Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Extinction Rebellion

পৃথিবী বাঁচবে কী ভাবে

পশ্চিমি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের প্রতিবাদধর্মী কর্মসূচি নিয়েছে এ-হেন সব বিদ্রোহী সংস্থা; কোথাও রাস্তা বন্ধ করে গণমিছিল, কোথাও বা নামজাদা অনুষ্ঠানের বিঘ্ন ঘটানো।

ইন্দ্রজিৎ রায়
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩১
Share: Save:

এক্সটিংশন রেবেলিয়ন’, সংক্ষেপে ‘এক্সআর’। বছর পাঁচেক আগে ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি এখন পশ্চিমি দুনিয়ার অন্যতম আলোচিত নাম। সম্প্রতি দশ হাজার নাগরিক এদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাইওয়ে ধরে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগ-এর দিকে মিছিল করে হেঁটে যান। কী চায় এই এক্সআর? পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখ থেকে ফেরাতে চায়। আর একটি সংগঠন ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’— পেট্রল-ডিজ়েল ব্যবহার বন্ধ করার আবেদন করছে তারা। দুনিয়াকে বাঁচানোর কাজটা সহজ নয়— বিপ্লবের মতো। এক্সআর-এর মতে, এখন দুনিয়া জুড়ে এক বিপ্লব ছাড়া গতি নেই।

পশ্চিমি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের প্রতিবাদধর্মী কর্মসূচি নিয়েছে এ-হেন সব বিদ্রোহী সংস্থা; কোথাও রাস্তা বন্ধ করে গণমিছিল, কোথাও বা নামজাদা অনুষ্ঠানের বিঘ্ন ঘটানো। জুলাই মাসে লর্ডসে ক্রিকেট, উইম্বলডনে টেনিস কিছু ক্ষণের জন্য হলেও থেমে গিয়েছিল এই ‘বিপ্লবী’দের দৌরাত্ম্যে। উন্নত বিশ্বের নেতারা বা কর্পোরেট কর্তারা কথা যে একদমই শুনছেন না, এমনটা বলা যাবে না। ২০১৫ সালে প্যারিসে এবং ২০২১ সালে গ্লাসগোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকে ভারত-চিন’সহ সব দেশ চুক্তিতে সই করে অঙ্গীকারবদ্ধ। গত কয়েক বছরে পশ্চিমি দেশগুলি কিছু নীতি প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন ‘নেট জ়িরো’। এই নীতির অর্থ হল, বায়ুমণ্ডলে আর নতুন করে কার্বন ডাইঅক্সাইড আর মিথেন গ্যাস যোগ করা হবে না। কার্বন ডাইঅক্সাইডের মূল উৎস শিল্প, মিথেনের কৃষি ও পশুপালন।

কিন্তু, শুধু যে এক্সআর-এর মতো সংগঠনই পথে নামতে পারে, তা তো নয়। সরকার পরিবেশ-বান্ধব নীতি গ্রহণ করলে যাঁদের ক্ষতি, তাঁরাও তো প্রতিবাদ করতে পারেন। নেদারল্যান্ডস দেশটাই কৃষি আর পশুপালনে বিশ্বসেরা। সে দেশের সরকার পরিবেশ রক্ষার্থে যা নীতি স্থির করেছে, তার ফলে প্রায় বারো হাজার ডেয়ারি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তাই জুন মাসের শেষ দিকে গো-পালক ও কৃষকরা একযোগে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান।

তা হলে, কোন দিক থেকে সমস্যাটা দেখব? আগামী দিনের পরিবেশ বাঁচাব, না কি এখনকার কৃষকদের, বা শিল্পসংস্থাগুলির স্বার্থের কথা ভাবব? পৃথিবীকে বাঁচানোর তাগিদে একই সঙ্গে বহু মানুষ চরমপন্থী অবস্থান নেবেন, এমন আশা করা মুশকিল। গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ বন্ধ, চরম গ্রীষ্মেও এসি ব্যবহার না করা, কিংবা আমিষ, এমনকি দুগ্ধজাত খাদ্যও পুরোপুরি পরিত্যাগ করা— এতখানি ত্যাগস্বীকার করতে ক’জনই বা রাজি হবেন? এ সবের ব্যবহারে লাগাম টানা যেতে পারে বইকি। পশ্চিমি দুনিয়ায় এখন বহু ফুড-কোর্টে ‘প্ল্যান্ট-বেসড’ খাবারের আয়োজন থাকছে। ভারতেও ব্যক্তিগত স্তরে জীবনযাত্রায় অনেক বদল ঘটেছে; প্লাস্টিক-ব্যাগের ব্যবহার কমেছে, এলইডি বাল্‌ব-এর চল হয়েছে, ইত্যাদি। তবুও, আরও অনেক কিছুই করার আছে।

উদাহরণ হিসাবে দৈনন্দিন পরিবহণ ব্যবস্থার কথা ভাবা যাক। পশ্চিমের দেশগুলিতে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু বদল ঘটেছে। প্রথমত, সে সব দেশের সরকার চায় যে, পেট্রল-ডিজ়েল চালিত গাড়ি আগামী দশকে আর থাকবে না; ইলেকট্রিক গাড়িই শুধু চলবে। তবে, মুখে বললেই তো হবে না; তার জন্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সে ব্যবস্থা সরকার করছে— রাস্তার ধারে অজস্র ‘চার্জিং পয়েন্ট’ তৈরি হচ্ছে। ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার জন্য বিশেষ প্রণোদনারও ব্যবস্থা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বহু বড় শহরে সাবেক রাস্তার ধারেই সাইকেল-লেন এবং ইলেকট্রিক চালিত ট্রামলাইন গড়ে তোলা হচ্ছে; রীতিমতো মাথা খাটিয়ে, গাড়ির সঙ্গে সাইকেল ও ট্রামের সহাবস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তৃতীয়ত, লন্ডনের মতো বড় শহরের কেন্দ্রে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গেলেই মাত্রাতিরিক্ত কর চাপানো হচ্ছে, যাতে শহরের মধ্যে গাড়িজনিত দূষণ কমে।

এর পুরোটা না হলেও কিছু সহজ ও আয়ত্তাধীন পদক্ষেপ তো করা যেতেই পারে, যাতে দূষণ কমে। যেমন ধরা যাক, আমাদের শহরের অলিতে-গলিতে অটো গত এক দশকে কয়েকশো গুণ বেড়েছে। এই সব অটোর রুট পর্যালোচনা করে বর্তমানের সংখ্যা কমানো যেতেই পারে; পরিবর্তে, বিভিন্ন রাস্তায় ইলেকট্রিক চালিত মিনিবাস চালানোর ব্যবস্থা হোক।

মনে হতে পারে, কলকাতা শহরে সাইকেল-লেন তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু, কলকাতার প্রায় সমস্ত বড় রাস্তার দু’পাশ দখল করে বাজার বসে, দোকান চলে। রাস্তার এই অংশটা পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে সহজেই; আর সেখানে আগামী দিনে অবশ্যই গড়া যেতে পারে বিদেশের মতো আলাদা সাইকেল-লেন। কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউ টাউনে, বা দেশের অন্য নতুন প্ল্যানড সিটিগুলোতে তো কাজটা আরও সহজ; তবে, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন যথাযথ, বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা।

সরকার এই জাতীয় পদক্ষেপ করলে অটো-চালকরা এতে ক্ষিপ্ত হবেন, ফুটপাতের হকাররা ধর্না দেবেন— যেমনটা করেছেন নেদারল্যান্ডসের গো-পালকরাও। এই সমস্ত গোষ্ঠীর জন্য এককালীন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা আবশ্যিক। এদের যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিয়েও কিন্তু আখেরে সকলের উন্নতি হবে, অতএব, সেটাই কাম্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Climate Change
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy