Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Brazil

দুনিয়ার আদালতে

নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের প্রাণ লইয়া ছিনিমিনি খেলিবার নালিশ শুনিবার অভিজ্ঞতা আইসিসি’র পক্ষেও অভিনব বলিলে বিশেষ অত্যুক্তি হইবে না।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০০:৪৪
Share: Save:

বোলসোনারোর দানবিক প্রতিভায় স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পও বোধ করি চমৎকৃত। ব্রাজ়িলের দশ লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং সামাজিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিরুদ্ধে নালিশ জানাইয়াছেন। তাঁহাদের অভিযোগ: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তিনি দেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য পরিষেবার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মী এবং সাধারণ ভাবে নাগরিকদের স্বাস্থ্য তথা জীবনের সুরক্ষার প্রতি ‘তাচ্ছিল্য, ঔদাসীন্য এবং প্রত্যাখ্যান’-এর মনোভাব দেখাইয়া চলিতেছেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের প্রাণ লইয়া ছিনিমিনি খেলিবার নালিশ শুনিবার অভিজ্ঞতা আইসিসি’র পক্ষেও অভিনব বলিলে বিশেষ অত্যুক্তি হইবে না। অতিমারিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই ব্রাজ়িলের স্থান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতোই ব্রাজ়িলের মহানায়কও যাবতীয় সুপরামর্শ এবং কাণ্ডজ্ঞানকে দায়িত্ববোধহীন ফুৎকারে উড়াইয়া দিয়া এই বিপজ্জনক অতিমারি লইয়া ছেলেখেলা করিয়া আসিতেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁহার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ।

অভিযোগে ফল হইবে কি? আইসিসি নামক প্রতিষ্ঠানটি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরকে সম্মান দিয়াছে, কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সংশ্লিষ্ট বিবিধ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মতোই তাহার ভূমিকাও মূলত আলঙ্কারিক। সেই আলঙ্কারিকতা এখন বহুগুণ বাড়িয়াছে, কারণ এই ২০২০’র দুনিয়ায় জোর যাহার মুলুক তাহার। যে রাষ্ট্রনায়ক সহাস্যে দেশবাসীর প্রাণ লইয়া ছিনিমিনি খেলিতে পারেন, আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযুক্ত হইবার কারণে তাঁহার লজ্জাবোধ জাগিবারও প্রশ্ন উঠে না— যাহার অস্তিত্ব নাই তাহা জাগিবে কী করিয়া? কিন্তু তাহার পরেও এই মামলার প্রকল্পটিকে অর্থহীন বলা চলিবে না। একাধিক কারণে এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রথমত, দেশের রাজনীতিতে বোলসোনারোর অবস্থা যথেষ্ট জোরদার নহে, বিশেষত তাঁহার প্রতি প্রতিপত্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরাগ বাড়িতেছে। আইসিসি’র হস্তক্ষেপ সেই বিরাগ বাড়াইয়া তুলিতে পারে। দুই, রাষ্ট্রের উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি ও অনুশাসনের কাঠামোটির কার্যকারিতা যত ক্ষীণই হউক, নৈতিক মূল্য অনস্বীকার্য। জগৎসভায় দাঁড়াইয়া অন্যায়কে অন্যায় বলিয়া ঘোষণার অধিকার থাকিলে তাহা প্রয়োগ করা জরুরি। ব্রাজ়িলের প্রতিবাদীরা তাহাই করিয়াছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব এই আন্তর্জাতিক নজরদারির তাৎপর্য বুঝিয়াছিল ঠিকই, কিন্তু তাহার কর্মকাণ্ডের ধরনটি এখনও মোটেই কার্যকর নহে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেই আলোচনা নূতন করিয়া শুরু করিবার একটি তাৎপর্য আছে। তৃতীয়ত, এই উদ্যোগ উন্মোচিত করিয়াছে একটি নির্মম সত্য: দেশের বিচারব্যবস্থায় ব্রাজ়িলবাসীর ভরসা নাই। ভরসা না থাকিবার হেতু বিস্তর। গত কয়েক বছরে ব্রাজ়িলে ভূতপূর্ব সরকারি কর্তাদের অনেকেই দুর্নীতির দায়ে কারারুদ্ধ, নির্বাচনী ময়দানে তাঁহাদের প্রবেশ নিষেধ। দুর্নীতি অবাস্তব নহে, কিন্তু বাছিয়া বাছিয়া একটি শিবিরের রাজনীতিকদের শাস্তি দেওয়া হইলে বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা লইয়া প্রশ্ন জাগে। রাজনীতির অন্ধকারে সুবিচারের পথ হারাইলে কী হয়, তাহা অন্যান্য দেশের বাস্তবও বলিয়া দিতেছে। এক দিকে সেনাবাহিনী, অন্য দিকে বিচারবিভাগকে পাশে লইয়া বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার তাহার নূতন অবয়ব নির্মাণ করিতে ব্যস্ত। এই নব্য-তন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশে আর যাহাই হউক, গণতন্ত্র বলিয়া যাহা এত কাল পরিচিত, তাহা সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, সন্দেহ নাই। ব্রাজ়িলের নাগরিকরা তাই বিশ্ব আদালতে আলো খুঁজিতেছেন। বার্তা দিতেছেন, নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গণতন্ত্রের অপরিহার্য রক্ষাকবচ। যে কোনও দেশেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Zair Bolsonaro Donald Trump Coronavirus ICC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy