Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Abanindranath Tagore

লন্ডন ডায়েরি: লেস্টারে বিপ্লব: হেমেন, যামিনী এবং রবীন্দ্রনাথ

রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রামের সমান্তরালে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার খোঁজেরই ফসল ভারতীয় আধুনিক শিল্পকলার উন্মেষ।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৫
Share: Save:

লেস্টার মিউজ়িয়াম ও আর্ট গ্যালারিতে বাংলার শতাধিক বিরল ছবির প্রদর্শনী চলছে। বিষয় ১৮৭০ থেকে ১৯৫০-এ ভারতে আধুনিক শিল্পের উত্থান। এই কালপর্বটিকে নিয়ে দেশের বাইরে এটিই বৃহত্তম প্রদর্শনী। ব্রিটিশদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ভারতীয়রা চারুকলা সৃষ্টিতে অক্ষম। তাই তাঁরা ভারতে আর্ট কলেজ স্থাপন করে পাশ্চাত্য শিল্পরীতি পঠনের ব্যবস্থা করেন। নতুন শতাব্দীর ভারতীয় শিল্পীরা ভাবতে থাকেন, কী ভাবে পাশ্চাত্যের এই শিল্পশিকল থেকে মুক্ত হবেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রামের সমান্তরালে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার খোঁজেরই ফসল ভারতীয় আধুনিক শিল্পকলার উন্মেষ।

‘বেঙ্গল স্কুল’ শিল্পধারাটির পূর্বকালীন তেলরং, কালীঘাটের চিত্রশিল্প, পটের ছবি থেকে প্রাচ্যবাদী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু এবং রামকিঙ্কর বেজ, সোমনাথ হোর প্রমুখ আধুনিক রীতির শিল্পীদের সৃষ্টি দেখা যাবে প্রদর্শনীতে। অধিকাংশ ছবিই এসেছে অধ্যাপক নির্মাল্য কুমারের সংগ্রহ থেকে। তাঁর মতে, হেমেন মজুমদার, যামিনী রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিন শিল্প-বিপ্লবী। যামিনী রায়ের পোর্ট্রেটে স্বামীহারা মহিলা সরু কালো পাড় সাদা শাড়ি পরেছেন, অথচ মুখে প্রসাধন, দেহে অলঙ্কার। সামাজিক আচারের বিরুদ্ধে শিল্পীর প্রতিবাদ। হেমেন মজুমদার এক দম্পতির ঘনিষ্ঠতা ব্যক্ত করেছেন, অথচ তাঁরা বিপরীত দিকে তাকিয়ে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতির এই নারীই বা কে? তাঁর প্রণয়িনী? কোনও সাধারণ্যা? না কি কবি নিজেই?

প্রদর্শনী: লেস্টারের গ্যালারিতে হেমেন মজুমদারের (বাঁ দিকে), যামিনী রায়ের আঁকা ছবি।

প্রদর্শনী: লেস্টারের গ্যালারিতে হেমেন মজুমদারের (বাঁ দিকে), যামিনী রায়ের আঁকা ছবি।

টাঁকশালের লক্ষ্মী বার

২০ গ্রামের সোনার বাট, তাতে খোদাই করা চতুর্ভুজা লক্ষ্মীর ছবি। চার হাত ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের প্রতীক। তাঁর হাতে পদ্ম, দু’দিকে হাতি। জল উর্বরতা ও সমৃদ্ধির এবং বাহন পেঁচা অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানের আলো খোঁজার প্রতীক। দীপাবলি উপলক্ষে, কার্ডিফের স্বামীনারায়ণ মন্দিরের সহায়তায় এই ‘লক্ষ্মী বার’ নকশা করেছে রয়্যাল মিন্ট। দাম ১,০৮০ পাউন্ড, প্রতিটি বারকে একটি স্বতন্ত্র সংখ্যায় চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রথম টঁাকশাল ভারতীয় দেবীর ছবি দেওয়া মুদ্রা আনল। ভারতীয়দের স্বর্ণপ্রেম ও লক্ষ্মী আরাধনার অবকাশে টাঁকশালের আশা, ব্রিটিশ হিন্দুরা এটি উপহার অথবা বিনিয়োগ হিসাবে কিনবেন। ৪ নভেম্বর স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দীপাবলি উৎসবের লক্ষ্মী পূজায় বারটি দেবীকে নিবেদন করা হবে।

লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ

১৮৯৬-এ স্বামী বিবেকানন্দের লন্ডন সফরের ১২৫ বছর পূর্তিতে হ্যারো আর্টস সেন্টারে তাঁর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচিত করলেন হ্যারো কাউন্সিলের মেয়র ঘজ়নফর আলি। সেখানে তাঁর ভাস্কর্য বসল প্রথম। স্বামীজি ১৮৯৫-এ ইংল্যান্ডে আসেন। স্কুলশিক্ষিকা মার্গারেট এলিজ়াবেথ নোবলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। মার্গারেট তাঁর শিষ্যা হন, পরে তাঁর নাম হয় ভগিনী নিবেদিতা। ১৮৯৬-এ দ্বিতীয় বার ইংল্যান্ডে আসেন স্বামীজি। স্থাপিত করেন বেদান্ত কেন্দ্র, যোগশিক্ষা দেন। ওয়েস্টমিনস্টারে যে বাড়িতে তিনি ছিলেন, সেখানে নীল ফলক বসেছে। লন্ডনে স্বামীজির স্মৃতিসৌধ তৈরি ছিল হ্যারোর প্রাক্তন মেয়র মৃণাল চৌধুরীর স্বপ্ন। আবেদন মঞ্জুর হয় ২০১৮-য়। ৩০,০০০ পাউন্ডের ভাস্কর্যের জন্য অর্থসংগ্রহ শুরু হয়। বর্ধমানের শরদিন্দু সূত্রধরের তৈরি ছাঁচ ফের মাটিতে বসিয়ে, পোর্টল্যান্ড স্টোনে মূর্তি গড়েন ব্রিটিশ ভাস্কর টম নিকোলস। ’২১-র জুলাইতে গ্রানাইটের স্তম্ভে মূর্তির স্থাপন। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই প্রয়াত মৃণাল, অনুষ্ঠানে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। এই সেন্টারে নাটক-সিনেমা চলে, দুর্গাপূজা হয়। ফলে, মূর্তিটি দেখবেন অনেকে।

ইতিহাস: লন্ডনে স্বামীজির আবক্ষ মূর্তি।

ইতিহাস: লন্ডনে স্বামীজির আবক্ষ মূর্তি।

অশনিসঙ্কেত

উৎসবের মরসুমে লন্ডনে ঝামেলা অনন্ত। গাড়িতে পেট্রল না থাকলে মানুষ পূজাস্থানে বা নবরাত্রির মঞ্চে পৌঁছাবেন কী ভাবে? ট্রাক-চালক বাড়ন্ত, ফলে পাম্পে পেট্রল নেই, সুপারমার্কেটের তাক খালি। পরিযায়ী শ্রমিক অকুলান, শরতের ফসল তোলার লোক নেই। কসাইখানায় শ্রমিক অপর্যাপ্ত। বাড়তি খাটুনি পড়ছে বলে শূকরচাষিরাও বিক্ষুব্ধ। বড়দিনে টার্কি ও খেলনার ঘাটতিও থাকবে! সত্তরের দশক ফিরছে কি? জ্বালানি সঙ্কট, খরা আর ক্রিকেটে হেরে তখন ব্রিটেন ছিল বিধ্বস্ত। ঝাড়ুদারদের ধর্মঘটের ফলে ধুলোময়লা জমায় ১৯৭৮-৭৯’তে এসেছিল ‘অসন্তোষের শীত’। তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই হবে বরিস জনসনকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Abanindranath Tagore Swami Vivekananda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy