৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২। সকাল পর্যন্ত যেমন ছিল বাবরি মসজিদ। তখনও ভাঙা শুরু হয়নি। ছবি: সংগৃহীত।
অফিসে ঢোকার মুখে সবে মিষ্টি পানটা মুখে পুরেছি, আচম্বিতে উদয় হলেন অগ্রজ সহকর্মী, ‘‘কী রে! কোথায় ছিলি সারা দিন? এত দেরি করে অফিসে আসতে হয় আজকের দিনে?’’
ডিসেম্বর মাস। রবিবার। সারা দিন পাড়ার মাঠে ক্রিকেট পিটিয়ে নাইট ডিউটি করতে এসেছি। ৭টা থেকে রাত ১টা। বিভিন্ন ছক করে প্রতি সপ্তাহের রবিবারটা নাইট ডিউটি বাগিয়েছি। সারা দিন টইটই। রাতে অফিস। ঘটনা-দুর্ঘটনা না-থাকলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আর টেলিফোনে আজেবাজে গালগল্প করে দিব্যি ঘণ্টা ছয়েক কাটিয়ে দেওয়া যায়। অফিসে ঢোকার আগে নীচের দোকান থেকে খয়ের-রহিত মিষ্টি পানটুকু বিলাসিতা।
সিনিয়রের প্রশ্নে সেই বিলাসিতা চর্বণ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল! কী করে বসলাম আবার! চাকরি-টাকরি যাবে না তো! কোঁত করে পানটা গিলে ফেলে বললাম, আমি তো কিছু জানি না! বড় কিছু হয়েছে নাকি? ওসি কন্ট্রোলে খোঁজ রাখতে হবে নাইটে? সহকর্মী আরও অবাক, ‘‘বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়েছে! জানিস না?’’
বছর দুয়েকের কিছু বেশি আগে আনন্দবাজারে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেওয়া এবং নিকষ্যি ক্রাইম বিটের রিপোর্টার হিসেবে লালবাজারে আইপিএস অফিসারদের ঘরের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটান-দেওয়া আমি তার পরেও উজবুকের মতো বললাম, অ! তাই? তো তাতে কী হয়েছে? অগ্রজ কষ্টে দীর্ঘশ্বাস চাপলেন।
আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কোথায় উত্তরপ্রদেশে কী ঘটেছে, তাতে আমার কী! কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে তো কিছু হয়নি। চাকরিতে ঢোকা ইস্তক শুনে এসেছি, বসনিয়ার চেয়ে বাঁকুড়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা হলে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে খামোকা মাথা ঘামাচ্ছে কেন সকলে!
অফিসে ঢুকে অবশ্য অর্বাচীন এবং জগৎসংসার সম্পর্কে মাপমতো অজ্ঞ আমি বুঝতে পারলাম, কিছু একটা হয়েছে বটে। সকলে বেজায় ব্যস্ত। ঘনঘোরে ফোন বাজছে। শুনলাম, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নামে একটা বিতর্কিত সৌধ ছিল। হিন্দু করসেবকরা সেটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গোটা দেশ (এবং বিদেশও) উত্তাল। উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে অনর্গল খবর আসছে। দিল্লি ব্যুরো টানটান। অযোধ্যা, ফৈজাবাদ, লখনউ থেকেও সিনিয়র সহকর্মীরা হু-হু করে কপি পাঠাচ্ছেন। নাইট রিপোর্টার হিসেবে আমাকেও কিছু কপি টেলিফোনে নিতে হল। নিলাম। এবং নিতে নিতেই শুনলাম, দেশের সমস্ত মুসলিম মহল্লায় ব্যাপক টেনশন। পশ্চিমবঙ্গও টানটান। কলকাতায় ১৪৪ ধারা জারি হয়ে গিয়েছে। মহাকরণ তটস্থ। আলিমুদ্দিন সাবধান। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট সম্প্রীতিসাধনে তৎপর। যাতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা না বাধে।
কিন্তু তখনও ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না। হিন্দু! মুসলিম! সংখ্যাগুরু! সংখ্যালঘু! এ সব কী! আমি তো কয়েক বছর আগেও আবাসিক স্কুলে সহপাঠী আবুল কালামের সঙ্গে এনসিসি-র প্যারেডে জয়েন্ট কমান্ডার হয়েছি। আবুল তো আমার পাশে দাঁড়িয়েই সরস্বতী পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ করেছে। অঞ্জলিও দিয়েছে। আমার তো কখনও মনে হয়নি, আবুল আসলে ‘সংখ্যালঘু’! এক ক্লাস জুনিয়র আসিফ ইকবালের বাড়ি থেকে আনা ইদের মহার্ঘ মেনু (মূলত সিমুইয়ের পায়েস) ওয়ার্ডেনের কড়া নজর এড়িয়ে ভাগাভাগি করে (কখনও কখনও কাড়াকাড়ি করেও) খেয়েছি। ওরাও তো আমার ওয়াড্রোবে লুকিয়ে রাখা বাড়ি থেকে আনা লোভনীয় খাবার (হস্টেলের পরিভাষায় ‘স্টক’) হামলে পড়ে খেয়েছে। কখনও তো মনে হয়নি, আবুল-আসিফ মুসলিম। অথবা মনে হয়নি, আমি হিন্দু।
সে দিন প্রথম মনে হল! ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২। সেই রাতে নাইট ডিউটি দিতে দিতে এবং তার পরের প্রায় ১৫ দিন হামলা-বিধ্বস্ত কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে মনে হল। সেই প্রথম কার্ফু পাস হল আমার। সেই প্রথম দেখলাম কলকাতা আর হাওড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় নাচার, ত্রস্ত মুখের সারি। কখনও সেই মুখ গার্ডেনরিচের বাতিকল মোড়ে, কখনও এন্টালি লরেটো স্কুলের পাঁচিলে ঘেরা চত্বরে, কখনও হাওড়ার পিলখানা বস্তিতে, কখনও ট্যাংরা-তপসিয়ার অলিগলিতে। নিছক কৌতূহলে একদিন দুপুরে অগ্রজ সহকর্মী আশিস ঘোষের সঙ্গে গেলাম বেলেঘাটার গান্ধীভবনে। যে বাড়িতে গান্ধী’জি অনশন করেছিলেন, কী অবস্থা সেই বাড়িটার? গিয়ে দেখলাম, কিমাশ্চর্যম! সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ট্যাংরার কয়েকটি দাঙ্গাবিধ্বস্ত মুসলিম পরিবার!
সেই প্রথম শুনলাম পিচ রাস্তায় ফৌজি বুটের আওয়াজ। সেই প্রথম খোলা রাস্তায় আড়ংধোলাই দেখলাম। সেই প্রথম সন্ধ্যার পর ছমছমে মনে হতে লাগল কলকাতা শহরটাকে।
মেটিয়াবুরুজে অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে এক সন্ধ্যায় পড়ে গেলাম উন্মত্ত জনতার মুখোমুখি। কারও হাতে খোলা তলোয়ার আধো অন্ধকারেও ঝলসাচ্ছে। পেট্রল বোমার আগুন লকলক করছে কারও হাতে। তাদের মুখে জান্তব চিৎকার। কোনও ভাষা নেই। কোনও স্লোগান নেই। শুধু একটা গগনবিদারী চিৎকার।
প্রাণভয়ে হরিণ-পায়ে দৌড়তে থাকা আমার পিছনে ছুটে আসছিল কালান্তক সেই জনতা। রাস্তার দু’পাশের বাড়িগুলোর জানালা-দরজা ঝপঝপ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সিনেমার মতো। কোনও মতে একটা বাড়ির দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পড়তে পেরেছিলাম। বন্ধ দরজার সামনে থেকে ফিরে গিয়েছিল তলোয়ার আর মলোটভ ককটেলধারীরা। হয়তো ছুটেছিল অন্য কারও পিছনে। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কিছু ক্ষণ পরে সেখান থেকে ফোন করে অফিসে খবর দিয়েছিলাম। সেনাবাহিনী পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল অত্যুৎসাহী তরুণ রিপোর্টারকে।
ফালতু বীরত্ব দেখাতে যাওয়ার জন্য অফিসে বেদম ঝাড় খেয়েছিলাম। কিন্তু তার চেয়েও ভয় পেয়েছিলাম অনেক বেশি। পরের বেশ কিছু দিন ঘুমের মধ্যে তাড়া করে বেড়াত সেই জান্তব চিৎকার। শীতের রাতেও ঘামতে ঘামতে ঘুম ভেঙে উঠে বসতাম। চোখ বুজতে ভয় করত। যদি আবার ফিরে আসে চিৎকারটা!
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর আমার অগ্নিদীক্ষা হয়েছিল। ‘বড়’ হয়েছিলাম। আকৈশোরলালিত ধারণা খসে খসে পড়ছিল পেঁয়াজের খোসার মতো। জ্ঞানীগুণীরা বলে থাকেন, আমরা অনেক পরত আবেগ নিয়ে জন্মাই। যত দিন যায়, জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে সেই আবেগের পরতগুলো খসে পড়তে থাকে। ওয়াশিং মেশিনে চাপালে যেমন সেই ঘূর্ণমান চক্রের ঝাপটে উঠে যেতে থাকে জামাকাপড়ের সঙ্গে লেগে-থাকা ময়লা, আমরাও সে ভাবে জীবনের ধৌতিযন্ত্রে একের পর এক ধোলাইয়ের পর ধোপদুরস্ত হয়ে উঠি। আবেগ-টাবেগ ঝেড়ে ফেলে অভিজ্ঞ, পরিমিত এবং বাস্তববোধ সম্পন্ন হয়ে উঠি।
ভুলে যেতে হয় আবাসিক স্কুলের সহপাঠী মারাং বুরু মুর্মু বা এক ক্লাস সিনিয়র ধনঞ্জয় সোরেন বা সনাতন হেমব্রমকে কখনও ‘সাঁওতাল’ বলে ভাবিনি। কালো পাথরে কোঁদা সনাতন’দা অসামান্য ফুটবল খেলত। চেহারা, গাত্রবর্ণ এবং মুখের সাদৃশ্যের কারণে ‘পেলে’ বলত সহপাঠীরা। বলতেন শিক্ষকেরাও। আমরা বলতাম ‘পেলেদা’। আমাদের কারও পরিচয় জাতি বা বর্ণ দিয়ে হত না। হত তার কাজ দিয়ে। সে ফুটবল খেলাই হোক বা ওয়ার্ক এডুকেশনে মাটির পুতুল গড়া। এখন আর তা হয় না। এখন আদিবাসী দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্তকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করতে হয়। কারণ, আমি সময় এবং সমাজের ধোপাবাড়ি ঘুরে এসেছি!
তিরিশ বছর পরের এক ফেব্রয়ারিতে অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রাম মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সেই ধোপদুরস্ত ‘আমি’-র তিন দশক আগে ফেলে-আসা দিন আর রাতগুলোর কথা মনে পড়ছিল।
আনন্দবাজার অনলাইনের হয়ে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট কভার করতে গিয়েছি। অযোধ্যা তো মাস্ট! গেলাম। রামনাম গানের সুরে বাতাস ভারী। যে দিকে তাকাই, গেরুয়া ঝান্ডার ছড়াছড়ি। রামচন্দ্রের ছবি এবং তার পাশে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা সিল্কের কাপড়ে পিছলে যাচ্ছে রোদ্দুর। থিকথিক করছে সশস্ত্র নিরাপত্তাবাহিনী। দশ পা অন্তর সিসিটিভি ক্যামেরা। ওয়াচ টাওয়ার। থিকথিক করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং সিআইএসএফের জওয়ান। মনে হচ্ছিল, যুদ্ধক্ষেত্রেই এসে পড়লাম বুঝি বা! না কি তিরিশ বছর আগের এক ডিসেম্বরে!
তখন অন্য রকম ছিল। তবে ২০২২ সালে শুধু সে রামই আছেন। এবং সে অযোধ্যাও। বাবরি ধ্বংসের ৩০ বছর পূর্তিতে ভক্তিরসে আরও টুপুটুপু হয়ে। দর্শনার্থীদের জন্য বড় রাস্তার পাশেই ‘সুগ্রীব কিলা’। তার পাশ বরাবর ধুলো-ওড়া কাঁচা মাটির জমি দিয়ে যেতে হয় মন্দিরে। দাঁড়িয়ে বুলডোজার, পে-লোডার। তার ধার ঘেঁষে চলেছেন পুণ্যার্থীর দল। সরু রাস্তাটা গিয়ে পড়েছে রামলালার নির্মীয়মাণ মন্দিরের পথে— ‘রামমন্দির দর্শন মার্গ’।
বাইরে সার সার দোকান। প্রতিটিতে ‘লকার’। নিরাপত্তার বিধিনিষেধ মেনে সেই লকারে নিজের জিনিসপত্র রেখে তালা দিয়ে চাবিটি নিয়ে ভিতরে যেতে হয়। কোনও ইলেকট্রনিক বস্তু নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ। ঘড়ি, মোবাইল, ক্যামেরা, কলম যাবতীয় কিছু— যার মধ্যে ছবি তোলার কোনও মাধ্যম থাকলেও থাকতে পারে। তবে চামড়ার বেল্ট বা ওয়ালেটে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। জুটো-টুতোও খুলতে হয়নি। কিন্তু তিন-তিন বার তন্ন তন্ন করে দেহতল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তিন বারই ওয়ালেট খুলে দেখাতে হয়েছিল যে, তার মধ্যে কোনও লুকোনো ক্যামেরা বা ওই ধরনের কিছু নেই।
‘রামমন্দির দর্শন মার্গ’-এর দু’পাশে একের পর এক মন্দির। রাম-সীতার মন্দির। রাধা-কৃষ্ণের মন্দির। শেষতম তল্লাশির পর শুরু হল একটা শুঁড়িপথ। একটা লম্বা খাঁচার মতো। দু’পাশে জাল। মাথার উপরেও জাল। খানিক এগিয়ে সেই জালের ডান দিকে দেখা গেল কর্মভূমি। বিশাল এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে দানবীয় ক্রেন। মন্দিরের ভিত তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিশাল চাতাল। এক পাশে নীল তার্পোলিনে ঢাকা বিশাল বিশাল পাথরের ব্লক। গোটা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাথায় হেলমেট-পরা ইঞ্জিনিয়াররা। বাবরি মসজিদের একটা ধুলোকণাও নেই।
খাঁচার ভিতর দিয়ে খানিক এগিয়ে রামলালার মন্দির। কৌণিক ছাদ। দেওয়ালে কাচ-বসানো জানালা। মন্দিরের বাইরের চত্বরটা ঢাকা লাল কার্পেটে। ভিতরে রামলালার মূর্তি। তীব্র আলোয় ঝলমল করছে। পটভূমিকায় ঝকমকে জরির কাপড়ই হবে। সেই কারণে মূর্তির আশপাশে বাড়তি একটা জেল্লা তৈরি হয়েছে। একটা ঐশী বিভ্রম।
পাশাপাশিই আরও একটা বিভ্রম তৈরি হচ্ছিল। একটা অবিশ্বাস! এখানেই ছিল বাবরি মসজিদ? ৩০ বছর আগে?
সে দিনই সকালে দেখে-আসা ধন্নিপুরের কথা মনে পড়ছিল। ধন্নিপুর অযোধ্যার অদূরে ফৈজাবাদ জেলার (সরকারি ভাবে অযোধ্যা জেলারই) একটি গ্রাম। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সরকার সেখানে বাবরি মসজিদের ‘বিকল্প মসজিদ’ তৈরি করার জন্য পাঁচ একর কৃষিজমি দিয়েছিল। জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল ‘উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড’-কে। কিন্তু দু’বছরে একটা ইটও গাঁথা হয়নি। ‘ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’-এর তত্ত্বাবধানে এখানে নাকি মসজিদ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু নির্মীয়মাণ সেই মসজিদ কোথায়! যত দূর তাকাই, চারদিকে ধূ-ধূ ফাঁকা জমি। কয়েকটা ছাগল চরছে শুধু। সেটা ছাড়া আর কোথাও কোনও প্রাণের নড়াচড়া নেই।
অথচ তার কিছু ঘণ্টার দূরত্বে একটা রাজসূয় যজ্ঞ চলছে। গাঁইতি, শাবল, জেসিবি-র এক একটা চোপাটে সাফ হয়ে যাচ্ছে অতীত। মাথা তুলছে নতুন ধারণা। তার গর্ভগৃহেও যাওয়া গেল। রামমন্দিরের অদূরে ‘শ্রীরাম জন্মভূমি ন্যাস মন্দির নির্মাণ কার্যশালা’। ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর পেরিয়ে থাকে-থাকে রাখা বিশাল বিশাল পাথরের আয়তাকার চাঁই। এসেছে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে। মাথায় হেলমেট পরিহিত ইঞ্জিনিয়ার পাথরের গুণমান খতিয়ে দেখছেন। পাস করলে পে-লোডার দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাজের জায়গায়। রয়েছে পাথর কাটার দানবীয় সব করাত। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে সেই পাথরে নকশা খোদাই করছেন কারিগরেরা। রোজ। ছুটি মাসে এক বার। অমাবস্যা তিথিতে। অদূরে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির তলায় ডাঁই করা ইটের পাঁজা। প্রতিটির উপর লেখা ‘শ্রীরাম’।
এগুলো কি সেই কারসেবার সময়ের ইট? বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য মিশ্র’জি মহারাজ সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়েছিলেন। তিরিশ বছর আগেকার ইট এখনও রয়ে গিয়েছে! মিশ্র’জি অবিশ্বাসীর দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়েছিলেন, ‘‘কেন? তিরিশ বছর একটা বাড়ি টেকে না? বাড়ি তো ইটেরই তৈরি হয়! তা হলে ইট কেন তিরিশ বছর থাকে না!’’
মিশ্রজি’কে বলতে ইচ্ছে করছিল, বাড়ি টেকে। কিন্তু অনেক ভাঙচুর হয়। ভিত আলগা হয়ে যায়। বিশ্বাসের ভিত।
তি-রি-শ বছর! ‘বড়’ হওয়ার তিরিশ বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy