Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
CO2

মন্দা পেরিয়ে নতুন সুযোগ?

চাহিদা পড়ে যাওয়ার পরেও বিশ্ববাজারে ২০২১ সালে তেলের দাম বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুমান, আরও খানিক বাড়ার পর দাম স্থিতিশীল হবে।

দীপায়ন দে
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

অতিমারির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ন অথবা পরিবেশ দূষণের কি কোনও গূঢ় সম্পর্ক আছে? বেশ কিছু খ্যাতনামা পত্রপত্রিকায় এ কথা লেখা হয়েছে যে, বায়ুবাহিত এরোসল কোভিড সংক্রমণে সাহায্য করে, কিংবা তাপমান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ হ্রাস পেলেও পেতে পারে ইত্যাদি। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি-র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন বিভিন্ন রোগভোগ বাড়বে। কিন্তু সেটাই যে কোভিড অতিমারির কারণ, এমনটা বললেই কেমন খটকা লাগে। আসলে কি তা-ই?

২০১৫ সালে প্যারিস অধিবেশনে পরিবেশ চুক্তির ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ কিয়োটো প্রোটোকলের ফাঁস খুলে দিয়ে দেশগুলিকে ‘ডি-কার্বনাইজ়েশন’-এর পথে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল, যাতে সহজে কার্বন ক্রেডিট কেনাবেচা করা যায়, এবং আন্তর্জাতিক কার্বন লগ্নিকরণের পথ প্রশস্ত হয়। এতে পশ্চিম এশিয়ার তেল-প্রতুল দেশগুলোর উপভোক্তা কমে আসার সম্ভাবনা যেমন ছিল, তেমনই ভয় ছিল চিন-সহ অন্য এশীয় দেশগুলোর বাজার পড়ে যাওয়ার, যারা প্রথম বিশ্বের দৈনন্দিন অত্যাবশ্যক সব পণ্যই সরবরাহ করে থাকে। তার কারণ, প্রতিটি দেশ এটা বুঝতে পারছিল যে, ‘ডি-কার্বনাইজ়েশন’-এর মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিট আয় করতে গেলে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার; এবং, সেটা এশীয় দেশগুলোর তৈরি জিনিস আমদানি না করে একমাত্র দেশজ উৎপাদনেই করা সম্ভব। তত দিনে জলবায়ু পরিবর্তন-প্রতিরোধী অভিযোজন-প্রশমনের নীতিমালার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ‘গ্লোবাল গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’, যাতে জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোকে রূপায়িত করা যায়। এবং বিশ্ব অর্থনীতিও ডি-কার্বনাইজ়েশন’এর দিকে অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছে।

সেটা ২০১৭-র প্রায় মাঝামাঝি। বাদ সাধল তদানীন্তন ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। প্যারিস সমঝোতা থেকে হাত গুটিয়ে নিল আমেরিকা। তাই আবার হাল সামলাতে বিশ্বজোড়া প্রচেষ্টা চলতে লাগল। পেরিয়ে গেল ২০১৭ এবং ২০১৮-র রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু অধিবেশন। এমনকি কার্বন বিপণির সব পসরা সাজিয়ে বসে ২০১৯-এর জলবায়ু অধিবেশনে যখন আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে, তখন বেঁকে বসল ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়া। তার সঙ্গ দিল ‘ব্রিকস’-এর অন্য দু’টি দেশ— ভারত আর চিন। নিউ জ়িল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথ ভাবে প্রচেষ্টা চালালেও, ভেস্তে গেল ‘সিওপি ২৫’। গ্রিন ফান্ড-এর ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যও অধরা থাকল।

২০১৯-এর শেষ ভাগে বিশ্ব অর্থনীতি বেহাল। তখন আমাজ়ন পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে কেউই আগ্রহী হয়নি। ঠিক এই সময়ের পরেই, অতিমারির আবির্ভাব। অর্থনীতির বর্শামুখটা যেন রাতারাতি ঘুরে গিয়েছিল স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে। পরিবেশ তখন চুলোয় গিয়েছে। মৃত্যুমিছিল সামলাতেই হিমশিম প্রায় সব দেশ। তার পরের অবস্থা জানা। অতিমারির পরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় একটা বিশাল লগ্নি ঘটেছে ন্যায্য কারণেই। কিন্তু, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে বেড়েছে আরও কিছু জিনিস।

বিশিষ্ট বিজ্ঞান পত্রিকা হেলিয়োন-এ লেখা হয়েছে যে, অতিমারির পরে ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ বর্জ্য তৈরি হচ্ছে দিনপ্রতি গড়ে ষোলো লক্ষ মেট্রিক টন। এটা মূলত পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ। ও দিকে, চাহিদা পড়ে যাওয়ার পরেও বিশ্ববাজারে ২০২১ সালে তেলের দাম বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুমান, আরও খানিক বাড়ার পর দাম স্থিতিশীল হবে। অতিমারির ধাক্কায় দুঃস্থ অর্থনীতি সামলাতে যে ক্ষুদ্রশিল্পে লগ্নি করছে উন্নয়নশীল দেশগুলো, সেই ক্ষুদ্রশিল্পের জগতে শতকরা ৯৩ জন ব্যবসায়ীরই প্রয়োজন পড়বে নিরবচ্ছিন্ন শক্তির, পরিবেশের কথা ভাবার জো থাকবে না। এই ক্ষুদ্রশিল্পের অনেকটা জায়গা নেবে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সহযোগী শিল্প। তাই, যাঁরা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বা অভিযোজন উপযোগী প্রকল্পে লগ্নি করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাঁরা চাইবেন কোনও ছুতোয় তাঁদের ব্যবসাকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জুড়ে দিতে; যাঁরা নতুন ব্যবসায়ী, তাঁদের চোখ পড়বে ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’-এর দিকে। কারণ, ২৫ মে, ২০২১-এর গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, তাঁরা একটা মোটা অঙ্ক ধার্য করেছেন অতিমারি প্রশমনে।

আইপিসিসি-র ষষ্ঠ রিপোর্ট জানিয়েছে, গ্রহের তাপমান দুই ডিগ্রি কমানো প্রায় অসম্ভব। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সুস্বাস্থ্যের বিশ্ব প্রস্তুতিও ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্ট এ কথাও বলেছে যে, কার্বন সিঙ্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূলত শহুরে আগ্রাসনে। অতএব শহুরে কার্বন নিঃসরণ কমাতেই হবে। এই মন্দার বাজারে ব্যবসা এমন হতে হবে, যা অতিমারি আর পরিবেশের সমাপতিত অংশে বিছানো যায়।

অতএব, একটাই স্ট্র্যাটেজি— মিলিয়ে দিতে হবে অতিমারি আর জলবায়ু পরিবর্তন।

অন্য বিষয়গুলি:

CO2 coronavirus Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy