Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নিষ্ফলা প্রকল্প

সকল কৃষককে বৎসরে ছয় হাজার টাকা অনুদান দিবার অঙ্গীকার রক্ষা করিতে প্রথম বৎসরই ব্যর্থ হইল কেন্দ্র

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০৯
Share: Save:

সকল কৃষককে বৎসরে ছয় হাজার টাকা অনুদান দিবার অঙ্গীকার রক্ষা করিতে প্রথম বৎসরই ব্যর্থ হইল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা যত চাষির নিকট পৌঁছাইবার কথা ছিল, এখনও অবধি তাহার এক-তৃতীয়াংশ নথিভুক্তই হয় নাই। অতএব সরকার সাতাশি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করিলেও অন্তত সাঁইত্রিশ হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়িয়া থাকিবে। সাড়ে চৌদ্দ কোটি চাষির মধ্যে মাত্র তিন কোটি চাষি অনুদানের তিনটি কিস্তিই পাইয়াছেন। অনুদান বণ্টনের এই হাল হতাশ করিলেও, আশ্চর্য করিবে না। যাহার অনুকরণে ‘পিএম-কিসান’ নির্মিত হইয়াছে, তেলঙ্গানার সেই ‘রায়তুবন্ধু’ প্রকল্পটি শুরু হইবার পূর্বে কয়েক বৎসরের প্রস্তুতি চলিয়াছিল। প্রতিটি চাষযোগ্য জোতের স্থানাঙ্ক নির্ধারণ করিয়া, সেগুলির মালিকানার নথিভুক্তি করা হয়। কাহারা অনুদান পাইবার যোগ্য, তাঁহাদের অধিকাংশের পরিচয় নিশ্চিত করিবার পর প্রকল্প চালু করিয়াছে রাজ্য সরকার। নরেন্দ্র মোদী তাঁহার অনুসরণে গত লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে তড়িঘড়ি কৃষকের জন্য বার্ষিক অনুদানের ঘোষণা করিলেন, কিন্তু প্রস্তুতি-পর্বটি সারিবার চেষ্টাই করেন নাই। ফলে কত কৃষক ওই অনুদান পাইবার যোগ্য, তাহার কোনও প্রামাণ্য পরিসংখ্যান সরকারের নিকট নাই। বিভিন্ন দফতর হইতে বিবিধ তথ্য মিলিয়াছে, কিন্তু সেগুলিকে মেলানো যায় নাই। কর্ষিত জোতের সংখ্যা, জমির স্বত্বাধিকারীর সংখ্যা, এবং মোট কৃষিজীবীর সংখ্যা (ভূস্বত্বহীন চাষি-সহ), প্রতিটিই পৃথক। অতএব কত কৃষক অনুদান পাইবার অধিকারী, তাহা বুঝিবার উপায় নাই। খুব শীঘ্র বোঝা যাইবে, তাহার সম্ভাবনাও নাই, কারণ বেশ কিছু রাজ্য কৃষকদের নথিভুক্তিতে গড়িমসি করিতেছে। সকল চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আধার-সংযুক্ত নহে। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী রাজ্যগুলি তো বুঝাইয়া দিয়াছে যে তাহারা কেন্দ্রের প্রকল্পে অনাগ্রহী।

অতএব নির্বাচনে বহুল-প্রচারিত প্রকল্পটি শুরুতেই হোঁচট খাইল। ইহাতে চাষি আশ্চর্য হইবেন কি? ইতিপূর্বে নরেন্দ্র মোদী-ঘোষিত কৃষক-সহায়তার সকল প্রকল্পেরই এমন হাল হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা বিপুল ব্যয়ে অশ্বডিম্ব প্রসব করিয়াছে। তাহা লইয়া বিলক্ষণ ক্ষোভ ঘনাইয়াছে কৃষক মহলে। ভারতের অর্ধেক কৃষিজমি সেচহীন, বর্ষার অনিশ্চয়তা চাষিদের বিপন্ন করিতেছে, তাই বিমা পাইবার আশায় বহু চাষি উজ্জীবিত হইয়াছিলেন। ২০১৬ সালে চার কোটিরও অধিক চাষির নাম নথিভুক্ত হইয়াছিল। কিন্তু ফসলে ক্ষতির মূল্যায়নে গতি আসিল না, যথাসময়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণও মিলিল না, তাই অচিরে চাষিরা বিমা ছাড়িতে লাগিলেন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে অন্তত সত্তর লক্ষ চাষি বিমা ছাড়িয়াছেন, যদিও প্রিমিয়াম বাবদ খরচ বাড়িয়াছে তিন হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সকল চাষিকে বিমার অধীনে আনিবার যে অঙ্গীকার মোদী করিয়াছিলেন, তাহা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইতে বসিয়াছে। একই পরিস্থিতি মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ও তদনুযায়ী রাসায়নিক সার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রকল্পটির। ঘোষিত সরকারি নীতির রূপায়ণে এই ক্রমিক ব্যর্থতা কি কৃষকের সহিত প্রতারণা নহে? ২০২২ সালের মধ্যে চাষির রোজগার দ্বিগুণ করিবার প্রতিশ্রুতি বিজেপির নেতামন্ত্রীরা আজ জনসভায় উচ্চারণ করিতে পারিবেন কি?

অন্য বিষয়গুলি:

PM-Kisan Samman Nidhi PMO Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy