—ফাইল চিত্র।
হোলি মিটুক, তাহার পর কথা হইবে। লোকসভায় স্পিকার ওম বিড়লা জানাইয়া দিলেন, দিল্লির সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম লইয়া আলোচনা করিতে হইলে এইটুকু ধৈর্য না ধরিয়া উপায় নাই। রাজধানীতে যে বিপুল নরমেধ যজ্ঞ হইল, তাহাতে পুলিশের ভূমিকা লইয়া প্রভূত প্রশ্ন উঠিয়াছে। প্রত্যক্ষ ছবি বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং হইতে প্রাক্তন পুলিশকর্তা প্রমুখের অভিমত, সবই বলিতেছে যে এই হত্যালীলায় পুলিশ ন্যক্কারজনক ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিল। দিল্লির পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন, যাহার শীর্ষে অধিষ্ঠিত অমিত শাহ। তিনি লোকসভার নিকট জবাবদিহি করিতে দায়বদ্ধ। তাহা হইলে, হোলি অবধি অপেক্ষা করা কেন? কারণটি এতই দৃশ্যমান, এতই স্পষ্ট যে তাহাকে আলাদা ভাবে উল্লেখ করা বাহুল্য হইবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্য, বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী, বর্তমান লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা নিমিত্তমাত্র— দিল্লির হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তদন্ত হইতে আলোচনা, এক অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে সবই ঢিমাতেতালায় চলিতেছে। সকলে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় হইবেন, ততখানি আশা না করাই ভাল— তবে, স্পিকার পদের এবং সংসদ নামক পরিসরটির মর্যাদার কথা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইলেও মুশকিল। দিল্লিতে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের চরম লজ্জা। কেন্দ্রীয় সরকার তাহার দায় স্বীকার করিবে কি না, তাহা পরের প্রশ্ন, কিন্তু সংসদের পরিসরে জনপ্রতিনিধিরা সেই ঘটনাক্রম আলোচনা করিতে চাহিলে তাহাকে অগ্রাধিকার দেওয়া স্পিকারের ন্যূনতম কর্তব্য ছিল। কারণ, দিল্লিতে কী হইয়াছে, এবং প্রশাসন সেই ঘটনাক্রমকে কী ভঙ্গিতে দেখিতেছে, তাহা জানিবার অধিকার গোটা দেশের আছে। সংসদের উভয় কক্ষেই কেন কুযুক্তি প্রয়োগ করিয়া সেই আলোচনার পথ বন্ধ করিতে হয়, তাহা বোঝা কঠিন নহে। কিন্তু, দেশের সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কী ক্ষতি তাঁহারা করিতেছেন, ওম বিড়লারা তাহা বুঝিতেছেন কি? কালক্রমে তাঁহারা ইতিহাসের পাদটীকায় পরিণত হইবেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গায়ে তাঁহাদের এই অনাচারের দাগ হইবে অনপনেয়।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সরকারি অবস্থানের সমর্থনে দুই দফা যুক্তি পেশ করিয়াছেন— এক, এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ‘আলোচনা’য় লাভ অপেক্ষা ক্ষতি বেশি, পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হইবে; দুই, আলোচনা চলিতেই পারে, কিন্তু সবার ঊর্ধ্বে স্থান ‘জাতীয় স্বার্থ’-এর। শ্রীপ্রসাদের (কু)যুক্তির প্রথম ভাগটি বলিয়া দেয় যে তাঁহারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মূল সুরটি বুঝিতেই পারেন নাই। দেশ পরিচালনা যে কতিপয় মন্ত্রীর দায়িত্ব নহে, সমস্ত জনপ্রতিনিধিকে সেই প্রক্রিয়ার অংশী করিয়া লওয়া সরকারের কর্তব্য, কথাটি তাঁহারা জানেন না। সরকারের ভুল হইলে, স্খলন ঘটিলে বিরোধীরা তাহা দেখাইয়া দিবেন, এবং সরকার সেই ভ্রান্তি সংশোধনে যথাসাধ্য চেষ্টা করিবে— ইহাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল কথা। সংসদ কুস্তির আখড়া নহে।
মন্ত্রিবরের দ্বিতীয় যুক্তিটি জানায়, তাঁহারা ‘জাতীয় স্বার্থ’ কথাটিরও অর্থ জানেন না। যে ঘটনাক্রম দেশের প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ লইয়াছে, এবং যাহাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভয়ঙ্কর আক্রমণের লক্ষ্য হইয়াছেন, সেই ঘটনা যদি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হয়, তবে জাতীয় স্বার্থ বস্তুটি ঠিক কী? তাহা কি কেবলই সীমান্তের কাঁটাতারে আটকাইয়া? দেশের প্রতিটি মানুষকে লইয়াই ভারত, এবং সেই প্রতিটি মানুষের স্বার্থই ‘জাতীয় স্বার্থ’। মুশকিল হইল, অন্তরে হিন্দুরাষ্ট্রের অধিষ্ঠান হইলে এই জাতিকে দেখিতে পাওয়া অসম্ভব। হিন্দুরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় ভারতের প্রকৃত জাতীয় স্বার্থের কী সুবিপুল ক্ষতি হইতেছে, তাহা স্বীকার করা অসম্ভব। সেই কারণেই হোলি কিংবা অন্য মামলার শুনানি ইত্যাকার বিবিধ কুযুক্তি খাড়া করা আবশ্যিক হইয়া উঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy