Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

আর কত রকমের লজ্জার মুখ দেখব আমরা!

কন্যাসম এক জনের দিকে তাকানোর সময়েও যৌনতার চশমাটা চোখে পরে নিতে হয়? লালসা কতটা সর্বভূক, সর্বনাশা পর্যায়ে পৌঁছলে এমন প্রবৃত্তি তৈরি হয়, তা সভ্য সমাজের বোধের বাইরে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪৫
Share: Save:

মাথা হেঁট হয়ে যায় বার বার, হেঁট হয়ে যায় অসীম লজ্জায়। বেহুঁশ হয়ে পড়ার হিড়িক উঠেছে যেন। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ার এক প্রতিযোগিতায় যেন কেউ আহ্বান করেছে। আর সে আহ্বানে উল্লসিত হয়ে স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ, পরিস্থিতি, আবহ, ফলাফল, তাৎপর্য ভুলে অনৈতিক,অবৈধ, অপরাধমূলক যৌনতায় ঝাঁপ দিচ্ছে যেন একের পর এক।

পড়ুয়া বিনিময় কর্মসূচির আওতায় ভারতকে জানতে এসেছিল ফরাসি কিশোরী। দিল্লিতে এক ভারতীয় ছাত্রীর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল তার। সেই ভারতীয় ছাত্রীর বাবা অর্থাৎ গৃহকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল অতিথি হয়ে আসা ফরাসি কিশোরীটিকে যৌন হেনস্থা করার।

আর কত রকমের লজ্জার মুখ দেখব আমরা! প্রথমত, সে অতিথি। দ্বিতীয়ত, সে বিদেশি অতিথি। তৃতীয়ত, বয়সে সে কন্যাসম। এমন এক জনের দিকে তাকানোর সময়েও যৌনতার চশমাটা চোখে পরে নিতে হয়? লালসা কতটা সর্বভূক, সর্বনাশা পর্যায়ে পৌঁছলে এমন প্রবৃত্তি তৈরি হয়, তা সভ্য সমাজের বোধের বাইরে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভারতে পড়তে এসেছিল ফরাসি কিশোরী। যে কর্মসূচির আওতায় তার ভারতে আসা, সে কর্মসূচির লক্ষ্য হল বিশ্বকে চেনানো। অর্থাৎ ভারতকে চিনতে ফ্রান্স থেকে এসেছিল এক কিশোরী। কোন আলোকে সে চিনল ভারতকে? কী শিক্ষা নিয়ে সে ভারত থেকে ফিরবে সে। তার সঙ্গে আরও যারা এসেছিল ফ্রান্স থেকে, তাদের মনেই বা ভারত সম্পর্কে কোন ধারণা জন্মাল? সর্বোপরি, জীবন সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা তৈরি হওয়ার এই বয়সটায়, ধীরে ধীরে চোখ খোলার এই বয়সটায় জীবন সম্পর্কে ঠিক কী রকম ধারণা ওই কিশোরীর তৈরি হল?

আরও পড়ুন: দিল্লিতে ফরাসি ছাত্রীর যৌন নিগ্রহ করলেন আশ্রয়দাতা পড়ুয়ার বাবা

একের পর এক লজ্জার দিন, একের পর এক সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত হানা দেয় দিনের পর দিন। ফুঁসে ওঠে সামাজিকতার বোধ, গর্জে ওঠে সভ্যতার শিক্ষা। অপরাধীকে ন্যায়ের যূপকাষ্ঠেও পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু লজ্জার স্রোত থামে না কিছুতেই। এক প্রান্তে ধর্ষণের রেশ কাটার আগেই শ্লীলতাহানি ঘটে যায় অন্য কোথাও। সে শ্লীলতাহানির অভিঘাত মেলানোর আগেই আবার অন্য কোনও প্রান্ত থেকে কানে আসে যৌন নির্যাতিতের আর্তি।

সমাজের যেন দিশাহারা দশা এক! কোন দিকটা সামলাবে সে, কোন প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা আক্রমণটাকে প্রতিহত করবে— বুঝতে পারে না সে। একটা ক্ষতস্থানে সুশ্রূষা করার অবকাশে আরও দশটা দিক থেকে যেন ধেয়ে আসে আঘাত, হেনস্থা, অশালীন যৌন হামলা। রক্তাক্ত হয় মানবতা,ক্ষতবিক্ষত হয় সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস।

দিল্লিতে এই জঘন্য ঘটনাটা ঘটানোর অভিযোগ উঠল যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি নিজেকে নেতির অন্ধকূপে নিক্ষেপ তো করলেনই। জীবন সম্পর্কে ভয়াবহ নেতির বোধ জাগিয়ে দিলেন একটা নবীন প্রাণে। নেতির কুচকুচে কালো দাগ লাগালেন ভারতীয় সভ্যতার গায়েও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE