Advertisement
E-Paper

বিবাহ নয়, বিবৃতি!

সম্ভবত লোকসভা ভোটের সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন, দলের অন্দরে কিছু কল করা হচ্ছে। কিছু কাঠি নড়াচড়া করছে। তখন থেকেই কি পার্টি অন্তপ্রাণ দিলীপের জীবনের নৌকা পাল তুলে সংসারসমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল?

The decision of Dilip Ghosh to marry BJP worker Rinku Majumdar is some statements too for some others

বহু অনুরোধ-উপরোধেও বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা তো নয়ই, বিয়ে পিছিয়ে দিতেও রাজি হননি দিলীপ ঘোষ। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৮
Share
Save

বসে আছেন না দাঁড়িয়ে? দাঁড়িয়ে থাকলে হাতের কাছে কিছু একটা ধরে নিন!

গত বুধবার সকালে যে ফোনটা এল, তার প্রথম বাক্যটিই ছিল এই। রসিকতাটা দ্রুত বুঝে বললাম, কেন? যা বলবেন সেটা শুনে পড়ে যেতে পারি? সহাস্য জবাব এল, ‘‘হ্যাঁ, পড়ে যাওয়ার মতোই খবর। দিলীপ ঘোষ বিয়ে করছেন!’’

পড়ে যাইনি। কারণ, হাঁটছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে কি, হাঁটাটাও বন্ধ হয়ে গেল! থমকে দাঁড়ানোর মতো খবরই বটে। আরএসএসের প্রাক্তন প্রচারক, ঘোষিত অকৃতদার দিলীপ বিয়ে করছেন? কী কাণ্ড!

পেশাদার সাংবাদিক এই সময়ে মনে মনে পুরো কপিটা ছকে নেয়। হেডিং কী হবে, ইন্ট্রো কী হবে, আর কী কী তথ্য জোগাড় করে জুড়তে হবে ইত্যাদি। তার অবশ্য প্রয়োজন হল না। কারণ, ফোনের ও প্রান্ত থেকে একটা আপাত-বিপজ্জনক বাক্য ভেসে এল। যা প্রকারান্তরে মন্ত্রগুপ্তির শপথ, ‘‘আপনি লিখবেন না জেনেই বললাম কিন্তু। পরশু (শুক্রবার) বিয়ে। বিজেপির মধ্যে একটা কানাঘুষো আছে বটে। কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে কিছু জানে না। দিনক্ষণও নয়। দিলীপদাও কাউকে কিছু বলছেন না। বিয়ে হয়ে গেলে ছবি পাঠাব। তখন লিখবেন।’’

ওয়েবসাইটে কর্মরত সাংবাদিক (যে বিলম্বের বিলাসিতা দেখাতে পারে না) তখন কী ভাববে? প্রথমত, মুষড়ে পড়বে। দ্বিতীয়ত, গোপনীয়তার শপথটা ভেঁজে নিতে নিতে ভাববে, অন্তত খবরটা তো এখন লিখে রেখে দেওয়া যাক। যাতে শুক্রবার ঘটনাটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটা পেয়ে আপলোড করে দেওয়া যায়। তা-ই সই। আগাম কপি লিখে রাখা গেল।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য তত দেরি করতে হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই হইহই করে আনন্দবাজার ডট কমে বেরিয়ে গেল ‘বাউন্ডুলে’ দিলীপের সংসার বাঁধার খবর। তার পর থেকে যে পরিমাণ আগ্রহ এই বিবাহ ঘিরে তৈরি হল, তার নজির স্মরণকালের মধ্যে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার মতোই বটে! সমাজমাধ্যম উপচে পড়ছে। কেউ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, তো কেউ চপল এবং চটুল রসিকতা করছেন (দ্বিতীয়টাই বেশি। যা আমাদের সামগ্রিক ক্রমনিম্নগামী রুচির পরিচয় দেয়) চ্যানেলে চ্যানেলে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। দিলীপ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না, কারও ফোন ধরছেন না বটে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্তদের কাছে তিনি খোশমেজাজ এবং অনর্গল। ভাবী স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার অবশ্য গুছিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। যা শুনে বোঝা যাচ্ছে, তিনি আপ্লুত এবং তাঁর রসিকতাবোধও মন্দ নয় (‘অনেকের অ্যাপ্লিকেশনই জমা পড়েছিল। আমারটাই গ্রাহ্য হয়েছে’ স্মর্তব্য)

নবদম্পতি ক্রুদ্ধ বা ক্ষুণ্ণ হবেন না ধরে নিয়ে খানিক হালকাচালেই লিখছি, প্রাক্‌বিবাহ পর্বে দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছিল পুরো মাখন। তফাত একটাই— দিলীপ ফ্রিজে রাখা মাখন আর রিঙ্কু রোদ্দুরে রাখা।

ইয়ার্কি থাক! ঘটনা হল, এই একটি বিবাহের খবরে মুর্শিদাবাদের অশান্তি, চাকরিহারাদের ক্ষোভ এবং তজ্জনিত অসহায়তা, আইপিএল— সমস্ত কর্পূরের মতো উবে গেল ধরাধাম থেকে!

অবাক লাগছিল! একজন পরাজিত সাংসদ (যিনি আবার তাঁর দলের কোনও পদেও এখন নেই। এখন তাঁর পরিচয় শুধুমাত্র এক নিছক রাজনৈতিক কর্মী) এই পরিমাণ অভিঘাত তৈরি করতে পারেন? দিলীপকে বললাম। হাসতে হাসতে তিনি বললেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ বিয়ে না করেও খবর ছিল। বিয়ে করেও খবর আছে।’’ বললাম, তাঁর বিয়ে নিয়ে যে পরিমাণ আগ্রহ সর্ব স্তরে তৈরি হয়েছে, সেটা সম্ভবত মুকেশ অম্বানীর পুত্রের বিয়েতেও হয়নি। দিলীপ বললেন, ‘‘তা-ও তো ওঁরা বড়লোক। ৭০০ কোটি না কত খরচ করেছেন! আমি তো ৭০০ টাকাও খরচ করিনি। সে ক্ষমতাও আমার নাই।’’ তার পরে কপট দুঃখ গলায় ঢেলে, ‘‘বিয়ে আমার, আর বাকি লোকেরা ফুটেজ খেয়ে চলে যাচ্ছে! কীর্তি আজ়াদ দেখলাম একটা ভিডিয়ো করেছে ‘আজ মেরি ইয়ার কি শাদি হ্যায়’ গান গেয়ে।’’ ঘটনাচক্রে, কীর্তির কাছেই গত লোকসভা ভোটে হেরেছিলেন দিলীপ। যে পরাজয়ের পরের সময়কে এ যাবৎ তাঁর জীবনে সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করেন তিনি। এবং বলেন, ‘‘জুলাই মাসের ওই কঠিন সময়ে শুধু দু’জন মহিলা আমার পাশে ছিলেন। এক জন আমার মা। দ্বিতীয় জন এই মহিলা। সেটা তো আমি ভুলতে পারব না।’’

কিন্তু এই লেখা সে কারণে নয়। এই লেখার উপজীব্য হল এই লেখার শিরোনাম: বিবাহ নয়, বিবৃতি!

বিবৃতি কি একটা? একাধিক!

বহু বার নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন (এই সে দিনও এক বিক্ষোভকারিণীকে বলেছেন, গলায় পা তুলে দেব)। কিন্তু জীবনসঙ্গিনী বাছার সময় দিলীপ ‘বিরল উদারতা’ দেখিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী বিবাহবিচ্ছিন্না এবং একলা মা। দ্বিতীয়ত, বিজেপির মতো একটি ‘রেজিমেন্টেড’ দলের সক্রিয় সদস্য। কিন্তু নিজের ব্যক্তিজীবনের এই মাইলফলকটির কথা দলের কাউকে ঘুণাক্ষরে জানতে দেননি। জানাতে চাননি (দলের কাউকে জানাতে চাননি মানে শুভেন্দু অধিকারীকেও বলতে হল না। তাতে বিরোধী দলনেতা ফোনে বা বাড়ি এসে শুভেচ্ছা জানালেন কি জানালেন না, তাতেও বয়ে গেল)। তিন, মন্ত্র পড়ে বৈদিক মতে, হোমাগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে বিয়ে করেছেন। হিন্দু বিবাহের যাবতীয় উপাচার মেনেছেন। মালাবদল হয়েছে। সিঁদুরদান। শুভদৃষ্টিও। কিন্তু লোক ডেকে ভূতভুজ্যির আয়োজন করেননি। রাজনীতিকেরা সাধারণত যা করে থাকেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, রাজনীতিকদের এক একটি বিবাহে কুম্ভমেলার ভিড় হয়। যা প্রকারান্তরে তাঁদের বৈভব এবং জনসংযোগের বিজ্ঞাপন। চতুর্থ, পরিষদীয় এবং কালক্রমে সংসদীয় রাজনীতিতে আসার আগে সঙ্ঘের প্রচারক থেকেছেন। সঙ্ঘের আচারবিচার মেনে চলেছেন কঠোর ভাবে। কিন্তু সেই সংগঠনকেও নিজের বিবাহের খবর জানাননি। এই কাণ্ড অভাবনীয়! তাঁর বিয়ের কানাঘুষো ছড়িয়ে পড়ার পরে সঙ্ঘের তিন সংগঠক দিলীপের নিউ টাউনের বাড়িতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। যাতে তিনি বিয়েটা এখনকার মতো পিছিয়ে দেন। তাতে নাকি তাঁর আবার রাজ্য সভাপতি পদে ফেরার পথ প্রশস্ত হবে (এ অবশ্য একেবারেই শোনা কথা। কোনও তরফে কোনও সমর্থনও নেই। এ সব খবরে থাকেও না)। কিন্তু দিলীপ অনড় থেকেছেন। উল্টে নাকি এমন পাল্টা ‘দুসরা’ দিয়েছিলেন যে, সঙ্ঘদূতদের উইকেট যায়-যায়!

দিলীপ অবশ্য বরাবরই আলাদা। তাঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা খরখরে ভাব আছে। চিনি-মাখানো কথা বলতে পারেন না। বলতেও চান না। কূটনীতি তাঁর ধাতে নেই। সোজা কথা সোজা ভাবে বলেন। এবং গাঁক-গাঁক করে বলেন। কেউ রাজনৈতিক আক্রমণ করলে শিং বাগিয়ে প্রতিআক্রমণে তেড়ে যান। তাতে কে কী ভাবল, সে সবের খুব তোয়াক্কাও করেন না। সঙ্ঘের প্রচারক থাকার সময়ের অভ্যাসবশত গামছাটি এখনও সঙ্গে রাখেন। তবে কিনা সাংসদ থাকার সময় সংসদীয় কমিটির সফরে পাঁচতারা হোটেলে থাকার সময়েও যে অভ্যাস ত্যাগ করেননি, সে গামছা এখন ছাড়তে যাবেন কেন? বালাই ষাট! কিন্তু পাশাপাশি একটা সময়ে গল্‌ফ খেলাও শুরু করেছিলেন। শুরু করেছিলেন ডিজ়াইনার টি-শার্ট আর রিমলেস চশমা পরা (এখনও পরেন)। তখন থেকেই কি প্রচারকের পরিধেয় খুলে ফেলেছিলেন তিনি? ঠাট দিলীপের বরাবরই ছিল। রাজনীতিতে আসার পরে কি ঠাটের সঙ্গে বাট জুড়ে ঠাটবাটের বিপজ্জনক বলয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি?

দেহঘড়ির মতো আমাদের প্রত্যেকের মনে একটা নীতির কম্পাসও থাকে। তার কাঁটা আমাদের ভিতরে নিরন্তর টিকটিক করে এবং ভাল বা মন্দের দিকে নিয়ে যায়। সে কাঁটা সব সময় যে ভালর দিকে যায়, তা-ও আবার নয়। প্রচারকের জীবন পেরিয়ে আসার পরে দিলীপের নীতির কম্পাসের কাঁটার চলন কি সামান্য বেভুল হয়ে গিয়েছিল? অন্তত তাঁর যাপনে? যেমন দলের অন্দরে তাঁর বিরোধীরা (দিলীপের হিতৈষীরা বলবেন, তাঁর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণেরা) বলতেন?

হতে পারে। না-ও হতে পারে। কিন্তু দিলীপ বরাবর নিজের মতো করে অনবদ্য থেকেছেন। এমনকি, এই বিবাহ অভিযান পর্যন্ত। সে গম্ভীর আওয়াজের রয়্যাল এনফিল্ড (পরিভাষায় ‘বুলেট’) চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোই হোক বা লাঠিখেলা বা মাছধরা। শর্টস পরে জগিং করেছেন। আঁকশি দিয়ে আম পেড়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের রগড়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছেন। পা ভেঙে হুইলচেয়ার-বন্দি হয়ে নির্বাচনের প্রচারে রত মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরার পরামর্শ দিয়েছেন। ভাবী স্ত্রীকে বলে দিয়েছেন, শপিং করতে, ফুচকা খাওয়াতে বা সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে পারবেন না! কখনও দিকে দিকে তাঁর মুন্ডুপাত হয়েছে। কখনও লোকে তাঁকে নিয়ে মশকরা করেছে। কিন্তু দিলীপ ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো নির্বিকার থেকেছেন। নিজের বক্তব্য থেকে একচুলও সরে আসেননি।

দিলীপকে খুব বেশি চিনি, এমন দাবি করলে মহাপাপ হবে। বেশি কথাবার্তাও হয়নি কখনও (একটু বিশদে কথা হয়েছিল, যখন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি আনন্দবাজার ডট কমের সম্পাদকীয় দফতরে এসেছিলেন ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’ শোয়ে সাক্ষাৎকার দিতে)। কিন্তু যত বার কথা বলেছি, মনে হয়েছে, তিনি এককথার মানুষ। হাকিম নড়ে যেতে পারে। হুকুম নড়বে না। যে কারণে বহু অনুরোধ-উপরোধেও তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা তো নয়ই, বিয়েটা নিদেনপক্ষে পিছিয়ে দিতেও রাজি হননি।

লোকসভা ভোটের আগে সেই সাক্ষাৎকারে অবশ্য তাঁকে খানিকটা মেদুর শুনিয়েছিল। ঘোষের পরিচিত নির্ঘোষ ছিল না। সম্ভবত তত দিনে তিনি জেনে গিয়েছিলেন যে, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে আর তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে না। কিন্তু তখনও জানতে পারেননি, কোন আসনে তাঁকে লড়তে পাঠানো হচ্ছে (শেষ পর্যন্ত যে যুদ্ধে তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, তা শত্রুকে বাঘ মারতে পাঠানোর মতো। হয় বাঘ মরবে, নয় শত্রু। পাকেচক্রে বর্ধমান-দুর্গাপুরের লড়াইয়ের মাঠে বাঘই মরেছিল। শত্রু নয়)। কিন্তু দিলীপ বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সভাপতিত্বে যে দল পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রেকর্ড সাফল্য (১৮টি আসন) পেয়েছিল, সেই দলের অন্দরে কিছু কল করা হচ্ছে। কিছু কাঠি নড়াচড়া করতে শুরু করেছে। দলের অন্দরে তাঁকে কোণঠাসা করা শুরু হয়ে গিয়েছে।

তখন থেকেই কি পার্টি-অন্তপ্রাণ দিলীপের জীবনের নৌকা পাল তুলে সংসারসমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল?

পাঁচ-ছ’বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে সঙ্ঘের টানে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তার পর থেকেই তাঁর অন্য রকম জীবন শুরু। রাজনীতিতে আসার আগে পর্যন্ত সেই জীবনই কাটিয়েছেন দিলীপ। সঙ্ঘের প্রচারক হিসেবে। শুক্রবারের গোধূলি লগ্নে বিয়ের ঘণ্টা দুয়েক আগে ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমাদের হিন্দুধর্মে প্রথমে ব্রহ্মচর্য, তার পরে গার্হস্থ, তার পরে বাণপ্রস্থ আর তারও পরে সন্ন্যাস । আমি ব্রহ্মচর্য, সন্ন্যাস, বাণপ্রস্থ কাটিয়ে গার্হস্থে প্রবেশ করছি। পাঁচ-ছ’বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। মা-কে ছেড়ে। তখন ব্রহ্মচর্য পালন করেছি। তার পরে সঙ্ঘের প্রচারক হিসাবে সন্ন্যাসজীবন। দল এমপি করেছিল। সেই সুবাদে চারধাম, ১২টা জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে নিয়েছি। ঢাকার রমনা কালীবাড়িতেও গিয়েছি। ওটাই ছিল আমার বাণপ্রস্থ। এখন গার্হস্থজীবন কাটাব।’’

কী থাকবে সেই জীবনে? রাজনীতি থাকবে। আর থাকবেন মা এবং স্ত্রী। জানাচ্ছেন দিলীপ। বলছেন, ‘‘আমি ষাট পেরিয়ে গিয়েছি। সেই ৬০ বছরের জীবনের ৫৫টা বছরই মায়ের সঙ্গে থাকতে পারিনি। এমপি হওয়ার পরে এক বার মা দিল্লিতে গিয়ে ১০ দিন ছিলেন। সেটাই যা মায়ের সঙ্গে থাকা। সেই মা এখন আমার কাছে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়া আমার পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। খেতে দেওয়ার লোক ছিল না। এমনও দিন গিয়েছে যে, আমার নিরাপত্তরক্ষীরা ওঁকে খেতে দিয়েছে। মায়ের কারণেই সংসার করা জরুরি ছিল।’’

তা বলে মর্নিং ওয়াকের আলাপীকে নিয়ে বিয়ে বসলেন? ভোরের মলয়পবন দিলীপ ঘোষের চিরকৌমার্যের ব্রত টলিয়ে দিল? রোম্যান্সের বাতাস সব এলোমেলো করে দিল?

বিবাহবাসরে যেতে যেতেও খরখরে দিলীপ ফিরে এলেন, ‘‘ধুস! মর্নিং ওয়াক-টোয়াক সব ফালতু গল্পকথা। বিয়ের আগে আমি কারও সঙ্গে কথা বলছি না বলে যে যার মতো বলে দিচ্ছে! আরে, আমার সঙ্গে ওঁর আলাপ পার্টি করার সময় থেকে! উনি তো আমারও আগে পার্টিতে এসেছেন। আমি এসেছি ২০১৫ সালে। উনি ২০১২ সালে। রাজ্য সভাপতি থাকার সময়েই পার্টিকর্মী হিসেবে আলাপ হয়েছিল। আগে উনি থাকতেন পাটুলিতে। তার পরে বাড়ি করে নিউ টাউনে থাকতে এলেন। তখন মাঝেমধ্যে মর্নিং ওয়াকেও আসতেন। যেমন আরও অনেক পার্টিকর্মীই আসতেন। কিন্তু মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে আলাপ-টালাপ বলে যা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে কোনও সত্যতা নেই।’’ তার পরে আরও দিলীপসুলভ গলায়, ‘‘প্রপোজ় কিন্তু উনিই আমায় করেছেন।’’

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, হতে পারে ষাট পেরিয়েছেন। কিন্তু বয়স দিলীপের ঝাড়াঝাপ্টা মেজাজটা মারতে পারেনি। সাধে কি বলেছিলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ বিয়ে না করেও খবর ছিল। বিয়ে করেও খবর আছে।’’

খবর? উঁহু, বিবৃতি!

সংক্ষেপে
  • প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের ফ্ল্যাটেই গোধূলি লগ্নে চার হাত এক হল দু’জনের। উপস্থিত রইলেন বর-কনের পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ কয়েক জন।
  • বিজেপি নেতার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে সম্পূর্ণ আড়ম্বরহীন ভাবে। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নিকটজনেরাই।
  • শুক্রবার গোধূলি লগ্নে দিলীপের বাড়িতে অত্যন্ত ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে দিলীপ-রিঙ্কুর চারহাত এক হবে।
Dilip Ghosh BJP Leader

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}