কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। ফাইল চিত্র।
আবার সে আসিবে ফিরিয়া। পাশ-ফেল প্রথা ফিরিবে স্কুলশিক্ষায়, বলিয়াছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল আনিতে সংসদের বাদল অধিবেশনে শিক্ষার অধিকার আইনের সংশোধনী পেশ হইবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের মোট পঁচিশটি রাজ্য পাশ-ফেলের পক্ষে মত দিয়াছে। সম্ভবত তাহা এই আশায় যে, পরীক্ষা থাকিলে ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ, সকল পক্ষ সতর্ক ও সক্রিয় হইবে। শিক্ষার অধিকার আইন নিয়মিত মূল্যায়নের প্রক্রিয়া কার্যকর হইলে হয়তো ছাত্রদের জীবনে ফের ফেল করিবার ভয়ের ভূত আমদানির প্রয়োজন থাকিত না। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যে যদি মূল্যায়নের সেই প্রথা কার্যকর না হইয়া থাকে, তাহা হইলে শুধু শিক্ষক বা শিক্ষা দফতরকে দুষিয়া লাভ নাই। বুঝিতে হইবে, পরিকল্পনায় গলদ রহিয়াছে। এটি নীতি নির্ণয়ের পুরাতন রোগ। নূতন পদ্ধতি কার্যকর হইতে পারে কি না, সেই পরীক্ষানিরীক্ষা না করিয়াই গোটা দেশে তাহার প্রয়োগ করিয়া দেন সরকারি কর্তারা। পূর্বে অল্প পরিসরে প্রয়োগ করিলেই স্পষ্ট হইত, ক্রমিক মূল্যায়ন আদৌ শিক্ষকেরা কার্যকর করিতে পারিবেন কি না। তাহাতে শিক্ষার মানের উন্নতি হইতেছে কি না। কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মতো তুচ্ছ কাজে সময় নষ্ট করিতে মন্ত্রী-আমলারা অনিচ্ছুক। তাই সাত-আট বছর ধরিয়া ছাত্রদের পড়াশোনা নষ্ট হইল। এখন আবার ফেরা হইবে পুরাতন প্রথায়।
কিন্তু সেই প্রথাও কি যথেষ্ট? ফেল করিবার পর শিশুটির কী হইবে? সে কি শিখিবার অক্ষমতার জন্যই শিখিতে পারে নাই? না কি শিক্ষকের পাঠদানে অনিচ্ছা বা অপারগতার জন্য? শিক্ষার অধিকার আইন স্কুল নির্মাণ করিয়াছে, শিক্ষককে স্কুলে আনিতে পারে নাই। শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের প্রধান ‘নিখোঁজ’ শিক্ষকদের সন্ধানে গিয়া নাকি দেখিয়াছেন কেহ দোকান সামলাইতেছেন, কেহ ব্যবসায়ে রত, কেহ মাছ ধরিতেছেন। এই জেলা ব্যতিক্রমী নহে। স্কুলে শিক্ষকের অনুপস্থিতি, বিলম্বে প্রবেশ, স্কুলে আসিয়াও ক্লাসে না আসিবার প্রবণতা বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে। স্কুল পরিদর্শকরা কোনও পদক্ষেপ করিতে অপারগ অথবা অনিচ্ছুক। এই মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান না করিয়া ছাত্রের মাথার উপর অকৃতকার্যতার খাঁড়া ঝুলাইবারই উদ্যোগ লইল সরকার? ইহাই কি শিক্ষার অধিকার?
পাশ-ফেল প্রথা পুনরায় চালু করিতে চাহে সরকার, আপত্তি নাই। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইনে কি আর কোনও সংশোধনই প্রয়োজন নাই? আইনের যে সকল নির্দেশ ছিল, তাহার সামান্যই কার্যকর হইয়াছে। আইন অনুসারে স্কুলের পরিকাঠামোর পরিবর্তন হয় নাই, এমনকী সকল স্কুল সরকারি অনুমোদনও পায় নাই। আইন অনুসারে স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠিত হয় নাই। বেসরকারি স্কুলে দরিদ্র পড়ুয়াদের আসন সংরক্ষণ হয় নাই। সর্বোপরি, কেন্দ্রের সমীক্ষাতেই স্কুলশিক্ষার মানের বিপুল সংকট প্রকট হইয়াছে। শিশুর অমনোযোগিতা বা মেধার অভাব দিয়া তাহার ব্যাখ্যা সম্ভব নহে। এত সমস্যা ও সংকটের কোনওটিরই সংস্কার না করিয়া কেবল শিশুদের ফেল করাইতে উদ্যোগী হইল কেন্দ্র। ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার শেষে শিক্ষকদের ফেল করাইবার অধিকারে পর্যবসিত হইবে, সেই আশঙ্কা রহিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy