Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

মহাসমুদ্রে দিশাহীন

ছয় বৎসর পূর্বে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে একটি প্রতিশ্রুতি ছিল— সাধারণ মানুষ ‘রিয়াল টাইম’ তথ্য পাইবেন।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

ছয় বৎসর পূর্বে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে একটি প্রতিশ্রুতি ছিল— সাধারণ মানুষ ‘রিয়াল টাইম’ তথ্য পাইবেন। অর্থাৎ, সরকারি পরিসংখ্যানের জন্য আর অপেক্ষা করিয়া থাকিতে হইবে না; যখন যাহা ঘটিবে, তাহার পরিসংখ্যানও তৎক্ষণাৎ মিলিবে। এই অতিমারি-বিধ্বস্ত ম্লান সময়েও সেই প্রতিশ্রুতির কথা ভাবিলে ভারতীয় নাগরিকের মুখে একটি বিষণ্ণ হাসি ফুটিতে পারে। যে সরকার রিয়াল টাইম তথ্য জ্ঞাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল, সেই সরকারই নির্বিকার চিত্তে জানাইতে পারে, লকডাউনে কত পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হইয়াছে, সে বিষয়ে তথ্য নাই; কত কৃষক আত্মঘাতী হইয়াছেন, তাহারও তথ্য নাই; এমনকি, কত জন কোভিড-যোদ্ধা মারা গিয়াছেন, সরকার তাহাও বলিতে পারে না। কর্মসংস্থানের হার লজ্জাজনক হইলে তথ্য লোপাট করিয়া দেওয়া হয়, গ্রামীণ ভারতে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ হ্রাস পাইলে সেই পরিসংখ্যানও দিনের আলো দেখিতে পায় না। ইহাই বুঝি ‘রিয়াল টাইম’ তথ্য!

এক্ষণে একটি আপত্তি উঠিতে পারে— ‘অচ্ছে দিন’এর কোনও প্রতিশ্রুতিই যেখানে পূরণ হয় নাই, সেখানে তথ্যের অস্বচ্ছতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া কেন? তাহার প্রধানতম কারণ, তথ্য বস্তুটির মাহাত্ম্য স্থান এবং কাল, কোনওটির দ্বারাই সীমিত নহে। ভারতের তথ্য শুধু ভারতেরই বিবেচ্য নহে, তাহার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্যের প্রতি আস্থা এতই কমিয়াছে যে, এই বৎসর বিশ্ব ব্যাঙ্ক তাহার বাৎসরিক সমীক্ষা ইজ় অব ডুয়িং বিজ়নেস প্রকাশ করিল না। জানাইল, গত তিন বৎসরে ভারত এই তালিকায় যে পরিমাণ ‘উন্নতি’ করিয়াছে, তাহা সন্দেহজনক; ফলে, নিরপেক্ষ তথ্যপরীক্ষকদের দ্বারা পরিসংখ্যান যাচাই করা প্রয়োজন। এমন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সম্মানবৃদ্ধি হয় না। চিরদরিদ্র ভারত বিশ্বমঞ্চে যে দুইটি কারণে উদাহরণস্বরূপ ছিল, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দুইটিরই সর্বনাশ হইয়াছে। প্রথমটি উদারবাদী গণতন্ত্র, এবং দ্বিতীয়টি পরিসংখ্যান। এবং, ইহা নেহাত সমাপতন নহে— গণতন্ত্র যত বিপন্ন হয়, তথ্য গোপন করিবার প্রবণতাও শাসকের ততই বাড়ে। এমনকি, অতিমারিজনিত অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবিলা করিতে যে ত্রাণ তহবিলের কথা ঘোষণা করিয়াছে সরকার, তাহাতেও বিপুল অস্বচ্ছতা। বস্তুত, সচেতন নাগরিক সমাজের একটি কাজ হইয়া দাঁড়াইয়াছে যে কোনও সরকারি ঘোষণা হইতে মিথ্যা ও অস্বচ্ছতার আবরণ সরাইয়া প্রকৃত তথ্যটি জনসমক্ষে পেশ করা। তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রতি এতখানি নাগরিক অনাস্থা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায় নাই।

তথ্যের অপর গুরুত্ব সময়ের নিরিখে। ভবিষ্যতের উন্নতি-অবনতির মাপ যেমন অতীতের তথ্যের ভিত্তিতে হইবে, তেমনই আগামিকালের পথটিও নির্ধারিত হইবে আজিকার অবস্থার কথা মাথায় রাখিয়াই। অর্থাৎ, অর্থব্যবস্থার মহাসমুদ্রে তথ্যই একমাত্র কম্পাস। তাহা লইয়া ছেলেখেলা করিলে দিগ্ভ্রষ্ট হওয়া কার্যত অবধারিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হার হইতে শিল্প-উৎপাদনের সূচক, ছোট-বড় হরেক ক্ষেত্রে হয় তথ্য গোপন করা হইয়াছে, নয়তো তাহাতে কারচুপি হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ। অর্থাৎ, ভারতে বর্তমানে যে তথ্য অমিল, তাহার কথা যদি ছাড়িয়াও দেওয়া যায়, সরকারের বদান্যতায় যে তথ্য এখনও মিলে, সেগুলিরও বিশ্বাসযোগ্যতা নাই। তথ্যের বৈধতা কাড়িয়া লইলে অতীতের সহিত তুলনার সুযোগ থাকে না— ফলে ব্যর্থতা চাপা দেওয়া সহজ হয়। কিন্তু, এই স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় তথ্যের গুরুত্ব নষ্ট করিলে ভবিষ্যতে আর পথের দিশা দেখাইবার উপায় থাকিবে না। সে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থাকুন আর না-ই থাকুন, বিপন্ন হইবে ভারত।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Real-Time Information BJP Achhe din
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy