Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

অভিভাবকহীন

কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে যে অভাবনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাতে এই শ্রেণির কর্মীদের বিপন্নতাও স্পষ্ট হইতেছে।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০০:০৮
Share: Save:

গিগ ইকনমি’ শব্দবন্ধটির সহিত ভারতের পরিচয় ক্রমে গভীর হইয়াছে। এবং, সেই সূত্রেই শব্দবন্ধটির অর্থ সম্প্রসারিত হইয়াছে। মার্কিন মুলুকে যাহা ছিল নিতান্ত সাময়িক কাজ— হয় দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য, অথবা কয়েক সপ্তাহ বা বড় জোর কয়েক মাসের মতো অতি স্বল্পস্থায়ী মেয়াদের জন্য লোকে যে কাজ করিত, তাহাকেই ‘গিগ’ বলা হইয়া থাকে— ভারতে তাহাই বহু মানুষের স্থায়ী পেশায় পরিণত হইয়াছে। তাঁহারা প্রধানত যুবক, তাঁহাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এবং, লকডাউনে তাঁহারা ক্রমশ বিপন্নতর। অ্যাপ ক্যাব বন্ধ, অনলাইন খাবার ক্রয়ের চাহিদা হ্রাসপ্রাপ্ত, এই বিরাট শ্রেণি রোজগারহীন। পূর্বাবস্থায় ফুড অ্যাগ্রেগেশন অ্যাপের যে ‘ডেলিভারি পার্টনার’ দৈনিক এক হাজার টাকা রোজগার করিতেন, এখন তাঁহার আয় কোনও দিন দুইশত টাকা, কোনও দিন শূন্য। তবু পথে নামিতে হইয়াছে। রোজগার না হইলে দেখিবার কেহ নাই, অতএব যেটুকু কাজ, সেইটুকুই রোজগার।

ক্রমবর্ধমান কর্মী-সংখ্যার এই ক্ষেত্রটি চরিত্রে স্বতন্ত্র— অর্থনীতির সনাতন সংগঠিত-অসংগঠিত বিভাজনে তাহাকে ধরা দুষ্কর। যে সংস্থাগুলি এই ‘গিগ’ কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিষেবা দেয়, সেগুলি বিলক্ষণ সংগঠিত— অনেক ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি বহুজাতিক। কিন্তু, যে (ঠিকা) চুক্তির মাধ্যমে কর্মীরা এই সংস্থাগুলির সহিত যুক্ত হন, তাহার শর্তের ফলে এই কর্মীরা কার্যত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক হইয়া দাঁড়ান। নিরাপত্তাহীন, সামাজিক সুরক্ষাহীন। এক্ষণে বলিয়া রাখা প্রয়োজন যে শ্রমের বাজারে নমনীয়তা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পক্ষে জরুরি। কিন্তু, কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে যে অভাবনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাতে এই শ্রেণির কর্মীদের বিপন্নতাও স্পষ্ট হইতেছে। প্রকৃত সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের দায়িত্ব এখনও অবধি সংস্থাই লইতেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কথা ভাবিতেছে সরকার। কিন্তু, গিগ ইকনমির কর্মীরা আছেন মাঝখানে। ফলে, তাঁহারা অতি বিপন্ন।

কর্মীদের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন তো বটেই, যে রোজগারের উপর এতগুলি সংসার নির্ভরশীল, সেই সুবৃহৎ শহুরে সমাজ স্রেফ অভিভাবকহীন হইয়া থাকিয়া রোজগার হারাইলে তাহা অর্থনীতির পক্ষেও সুবিপুল ক্ষতি। সুতরাং, সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রম বণ্টনের পরিচিত ছকটির বাহিরে আসিয়া রাষ্ট্রকে ভাবিতে হইবে, কী করিয়া এই শ্রেণিকে প্রয়োজনীয় রক্ষা কবচ দেওয়া যায়। এমতাবস্থায় সরকারের দায়িত্বই সর্বাধিক। প্রথমত, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সরকার যে সুরক্ষার ব্যবস্থা করিতেছে, গিগ-কর্মীদের জন্যও তাহার ব্যবস্থা করিবার কথা ভাবিতে হইবে। ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ হইল এই দুঃসময়ে সংস্থাগুলিকে এই ঠিকা কর্মীদের দায়িত্ব লইতে বাধ্য করা। সম্প্রতি বেশ কিছু সংস্থা গ্রাহকদের নিকট আবেদন করিতেছে, যেন তাঁহারা এই পরিষেবা কর্মীদের ত্রাণে সংস্থার নিকট মুক্তহস্তে দান করেন— সংস্থা সেই টাকা শ্রমিকদের হাতে পৌঁছাইয়া দিবে। সদিচ্ছা অতি পবিত্র বস্তু, কিন্তু তাহার ভরসায় যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলিতে পারে না, এই কথাটি সংস্থাগুলিকে বুঝাইয়া বলিবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংস্থাগুলিকে তাঁহাদের ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির চুক্তির দোহাই দিয়া এই দুঃসময়ে কেহ যেন দায়িত্ব না এড়ান, কেবল সরকারই তাহা নিশ্চিত করিতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy