Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2022

ভোগেও এখন ট্যাগের আনন্দ

কুড়ির ঘরে বা আশেপাশে যাঁদের বয়স, সেই ‘মিলেনিয়াল’দের দৈনন্দিন জীবনের মতো পুজোর ‘ভোগ’-এও তাই এখন ‘ট্যাগ’-এর আনন্দ।

পুজো যাপনে ইন্টারনেটের প্রভাব।

পুজো যাপনে ইন্টারনেটের প্রভাব।

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৩৮
Share: Save:

এখান থেকে কি লাইভ করবি একটা?” “লাইভ পরে হবে! আগে এখানে একটা সেলফি তুলে ইনস্টা স্টোরিতে দিই!” “ভাই, ভিডিয়োগুলো পাঠাস। সব মিলিয়ে রিল বানিয়ে সবাইকে ট্যাগ করে দেব।” পুজোয় এমন কথোপকথন কানে এল। রিয়্যাল, থুড়ি বাস্তবের সঙ্গে এখন নিত্য বসত ইনস্টা রিলের। কুড়ির ঘরে বা আশেপাশে যাঁদের বয়স, সেই ‘মিলেনিয়াল’দের দৈনন্দিন জীবনের মতো পুজোর ‘ভোগ’-এও তাই এখন ‘ট্যাগ’-এর আনন্দ। পুজো যাপনে নানা ভাবে ইন্টারনেটের প্রভাব।

কোচবিহারের তৃতীয় বর্ষের কলেজপড়ুয়া শতরূপা রায় জানালেন, যাঁরা পাশে নেই, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু বাঁধতেই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে লাইভ করা খুবই পছন্দ তাঁর— “সব সময় নয়, যে পুজোয় দেখি অন্য রকম কিছু রয়েছে, সেখান থেকে লাইভ করি। যারা কাছে নেই, তাদের সঙ্গেও মনের কথা ভাগ করে নিই।”

নিজস্বী-বিলাস অক্ষুণ্ণ থাকলেও হালে মিলেনিয়ালদের মধ্যে স্থিরচিত্রের তুলনায় ভিডিয়োর জনপ্রিয়তা বেশি। তাই ভাইরাল হয় ভিডিয়ো মিমও। ভিডিয়ো তৈরির কোনও বিরাট কৌশল জানার দরকার নেই। মোবাইলে তোলা ভিডিয়োর সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমেই জোড়া যাবে গান। এই ভিডিয়ো-ভালবাসা থেকেই মিলেনিয়ালদের পুজোয় ভিডিয়ো ব্লগ বা ভ্লগিং করাও খুব চালু।

খাওয়াদাওয়াও পুজো-উপভোগের একটা বড় অঙ্গ ছিল বরাবর। তবে এখন মিলেনিয়ালদের কাছে খেতে যাওয়ার মতোই আর একটা নতুন ট্রেন্ড কারও বাড়িতে এক সঙ্গে আড্ডা দেওয়া এবং খাবার আনিয়ে নেওয়া। যাকে বলে হাউস পার্টি। এই ট্রেন্ডের পিছনেও সেই ইন্টারনেটের অবদান। খাবার ডেলিভারি করার নানা অ্যাপ আসায় এখন পছন্দের দোকানের খাবার খেতে আর সেই দোকানে যাওয়ার দরকার পড়ে না। তাই উনিশ-কুড়ির একটা বড় অংশই হালে হাউস পার্টির সমর্থক। তাঁদের কথায়, “কিছুটা ঘোরাঘুরি করে, আর ইচ্ছে না করলে কারও বাড়িতে সবাই জড়ো হও! ফেরার তাড়া বা ঝামেলা নেই।” তবে, দল বেঁধে লাইন দিয়ে খাওয়ার মধ্যেও আগেকার মতোই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন অনেকে।

মিলেনিয়ালদের অনেকের কাছে এই বন্ধুদের এক সঙ্গে পাওয়ার মজাটা অন্য রকম। কারণ তাঁরা অনেকেই সদ্য স্কুল থেকে কলেজে এসেছেন। স্কুলের যে বন্ধুদের সঙ্গে এত দিন সারা বছর আনন্দ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগ হত, এখন সেটা করার উপায় শুধু ছুটিতে। কলেজের গন্তব্যে আলাদা হয়ে গিয়েছে অনেক প্রিয় বন্ধুর পথ। স্কুলবেলার গন্ধ লেগে থাকা মন নিয়ে মিলেনিয়ালরা অনেকেই অপেক্ষা করেন পুজোর পাঁচ দিনের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, ঝাড়গ্রামের তিতাস ঘোষ বললেন, “স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যখন পুজো দেখতাম তখন তো এটা মনে হত না যে, ছুটির পরে আর তাদের সঙ্গে দেখা হবে না। কিন্তু কলেজে উঠে সেটা বদলে গিয়েছে। এখন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা পুজোর বড় টান।”

পুরনো বন্ধুত্বের মতোই পুজো সাক্ষী থাকে নতুন-পুরনো প্রেমেরও। তাই অষ্টমীর সকালে শাড়ি হোক বা নবমীর আড্ডা— মিলেনিয়াল মনে তাই পুজোর সময় প্রেমের আনাগোনাও মাস্ট। মনের মানুষ ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনেকেই তাই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েন ট্রেকিং-এ বা ঘুরতে। তাঁরা পুজোর ভিড় এড়িয়ে নিরালা কোনও জায়গায় এক সঙ্গে থাকতে চান। কারণ বন্ধুদের সঙ্গে ‘একা একা’ ঘুরতে যাওয়ার ছাড়পত্রও তো মেলে এই সময়েই।

তবে কেবল ব্যক্তিগত বৃত্তে আনন্দ-খুশির উদ্‌যাপনই নয়। অনেকেই উৎসবের খুশি ভাগ করে নিতে চান সকলের সঙ্গে। যাঁদের জীবনে খুশির আনাগোনা এত বেশি নয়, তাঁদের জন্যও চিন্তা করেন তাঁরা। পুজোর আগে থেকে কলকাতা-সহ নানা জেলাতেও দুঃস্থদের পাশে থাকার এমন নানা কাজে এগিয়ে আসতে দেখা যায় এই উনিশ কুড়িদেরই। করোনা-লকডাউনের সময় থেকেই এই সামাজিক দায়িত্ব নেওয়ার কাজে দেখা গিয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের। সেই সময়ই যাদবপুর-প্রেসিডেন্সি ও রাজ্যের অন্য নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তৈরি হওয়া ‘পৃথিবীর পাঠশালা’ রাজ্যের নানা জায়গায় এখনও চলছে। সেগুলিতে দুঃস্থ শিশুদের পড়াশোনা থেকে নানা শিক্ষায় শিক্ষিত করেন কলেজপড়ুয়ারাই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নাদিয়া ইমাম জানালেন, যে-যে জায়গায় পাঠশালাগুলি রয়েছে, পুজোর আগে সেখানে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, সেখানকার পাড়ার পুজোর সঙ্গেই মিশে যায় তাঁদের উদ্যোগও।

উৎসবের সময়ে সমাজমাধ্যমে নানা বিতর্কও চাগাড় দিয়ে ওঠে প্রায় প্রতি বছরই। কখনও কোনও বিজ্ঞাপন, কখনও খাবারের পছন্দকে নিশানা করে আক্রমণে নামে বিভেদকামীরা। তখন কিন্তু সমাজমাধ্যমে স্বচ্ছন্দ এই মিলেনিয়ালদেরই সেই ই-লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যায় যৌথতা রক্ষা করতে। অতিমারি-ক্লিষ্ট এই দুনিয়ায় যখন দূরে থাকার ভার্চুয়াল বাস্তবতা অনেকটা জায়গা দখল করে নিতে চাইছে, তখন তরুণ প্রজন্মের এমন মনোভাবই আগামীর আশ্বাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 internet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy