প্রতীকী ছবি।
একই মাসে উপর্যুপরি দুই বার। পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রান্তে দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষিত হইবার পর কীটনাশক খাইয়া আত্মঘাতী হইল। প্রথম ঘটনাটি জলপাইগুড়ির। দিনমজুরের দুই কন্যাকে তুলিয়া লইয়া গিয়া ধর্ষণ করা হয়। এক জনের বয়স ১৫, অন্য জন ১৩। বাড়ি ফিরিয়া দুই জনেই কীটনাশক খায়। বড়টির মৃত্যু হইয়াছে, ছোটটি কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচিয়াছে। বীরভূমের মুর্শিদপাড়ার ঘটনাটিও প্রায় একই রকম। নির্যাতনের যন্ত্রণার সহিত কিশোরী মনে জুড়িয়াছে সামাজিক সম্মানহানির দুশ্চিন্তা। চরম পথটি বাছিয়া লইবার ক্ষেত্রে এই অসম্মান ও লজ্জার বোধটিই সর্বাধিক দায়ী। নিঃসন্দেহে এহেন ঘটনাগুলি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা, সমাজের পক্ষেও গৌরবজনক নহে। মেয়েদের সক্ষমতার এই কি নিদর্শন?
মেয়েদের নিরাপত্তা দানের প্রাথমিক কাজটি পুলিশ ও প্রশাসনের। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে গোড়া হইতেই একটি সুবিশাল ফাঁক থাকিয়া গিয়াছে। এবং সেই ফাঁক গলিয়া নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ন্যায় ঘৃণ্য অপরাধগুলি অবাধে ঘটিতেছে। কখনও ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণে অনীহা, কখনও প্রভাবশালী অভিযুক্তকে আড়াল করা, বেআইনি মদের ঠেক এবং অসামাজিক কাজের বাড়বাড়ন্ত দেখিয়াও চুপ করিয়া থাকা, এমন নানা অভিযোগ অতীতে বহু বার উঠিয়াছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তদুপরি, করোনাকালে পুলিশের কাজ বাড়িয়াছে। সংক্রমণ-বিধি বলবৎ করা, লকডাউন কার্যকর করা-সহ অন্য নানাবিধ নূতন দায়িত্ব চাপিয়াছে। এমন অতিরিক্ত ব্যস্ততার ফলে অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনের কাজটি অবহেলিত হইতেছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা যাইতে পারে। লকডাউন চলাকালীন বালিকা ও মেয়েদের উপর নানাবিধ নির্যাতন বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহার প্রতিকারকল্পে কী ব্যবস্থা করা হইবে, মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিবার জন্য কী করা প্রয়োজন, সে সকল প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মিলে নাই। কোনও পরিকল্পনার আভাসও নাই।
অতিমারি আসিয়া সর্বস্তরে এক বিরাট পরিবর্তন সাধিত হইলেও অপরিবর্তিত রহিয়া গেল নারী নির্যাতনের ধারা এবং সমাজে মেয়েদের করুণ অবস্থাটি। কোন পরিস্থিতিতে এক কিশোরী নিজ জীবন শেষ করিয়া দিবার কথা ভাবে, বুঝিতে কষ্ট হয় না। ধর্ষিত হইলে সমাজ এখনও মেয়েদের দিকেই আঙুল তুলিয়া থাকে। বিচিত্র প্রশ্ন উঠে, সে একাকী টিউশন পড়িতে গিয়াছিল কেন, দোকান যাইবার প্রয়োজন হইয়াছিল কেন? অপরাধীর সহিত তাহার পরিচয় ছিল কি না? এমন সন্দেহ ও শ্লেষ মেয়েটিকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত পক্ষে যথেষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে সমাজ বা গ্রাম তো বটেই, নিজ পরিবারকেও সে পাশে পায় না। শুশ্রূষা করিয়া, সাহস ও আশ্বাস দিয়া সুস্থতার পথে তাহাকে লইয়া যাইবে, এমন মানুষ তাহার চোখে পড়ে না। একবিংশ শতকে জন্মগ্রহণ করিয়াও ধর্ষণের সামাজিক লজ্জা এবং অপমানের বোধটি যদি এত তীব্র হইয়া উঠিতে পারে, তবে আর সমাজের অগ্রগতি কী হইল? ধর্ষণের দায় নারীর নহে, তাহার লজ্জিত হইবার কোনও কারণ নাই— এই মূল বার্তাটিই যদি সমাজের কাছে না পৌঁছাইয়া থাকে, তাহা হইলে নারী নির্যাতন লইয়া এত আলোচনা, পৃথক সরকারি দফতর গঠন, নারীদিবস উদ্যাপনের সমুদয় উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। সরকার শুনিতেছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy