Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

অবশ্যপালনীয়

লকডাউন অনন্ত কাল চলিবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও দীর্ঘ দিন থামিয়া থাকিবে না। রুজির প্রয়োজনে মানুষকে বাহিরের জগতে পা ফেলিতেই হইবে।

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কোভিড-১৯’এর আবির্ভাব পরিবর্তন আনিয়াছে বহু ক্ষেত্রে। শিক্ষা হইতে অর্থনীতি, সর্বত্র সেই ছাপ স্পষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের পরিসরেও। ইহা আদৌ দীর্ঘস্থায়ী হইবে কি না, ইহার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হইবে কি না, প্রশ্নগুলির উত্তর সময়ই দিবে। আপাতত একটি সুফল প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে। চিকিৎসকরা জানাইতেছেন, লকডাউন পর্বে সাধারণ অসুখবিসুখের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাইয়াছে। কমিয়াছে দৈনন্দিনতার অঙ্গ হইয়া উঠা জলবাহিত রোগ, খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুসফুসের সমস্যার ন্যায় অসুখগুলিও। অনুমান, লকডাউনজনিত গৃহবন্দিত্বই এই রোগহ্রাসের অন্যতম কারণ। অবশ্য ইহাও বলা হইতেছে যে, সংক্রমণের ভয়ে সাধারণ রোগী চিকিৎসকের নিকট আসিতেছেন না, সুতরাং রোগীর সংখ্যা হ্রাস সম্পূর্ণত রোগের প্রকোপ হ্রাসের ইঙ্গিতবাহী না-ও হইতে পারে। কিন্তু ইহাও সত্য যে, বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার, অপরিস্রুত জল এবং বাতাসের দূষিত কণা মানবশরীরে প্রবেশ করিতে না পারায় অসুখ তীব্র হইয়া উঠে নাই। পানশালা বন্ধ থাকিবার কারণে প্যানক্রিয়াটাইটিসের সমস্যাও হ্রাস পাইয়াছে। নিয়মে আবদ্ধ হইয়াছে জীবন। যোগ হইয়াছে সংক্রমণ আতঙ্কে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ ভাবে পালন করিবার বাধ্যবাধকতা। সুতরাং আপাতত পিছু হঠিয়াছে নাছোড় অসুখ।

কিন্তু লকডাউন অনন্ত কাল চলিবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও দীর্ঘ দিন থামিয়া থাকিবে না। রুজির প্রয়োজনে মানুষকে বাহিরের জগতে পা ফেলিতেই হইবে। করোনা-উত্তর পৃথিবীতে জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নটিকেও অবহেলা করা চলিবে না। সুতরাং উভয় বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখিয়াই আগামী দিনের পরিকল্পনা করিতে হইবে। সরকার এবং নাগরিক, উভয়কেই। ইহাতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হইবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতের খরচও আয়ত্তের মধ্যে থাকিবে। কিছু ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ সাধারণ মানুষের হাতে নাই। যেমন, আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু হইবার সঙ্গে দূষণও বাড়িবে। বৃদ্ধি পাইবে ফুসফুসের নানাবিধ অসুখও। এই ক্ষেত্রে সরকারকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে উপযুক্ত পরিবেশ নীতি গ্রহণ করিতে হইবে, যাহাতে দূষণের মাত্রা নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন করিতে না পারে।

ইহা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি পালন করিবার বিষয়টি দৈনন্দিনতার অঙ্গ। মাস্ক পরিধান করা, বারংবার হাত ধুইবার ন্যায় অভ্যাসগুলি আগামী দিনেও মানিয়া চলিলে বহু অবাঞ্ছিত রোগ প্রতিরোধ সহজ হইয়া উঠিতে পারে। এত কাল চিকিৎসকরা বলিতেন, নাগরিক জীবনের অধিকাংশ অসুখই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পরিণতি। অতিমারি আসিয়া এই বহুশ্রুত কথাটিকেই প্রমাণ করিল। করোনাভাইরাস না আসিলে হয়তো এই উপলব্ধি আসিত না যে, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন সত্যই রোগব্যাধিকে দূরে রাখিতে পারে। বস্তুত, অতিমারি রোধ করিতে যে পরামর্শগুলি দেওয়া হইতেছে, তাহাতে নূতনত্ব কিছু নাই। টাটকা খাদ্যগ্রহণ, খাইবার পূর্বে হাত পরিষ্কার করা, থুতু না ফেলা, বাহিরের পরিধেয় ব্যবহারের পর প্রতি দিন ধুইয়া লওয়া, জুতা ঘরের বাহিরে ছাড়িয়া রাখা— এক কালে এগুলিকেই কাণ্ডজ্ঞান বলিত। ব্যস্ত সময় সেই শিক্ষাকে বিস্মৃত করিয়াছিল। নূতন পৃথিবীতে সেই পাঠটিকেই পুনরায় স্মরণ করিতে হইবে।

আরও পড়ুন: ভয় না দেখিয়ে পুরস্কার দিন

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy