—ফাইল চিত্র।
চারটি হত্যাকাণ্ড। চারটি তদন্ত। কিন্তু চারের বদলে একটিমাত্র তদন্তও হওয়া সম্ভব, যদি যথেষ্ট প্রমাণ মিলিয়া থাকে যে চারটি হত্যাকাণ্ড আসলে একই সূত্রে বাঁধা। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর, মনে করাইয়া দিতেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। কন্নড় সাহিত্যিক এম এম কালবুর্গি, সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ, সমাজকর্মী গোবিন্দ পানসারে ও নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সম্ভাবনা লইয়া আদালত আরও দ্রুত ও আরও নিশ্চিত তদন্তের নির্দেশ দিয়াছে। কালবুর্গি ও লঙ্কেশ হত্যার তদন্ত স্থগিত রাখিবার সিদ্ধান্ত বিষয়ে যথাক্রমে কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র সরকারকে ভর্ৎসনা করিয়াছে। সিবিআই-ও ভর্ৎসনার ভাগ পাইয়াছে, কেননা চারটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে তাহাদের নিকট ইতিমধ্যেই কিছু প্রমাণ আছে। বাস্তবিক, দাভোলকরের হত্যাকারীদের খুঁজিতে গিয়া সিবিআই ইঙ্গিত পাইয়াছে যে এই ঘটনাগুলি তো বিচ্ছিন্ন নহেই, হয়তো একই গোষ্ঠীর হাত রহিয়াছে প্রতিটির পিছনে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, প্রথমে এই প্রমাণাদি আদালতের সামনে পেশ করা হউক। তাহার পর যে সব তদন্ত একত্র লইয়া সম্পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলুক। কিন্তু কোনও পদক্ষেপেই বিলম্ব চলিবে না।
দুর্ভাগ্য যে, এই কথাটি বলিবার জন্যও বর্তমান ভারতে সুপ্রিম কোর্টের দরকার পড়ে। যে ভাবে গত কয়েক বৎসরে পর পর এই হত্যাগুলি সংঘটিত হইয়াছে, তাহা নাগরিক সমাজকে সন্ত্রস্ত করিয়া দিবার জন্য যথেষ্ট। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ভূমিকা প্রতিটির পিছনেই প্রত্যক্ষ, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই হত্যার আগে হুমকি আসিয়াছে এই ধরনের গোষ্ঠীর নিকট হইতে। বিশেষ করিয়া কালবুর্গি ও গৌরী লঙ্কেশের হত্যা দুইটি যে একই গোষ্ঠী দ্বারা সংঘটিত, তাহা ইতিমধ্যেই কর্নাটক সরকারের বিশেষ কমিটি জানাইয়া দিয়াছে। মুম্বই হাইকোর্টে চলিতেছে পানসারে ও দাভোলকরের হত্যা মামলা, যে দুইটির মধ্যেও সম্পর্ক প্রমাণিত। তাহা সত্ত্বেও কেন একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হিসাবে এইগুলিকে গ্রহণ করা হইতেছে না? বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের মেজাজমর্জির উপরেই কি এই বিবেচনা শেষ পর্যন্ত ছাড়িয়া দেওয়া হইবে?
সংশয়ের অবকাশ যথেষ্ট যে তদন্তের এই বিলম্বিত চালের মধ্যে একটি রাজনৈতিক খেলা আছে। সিবিআইয়ের ভিতরে রাজনীতির অনুপ্রবেশ লইয়া নূতন আলোকপাতের প্রয়োজন নাই। হত্যাকাণ্ডগুলিকে একটিমাত্র তদন্তের প্রেক্ষিতে আনিবার ক্ষেত্রে সিবিআইকে নির্দেশ দিবার এক্তিয়ারটিও কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যেই পড়ে। দ্রুত তদন্ত নিষ্পত্তি করিবার বিরুদ্ধে কী ধরনের চাপ কোথা হইতে আসিতেছে, প্রকাশ্য ইঙ্গিত না থাকিলেও তাহার রাজনীতিটিও বুঝিয়া লওয়া সম্ভব। নিহত ব্যক্তিরা সকলেই যুক্তিবুদ্ধির উপর নির্ভর করিয়া হিন্দুত্ববাদের অন্ধ সংস্কার ও নাগরিক অধিকারবিরোধী আজেন্ডাকে আক্রমণ করিতেছিলেন। এই মুহূর্তের কোন রাজনীতি হত্যাকারীদের আড়াল করিতে চাহে, তাহাও অতি সহজ অনুমান। অথচ সব মিলাইয়া ভারতীয় সমাজে ভিন্নমতাবলম্বী মানুষকে নিধন করিবার রীতিটিও ক্রমশ গা-সওয়া হইতে বসিয়াছে, নিধনকারীদের বাহির করিতে সরকারি গড়িমসি কিংবা অনিচ্ছাও নাগরিক সমাজ এক রকম মানিয়া লইতেছে— ইহাই লক্ষণীয়। ভরসা কেবল, বিচারবিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy