Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

অসংবেদী, অবিবেচক

প্রতিক্রিয়াশীল নাগরিকের পক্ষ হইতে কিছু কথা বলিবার থাকিতে পারে। ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের জন্য যে যথেষ্ট সুরক্ষাবস্ত্র (পিপিই) নাই, তাহা প্রথম হইতেই জানা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

নিদারুণ রোগে মারিগুটিকায় বাসবদত্তার দেহ যখন ভরিয়া গিয়াছিল, কেমন মনোভাব দেখাইয়াছিল তাহার সমাজ, বৌদ্ধ কাহিনি অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনে করাইয়া গিয়াছেন: ‘‘রোগমসীঢালা কালী তনু তার/ লয়ে প্রজাগণে পুরপরিখার/ বাহিরে ফেলেছে করি’ পরিহার/ বিষাক্ত তার সঙ্গ।’’ সন্ন্যাসী উপগুপ্ত আসিয়া তাহার সেবার কাজে লাগিবার আগে রোগাক্রান্তা রাজনর্তকী নগরের বাহিরে অমনই পরিত্যক্তা চেতনহীনা পড়িয়াছিলেন। সেই সব দিনকালে চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল নেহাত অনুন্নত, প্রতিষেধক কর্মসূচি বলিতেও কিছু ছিল না। তাহার পর বহু যুগ কাটিয়াছে, বহু সঙ্কটসাগর পার করিয়া আসিয়াছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজ, রাজনীতি। কিন্তু করোনাভাইরাস পর্ব প্রমাণ করিয়াছে, প্রগতি উন্নয়ন সকলই তুচ্ছ, ভারত এবং বঙ্গভূমির সমাজ এখনও একই জায়গায় ঠায় দাঁড়াইয়া আছে। হয়তো বা আরও খানিক পিছনে সরিয়াছে, কেননা আজিকার দিনে বাসবদত্তার সহিত উপগুপ্তকেও সম্ভবত আর পুরপরিখার এ দিকে নগরে ঢুকিতে দেওয়া হইত না। তাঁহার অপরাধ, তিনি রোগীর সেবা করিয়াছেন! অধুনা প্রত্যহ সংবাদে প্রকাশ, যে সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অসুস্থের চিকিৎসা করিতেছেন, তাঁহাদের উপর রীতিমতো অমানবিক আক্রমণ চলিতেছে, বাড়ি ও পাড়া হইতে তাঁহাদের বহিষ্কার করা হইতেছে। উত্তরপ্রদেশে সংক্রমিত রোগী সামাজিক বয়কটের সামনে দিশাহারা হইয়া আত্মঘাতের চেষ্টা করিয়াছেন, এই রাজ্যেও তেমন ঘটিলে বিস্ময়ের কিছু নাই। এমনকি কলিকাতা শহরে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি লইয়াও বিক্ষোভ চলিতেছে। যেন ওই কেন্দ্রগুলি নিজেদের অঞ্চলে ঢুকিলেই গোটা পাড়া বিপন্ন হইবে। ইহা যে কেবল অমূলক, ভ্রান্ত ভাবনা, তাহাই নহে, অতীব বিপজ্জনকও বটে। বিপজ্জনক কেননা, কিছু দিন পর ডাক্তার ও সেবাকর্মীরা তাঁহাদের কাজ করিতেই অসম্মত হইলে তাঁহাদের আর দোষ দেওয়া যাইবে না। এত কঠিন একটি অসুখের সহিত দিবারাত্রি তাঁহারা পাঞ্জা লড়িবার পরও এই সামাজিক অসহযোগ। সমাজ যে কত দীন ও সঙ্কীর্ণ, ভাবিলে শিহরিয়া উঠিতে হয়।

প্রতিক্রিয়াশীল নাগরিকের পক্ষ হইতে কিছু কথা বলিবার থাকিতে পারে। ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের জন্য যে যথেষ্ট সুরক্ষাবস্ত্র (পিপিই) নাই, তাহা প্রথম হইতেই জানা। ইহার অভাবে সংক্রমণ ছড়াইয়া পড়িতে পারে, সেই অনুমানও কঠিন নহে। সুতরাং, মানুষের উদ্বেগ স্বাভাবিক। কিন্তু সহজ বিবেচনায় তাঁহাদের বুঝিতে হইবে, সংক্রমণ ঠেকাইতে সংক্রমিত বা স্বাভাবিক মানুষের উপর চড়াও হইলে কাজ হইবে না, অন্য পথে অগ্রসর হওয়া দরকার, যেমন প্রশাসনের নিকট সুরক্ষা দাবি ইত্যাদি। পিপিই-র অকুলান কেবল ভারতেরই সমস্যা নহে। সমগ্র বিশ্বেই এই সঙ্কট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। অথচ অন্যত্র কিন্তু অহরহ ডাক্তার ও নার্সের উপর মানুষের অক্রমণের কথা শোনা যাইতেছে না। আরও একটি কথা। সংক্রমণ-প্রবণ ভাইরাস অল্পবিস্তর ছড়াইবেই। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ও প্রশাসন-ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখিতে হইবে। যথাসাধ্য সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইবে। এতদ্ব্যতীত বাঁচিবার উপায় নাই। এই মুহূর্তে প্রশাসনের উপরেই নির্ভর করিতেছে গোটা সমাজের নিরাপত্তা। পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা বলে, রাজ্য সরকার সেই দায়িত্ব মনে রাখিয়া যথেষ্ট সজাগ ও সক্রিয় থাকিতেছে। যে সব দুর্বলতা থাকিয়া গিয়াছে, যেমন চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা-বর্ম কিংবা অধিক পরীক্ষা-কিটের ব্যবস্থা, সেগুলি হইতেও নিশ্চয় ক্রমশ উদ্ধার মিলিবে। দায়িত্বশীল প্রশাসনের উপর নির্ভর না করিয়া নাগরিক নিজ হাতে সিদ্ধান্ত কিংবা পন্থা তুলিয়া লইলে বিপদ বাড়িবে বই কমিবে না। নাগরিকের কোনও উদ্বেগ থাকিলে তাহা প্রশাসনকে জানানোর আগে স্বতঃপ্রবৃত্ত পদক্ষেপ বন্ধ করিতে হইবে। প্রয়োজনে উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID-19 Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy