Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয়২

স্বাধীনতার সীমা

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এইখানেই। মাধ্যমটির প্রকৃত চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখিবার তাগিদে। সোশ্যাল মিডিয়া-প্রদত্ত স্বাধীনতার প্রয়োগ কত দূর হওয়া উচিত, তাহা নির্ণয়ের দায়িত্ব 

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন মাধ্যমটির স্বার্থেই। প্রতীকী চিত্র

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন মাধ্যমটির স্বার্থেই। প্রতীকী চিত্র

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

নাগরিক জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি প্রশ্নাতীত। এই পরিসরটি এখন সামাজিক মতপ্রকাশের প্রধানতম মঞ্চ। কিন্তু, মতপ্রকাশের, আলোচনার পাশাপাশি চলিতেছে অপরকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ। ধর্ম, রুচি, ব্যক্তিগত পরিসর লইয়া মাত্রাছাড়া ব্যঙ্গ, উপহাস। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠিতেছে গণমাধ্যমটির এমন অপপ্রয়োগ লইয়া। উদ্বিগ্ন দেশের সর্বোচ্চ আদালতও। উদ্বেগের আরও কারণ, এই দেশে সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করিবার মতো কোনও স্পষ্ট রূপরেখা কেন্দ্রীয় সরকার এত দিনেও স্থির করিতে পারে নাই। সেই কারণেই সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত এক শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে তিন সপ্তাহের সময়সীমা দিয়াছে। উক্ত সময়ের মধ্যে জানাইতে হইবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারির জন্য কেন্দ্র কোনও নির্দেশিকা তৈরি করিয়াছে কি না। এব‌ং ব্যক্তিপরিসর অক্ষুণ্ণ রাখিয়াই যাহাতে ইহার অপব্যবহার রোধ করিবার উপায় খোঁজা হয়, তাহাও স্পষ্ট ভাবে জানাইয়াছে সুপ্রিম কোর্ট।

নাগরিকের উপর খবরদারি করিবার অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রণকামী রাষ্ট্রের মজ্জাগত। বাস্তবের মাঠঘাট অপেক্ষা সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশ করা যে হেতু মানুষের পক্ষে সুবিধাজনক— কম্পিউটার বা ফোন হাতের নাগালে থাকিলেই চলে— সেই পরিসরটিতে নজরদারি করিবার বাসনাও পুলিশ-রাষ্ট্রের তীব্রতর। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়াইবার প্রবণতা ভারতে ইতিপূর্বে একাধিক বার দেখা গিয়াছে। গণতন্ত্রের সৌভাগ্য, এখনও অবধি সেই চেষ্টা সম্পূর্ণ সফল হয় নাই। সোশ্যাল মিডিয়া নীতি রূপায়ণের ফাঁক গলিয়া যাহাতে রাষ্ট্রীয় পাহারা সেই পরিসরটির দখল না নেয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। আদালত কথাটি স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। দায়িত্ব সরকারের। গণতন্ত্রে বিরোধিতার পরিসরের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই পরিসরটির সম্মান রক্ষা করাই প্রকৃত শাসকের কাজ। সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসরেও কথাটি প্রযোজ্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এইখানেই। মাধ্যমটির প্রকৃত চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখিবার তাগিদে। সোশ্যাল মিডিয়া-প্রদত্ত স্বাধীনতার প্রয়োগ কত দূর হওয়া উচিত, তাহা নির্ণয়ের দায়িত্ব এ যাবৎ কাল ব্যবহারকারীর শুভবুদ্ধির উপরই ন্যস্ত ছিল। দুর্ভাগ্য, নেটিজেনরা সেই দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন নাই। স্বাধীনতা যথেচ্ছাচারে পরিণত। বিরুদ্ধ মত, বিশ্বাসকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ চলিতেছে অবাধে। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাতেও ব্যক্তিগত আক্রমণের সেই কুরুচিকর ধারাটি প্রকট। সর্বোপরি, সোশ্যাল মিডিয়ার কুৎসা শুধুমাত্র ভার্চুয়াল পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নাই। ‘ছেলেধরা’ গুজব ফেসবুক, টুইটারের বাহিরেও ছড়াইয়াছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপ্রহারের ঘটনাও ঘটিয়াছে। বাস্তবে গুজব সৃষ্টিকারী, আক্রমণকারীর প্রতি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইলে, একই ব্যবস্থা সমাজমাধ্যমের ক্ষেত্রেও লওয়া হইবে না কেন? এই প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের অন্দরেও উঠিয়াছে। সুতরাং, কেন্দ্রকেই এই ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করিতে হইবে, নজরদারি এবং বাক্‌স্বাধীনতা— উভয়ের মধ্যে ঠিক ভারসাম্যটি বজায় রাখিয়া। সঙ্গে নিজেকেও বিরুদ্ধ মত শুনিবার অভ্যাস করিতে হইবে, যাহাতে নজরদারির কাজটি দলনিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Civil Soceity Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy