুরার দিনটি পালন করেন।

আজকের দিনে শোক পালনের কারণ, হিজ্জরি ৬১ অব্দে ১০ মহরম মহম্মদের আদরের দৌহিত্র, ফতিমা বিবির পুত্র হজরত হুসেন, পরিবার ও অনুগামী-সহ কারবালা প্রান্তরে এজিদের সঙ্গে এক অসম যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন। এই নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে স্বৈরাচারী এজিদের হাত থেকে হুসেনের ৬ মাসের শিশুপুত্র আলি আসগরও রেহাই পাননি। এর কিছু দিন আগেই এজিদের ষড়যন্ত্রে ফতিমা-আলির জ্যেষ্ঠপুত্র হজরত হাসানকে হত্যা করেছিলেন তাঁরই এক স্ত্রী।

খলিফা মাবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র এজিদ হিজরির ৬০ অব্দে নিজেকে মুসলিম দুনিয়ার খলিফা ঘোষণা করেন। শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন স্বেচ্ছাচারী ও অত্যাচারী। এই সমস্ত কারণে হাসান-হুসেন তাঁকে খলিফা হিসেবে মান্যতা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিবার-পরিজন ও অনুগামীদের নিয়ে মদিনা ত্যাগ করে মক্কা চলে যান।

আরও পড়ুন: ‘নেতা হতে গেলে পুলিশ কর্তার কলার চেপে ধরো’, ছাত্রদের কংগ্রেস মন্ত্রীর উপদেশ

এই সময় ইরাকের অধিবাসীরা এজিদ ও ইরাকের শাসনকর্তা অবায়দুল্লার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বার বার হুসেনকে ইরাক যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। ইরাকিদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে হুসেন সকলকে নিয়ে ইরাকের উদ্দেশে রওনা দিলেন। এ দিকে তখন এজিদের অধীনস্থ ইরাকের শাসনকর্তা হুসেনের অনুগামী মুসলিমদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ইরাকিরা হুসেনকে খলিফা হিসেবে পেতে চাইলেও প্রাণভয়ে কেউ হুসেনের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখাল না। এই সুযোগে ওবায়দুল্লা চার হাজার সৈন্য কারবালার প্রান্তরে দলবল সমেত হুসেনকে ঘিরে ফেলে ফেরাত নদীতে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিল। পানি ছাড়া মানুষ কত ক্ষণ বাঁচবে? ছোট বাচ্চারা তৃষ্ণায় ছটফট করছে দেখে হুসেনের এক বিশ্বস্ত অনুগামী আব্বাস ফেরাত নদীতে পানি আনতে গেলেন। মশক ভরে পানি নিয়ে তিনি যখন শিবিরের উদ্দেশে দৌড়তে শুরু করেছেন, সেই সময় শত্রুপক্ষের তিরে তাঁর দুই হাত কাটা যায়। তিনি তখন মশকটি মুখে ধরে শিবিরের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। শিবিরে যে তাঁর প্রিয় হজরতের সন্তানেরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে। কিন্তু শিবিরে পৌঁছনোর আগেই বুকে তিরবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়ে গেলেন।

হুসেন এই অসহায় অবস্থায় বাধ্য হয়ে অবায়দুল্লার কাছে প্রস্তাব পাঠালেন, হয় তাঁদের মদিনায় ফিরতে দেওয়া হোক, তা না হলে এজিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে দেওয়া হোক। অবায়দুল্লা এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না।

এ দিকে পানির জন্য শিশুরা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। হুসেনের কোনও অনুরোধ উপরোধ শত্রুপক্ষ শুনতে চাইল না। হুসেন তাঁর ছ’মাসের শিশুপুত্র আলি আসগরকে বুকে নিয়ে ফিরাত নদীর দিকে রওনা দিলে, পিতার কোলেই তিরের আঘাতে আসগর প্রাণ হারায়। এই অবস্থায় হুসেন যখন তাঁবুর বাইরে বসে সন্তানশোকে বিলাপ করছিলেন, সেই সময় তিরবিদ্ধ হয়ে তিনি শহিদ হয়ে গেলে শত্রুপক্ষ তাঁর মাথা কেটে এজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: ভারতের আশ্রয় চাইলেন ইমরানের দলের প্রাক্তন এমএলএ​

তাই মহরম মাস এলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের স্মৃতিপটে কারবালার সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ভেসে ওঠে। ইসলামের ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। যে অধ্যায় সারা বিশ্বের মুসলিমরা বেদনার অশ্রু দিয়ে হৃদয়ে লিখে রেখেছেন। তাই আসুরার দিন আখড়া বা মিছিলের মাধ্যমে এক প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। কোনও রকম শক্তি প্রদর্শন বা ভীতি প্রদর্শন এই নকল যুদ্ধের উদ্দেশ্য নয়। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরা নিজেদের আঘাত করেন এবং অশ্রুপাতের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Muharram Karbala Historical Background
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy