Advertisement
E-Paper

অভিবাসীদের দুঃসময় চলবে

ট্রাম্প প্রশাসনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হতে চলেছে তাঁর অভিবাসন নীতি। ইতিমধ্যেই এমন একাধিক এগজ়িকিউটিভ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, অভিবাসনে যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে।

ঐশিকা গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৭
Share
Save

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের ‘ইনগরেশন’-এর পরেই সরকারি ওয়েবসাইটে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার সংক্রান্ত একটি বার্তা আপলোড করা হয়; ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যে সব প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তার অনেকগুলিই রয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’স আমেরিকা ফার্স্ট প্রায়রিটিজ়’ শীর্ষক সেই বার্তায়। ট্রাম্প প্রশাসনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হতে চলেছে তাঁর অভিবাসন নীতি। ইতিমধ্যেই এমন একাধিক এগজ়িকিউটিভ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, অভিবাসনে যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে।

এই প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে, সব সরকারি বিভাগ, বিশেষত স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা বিদেশ দফতর যাতে ‘আমেরিকা-ফার্স্ট বিদেশ নীতি’ অনুসরণ করে, তা নিশ্চিত করা হবে। অনুমান, আমেরিকার ভিসা মঞ্জুর করা নিয়ে কড়াকড়ি বাড়বে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে প্রথমে সপ্তাহেই যে এগজ়িকিউটিভ অর্ডারগুলিতে সই করেছেন তার একটির শিরোনাম ‘বিদেশি সন্ত্রাসবাদী এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও জনজীবনের সুরক্ষাক্ষেত্রে ঝুঁকির থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করা’। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বা সে দেশে অভিবাসন চান এমন যে কোনও ব্যক্তি সম্বন্ধে তথ্য যাচাই করা ও আবেদনপত্র খুঁটিয়ে দেখায় আরও বেশি জোর দিতে হবে।

এই নির্দেশ অনুসারে, আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি অ্যান্ড জাস্টিস এবং ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে সেক্রেটারি অব স্টেট ভিসা ও অভিবাসনের আবেদন যাচাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমান ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে। সেই নীতিমান ও প্রক্রিয়া ট্রাম্পের আগের দফার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘সর্বাধিক সম্ভাব্য মাত্রা’য় আবেদনকারীদের যাচাই করা হবে; বিশেষত নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির জন্য পরিচিত দেশ বা অঞ্চল থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের।

এই নীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব অবিলম্বে পড়বে আমেরিকায় কর্মরত অসংখ্য বিদেশি নাগরিক ও তাঁদের পরিবারের উপর। তাঁদের ভিসা পেতে সময় লাগবে অনেক বেশি, হয়রানি হবে আরও বেশি। আমেরিকান দূতাবাস, সীমান্ত ও এয়ারপোর্টে ভোগান্তি বাড়বে; ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজ়েনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস-এর দফতরেও।

আশঙ্কা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই জারি হবে এমন কিছু ‘ট্রাভেল ব্যান’ যার প্রভাব পড়বে বাণিজ্যিক সফরে: অহেতুক বিলম্ব হবে, সীমান্তেও বিবাদ বাড়বে। যদিও এই মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসন কোনও ট্রাভেল ব্যান জারি করেনি, কিন্তু পূর্বে উল্লিখিত এগজ়িকিউটিভ অর্ডার সরকারকে এই অধিকার দিয়েছে যে, প্রয়োজনে কোনও দেশের বিরুদ্ধে সফর-নিষেধাজ্ঞা জারি করা যেতে পারে, এমনকি কোনও নির্দিষ্ট মতাদর্শাবলম্বীদের ক্ষেত্রে পৃথক যাচাই পদ্ধতিও চালু করা যাবে।

অভিবাসী জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ স্বভাবতই আকাশ ছুঁয়েছে। ট্রাম্প এগজ়িকিউটিভ অর্ডার জারি করে জানিয়েছেন, ২০২৫-এর ১৯ ফেব্রুয়ারির পরে আর আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই কোনও শিশু সে দেশের নাগরিকত্ব পাবে না; মা-বাবার মধ্যে অন্তত এক জনকে আমেরিকান নাগরিক হতে হবে। এই সিদ্ধান্তটির তাৎপর্য বিপুল, কারণ যে মায়েরা অবৈধ ভাবে আমেরিকায় আছেন, শুধু তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রেই এই নিয়মটি প্রযোজ্য হবে না; যে মায়েরা বৈধ কিন্তু সাময়িক ভাবে আমেরিকায় আছেন, এবং যে সন্তানের বাবা আমেরিকার নাগরিক বা আইনসিদ্ধ পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট নন, তাঁদের ক্ষেত্রেও হবে। বি-১/বি-২, এফ-১ বা অন্যান্য ছাত্র ভিসা, এইচ-১বি, এল-১, টিএন, ও-১, পি-১’এর মতো ভিসায়, বা অন্যান্য সাময়িক চাকরিভিত্তিক অভিবাসনের মাধ্যমে যাঁরা আমেরিকায় আছেন, তাঁরা আইনসিদ্ধ কিন্তু সাময়িক ভাবে আছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে এঁদের সবার উপরে।

এই এগজ়িকিউটিভ অর্ডারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে; সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে আদালত। সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রশাসন পাল্টা মামলা করবে, তা-ও এক রকম নিশ্চিত।

২২ জানুয়ারি কংগ্রেসে পাশ হল ল্যাকেন রিলে অ্যাক্ট, আপাতত তা প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। এই আইনের একটি ধারা বলছে, তথাকথিত ‘রিক্যালসিট্র্যান্ট’ দেশগুলির (যারা আমেরিকার নিয়মবিধি মেনে চলে না) যে নাগরিকদের আমেরিকা বহিষ্কার করবে, তারা যদি সেই নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অযথা বিলম্ব করে বা অসম্মত হয়, তবে আমেরিকার প্রদেশগুলি দেশের ফেডারাল গভর্নমেন্টকে আইনত বাধ্য করতে পারবে সেই দেশগুলির নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে। ভারত ও চিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশের নাম সম্ভবত এই তালিকায় রয়েছে। এই আইনের ফলে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বিপুল প্রভাব পড়বে— মামলা, আইনি জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, ভিসা বাতিল ইত্যাদির সংখ্যা বাড়বে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই দেশগুলি থেকে আমেরিকায় বিপুল সংখ্যক কর্মী ‘ওয়ার্ক ভিসা’য় আসেন।

ডেমোক্র্যাটদের একাংশের আপত্তি ছিল, প্রদেশগুলিকে ভিসা বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার অধিকার দিলে তা হবে ফেডারাল গভর্নমেন্টের অভিবাসন সংক্রান্ত এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ। সেই আপত্তি উড়িয়ে রিপাবলিকানদের বিপুল ভোটে— এবং, ডেমোক্র্যাটদেরও একাংশের ভোটে— আইনটি পাশ হল। শোনা যাচ্ছে, ভারত নাকি ১৮,০০০ অভিবাসী নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত যাতে ‘রিক্যালসিট্র্যান্ট’ তকমা এড়ানো যায়, এই আইনের জটিলতায় পড়তে না হয়।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রভাব বিভিন্ন সংস্থার কর্মী নিয়োগের উপর পড়বে বলে আশঙ্কা, বিশেষত এইচ-১বি ভিসার ক্ষেত্রে। যদিও ট্রাম্প এই ভিসার সুফলের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু পাশাপাশি নিজের সংশয়ের কথাও জানিয়ে রেখেছেন। আপাতত প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই ভিসা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। আমেরিকার অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে টালমাটাল পরিস্থিতির এটা সূচনামাত্র। ব্যবসায়িক ও মানবিক, দু’দিকেই সমস্যা বাড়বে। দেশের অভিবাসী সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।

পার্টনার, ফ্র্যাগোমেন ডেল রে বার্নসেন অ্যান্ড লোলি এলএলপি, শিকাগো

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Immigration Rules

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}