Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

উপলব্ধিটা বিলম্বে হল, তবু পুরোটা হল না

ভারতের সামাজিক কাঠামোটাকে যে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে কোনও সংশয় নেই। এ অভিযোগ অন্যান্য শিবির থেকে অনেক দিন ধরেই উঠছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজে সম্ভবত এই প্রথম বার স্বীকার করলেন কথাটা।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

অবশেষে কাঙ্খিত উপলব্ধিটা হল প্রধানমন্ত্রীর। ভারতীয় সমাজ যে আসলে বিবিধতার ঠাস বুনোট এবং সে বুনোটটাকে যে আলগা করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজে সে কথা বুঝলেন, স্বীকারও করলেন। স্বভাবতই আশার আলো একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মহান মিলনের এ সামাজিক কাঠামোর বিপন্নতার নেপথ্যে যে কারণটা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, তাতে ফের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে ধন্দে পড়তে হল। আশার বাতি আবার ঔজ্জ্বল্য হারাতে চাইল।

আটত্রিশতম ‘মন কি বাত’-এ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের সামাজিক বুনোটটাকে ভেঙে দিতে চাইছে সন্ত্রাসবাদীরা, এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে— বার্তা প্রধানমন্ত্রীর। অনেকেরই মনে হতে পারে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে এক হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং উচিত কথাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বা আহ্বান যদি শুধু সন্ত্রাস সংক্রান্ত হত, তা হলে সত্যিই এ মন্তব্যে বা আহ্বানে আপত্তিকর কিছু খুঁজে পাওয়া যেত না। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে যতটা সরলরৈখিক বা একমাত্রিক বলে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানকে, ততটা সরলরৈখিক বা একমাত্রিক এটি নয়। এ মন্তব্যে এক সাংঘাতিক চোরা বাঁক রয়েছে। সে বাঁকটা চিনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন

‘মন কি বাত’ জুড়ে গুজরাত

ভারতের সামাজিক কাঠামোটাকে যে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে কোনও সংশয় নেই। এ অভিযোগ অন্যান্য শিবির থেকে অনেক দিন ধরেই উঠছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজে সম্ভবত এই প্রথম বার স্বীকার করলেন কথাটা। কিন্তু দায়ী করলেন কাদের? শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদীদের। বহু ভাষা, জনগোষ্ঠীর, সংস্কৃতির মিলনস্থল যে ভারতীয় সমাজ, সে সমাজে মিলনের সূত্রটা ছেড়ে দিতে চাইছে জঙ্গিরা, এ কথা ঠিক। কিন্তু সামাজিক বুনোটটার উপর আঘাত তো আরও নানা পথ ধরে আসছে। গো-রক্ষা কর্মসূচি, গো-মাংস গুজব তুলে সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে মারা, দলিত নির্যাতন, রাজপুত অস্মিতার নামে চলচ্চিত্রে নিষেধাজ্ঞা, কারও জিভ কাটার হুমকি, কারও মাথা কাটার নিদান— এ সব পথ ধরেও তো সামাজিক বুনোটটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা নিরন্তর চলছে। এ সব যারা করছে, তাদের দিকেও যে আঙুলটা তোলা দরকার, সে কথা কি প্রধানমন্ত্রী ভুলে গেলেন? নাকি ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমাটার আওতায় এরাও পড়ছে?

ধন্দের কোনও কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রথাগত অর্থে সন্ত্রাসবাদী যাদের বলা হয়, তিনিও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তাদেরই চিহ্নিত করেছেন। বাকিদের বিষয়ে তা হলে মুখ খুললেন না কেন মোদী?

বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে আপনি ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। অতএব দেশবাসীর প্রত্যাশাও আপনার কাছ থেকে বিপুল। দেশের সামাজিক কাঠামোটা যে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সে কথা অনেক বিলম্বে স্বীকার করলেন। কিন্তু আরও যা কিছু এ প্রসঙ্গে বলা কর্তব্য ছিল আপনার, সে সব উচ্চারণ শোনা গেল না। ফের আশাহতই করলেন প্রধানমন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy