ইতিহাসের পাতায় চলে যাওয়া একটা শব্দ আবার ফিরে এল। বাম জমানার শেষ অঙ্কে বাংলার শিক্ষাঙ্গনে ‘অনিলায়ন’ শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল। শিক্ষাঙ্গনে সিপিএম দলের তত্কালীন রাজ্য সম্পাদকের কর্তৃত্ব কায়েমের কৌশলকেই এই নামে ডাকা হত। বামেরা অতীত হতেই অনিলায়নও অতীত। কিন্তু বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, অনিল বিশ্বাসের শূন্যস্থান পূরণ করার যোগ্যতা তাঁর যথেষ্ট রয়েছে। বুঝিয়ে দিলেন, অনিলায়নের চেয়েও কয়েক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ‘পার্থায়ন’ সেরে ফেলতে তিনি অত্যন্ত উদ্গ্রীব।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাথার উপর অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী রয়েছেন। অতএব শিক্ষার পার্থায়নের পথে খুব সহজে দৌড়তে পারলেন না তিনি। লাগামে টান পড়ল দৌড় শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে।
‘পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০১৬’ এ যাত্রা পেশ হল না বিধানসভায়। বিলে শিক্ষা দফতরের প্রস্তাবনা, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষকরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না আর। সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মীদের মতো তাঁদেরও সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার চলে যাবে এ বার। পার্থবাবু অবশ্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর পুরোপুরি ‘নির্দয়’ হননি। ‘কঠোর’ প্রশাসনিক পদক্ষেপেও একটা রন্ধ্রপথ রেখে দিয়েছেন। সক্রিয় রাজনীতিতে থাকার বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা জাগলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যাতে শিক্ষক বা অধ্যাপকরা নিজেদের ইচ্ছাপূরণের পথে এগোতে পারেন, সে সংস্থান পার্থ চট্টোপাধ্যায় নতুন বিলে রেখেছেন। আসলে এই সংস্থানের মাধ্যমেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পার্থায়ন বাম জমানার অনিলায়নের চেয়েও জবরদস্ত এক বন্দোবস্ত। এই সংস্থান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শাসকের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কায়েমের এক অব্যর্থ অস্ত্র।
খুব আচম্বিত এক পদক্ষেপ শিক্ষামন্ত্রী নিচ্ছিলেন, বলা যাচ্ছে না অবশ্য। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতি মুক্ত রাখার আহ্বান ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছিলেন এবং এখনও দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু, এও ঠিক যে তাঁর রাজত্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উঠোনে রাজনীতির ঠাঁই আরও অবারিত হয়েছে, শাসকের প্রতিপত্তি আরও দৃঢ় হয়েছে। প্রস্তাবিত বিল শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাধীনতার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকতে চলেছিল। বিরোধী শুধু নয়, শাসকের ঘরেও তা নিয়ে অসন্তোষ ঘনাচ্ছিল।
নাড়িটা খুব ভাল পড়তে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোথায় গিয়ে পদক্ষেপটা আদ্যন্ত ভুল হয়ে যাচ্ছে, অশান্তির আঁচটা ঠিক কোন কোণা থেকে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, অভ্রান্ত বুঝতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতএব, শেষ মুহূর্তে লাগামে টান পড়ল। থমকে দাঁড়াল পার্থায়নের ঘোড়া। স্থগিত হয়ে গেল বিল পেশ।
এ যাত্রা বাঁচোয়া। শুধু শিক্ষাঙ্গনের বাঁচোয়া নয়, বাঁচোয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও। যে বিল পেশ করতে চলেছিলেন, তা পাশ হলে কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামটা কোনও এক অনাগত সময়ে রাজনৈতিক ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে খুঁজে পাওয়া যেত। মুখ্যমন্ত্রী বাঁচিয়ে নিলেন নিজের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মীকে। কিছুটা বাঁচিয়ে নিলেন রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতাকেও। শিক্ষামন্ত্রীর চোখ খুলল কি? আশা করা যায় উত্তর মিলবে অচিরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy