Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

অশনি সঙ্কেত

বাংলার কৃষক অবশ্য আন্তর্জাতিক রিপোর্ট না পড়িয়াই এই বক্তব্যের সত্যতা উপলব্ধি করিয়াছে। মরসুমি বায়ু-বাহিত বৃষ্টি প্রতি বৎসরই আরও বিলম্বে আসিতেছে, এ বৎসর এখনও তাহার দেখা মেলে নাই।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

ভারতবাসীর সমবেত চেতনা হইতে দুর্ভিক্ষ আজও অন্তর্হিত হয় নাই। ব্রিটিশ শাসনকালে বহু বার মন্বন্তর হইয়াছে, স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘ দিন খাদ্যাভাব পীড়িত করিয়াছে দেশবাসীকে। সেই সঙ্কট ফের ঘনাইতেছে। ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের উপর খাদ্যাভাবের করাল ছায়া দেখা দিতেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূসম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করিয়াছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত মূল্যায়নের ফল এই প্রতিবেদনটি। তাঁহাদের বক্তব্য, আজ বিভিন্ন দেশ তাহার খাদ্যের জোগানের জন্য বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে। কোনও খাদ্যবস্তু এক দেশে কম উৎপন্ন হইলেও তাহা আমদানি করিয়া ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যের উৎপাদন যদি একাধিক দেশে একই সঙ্গে কমিতে থাকে, তাহা হইলে সর্বত্র খাদ্যাভাব তীব্র ভাবে অনুভূত হইবে। খাদ্যবাণিজ্য খাদ্যের চাহিদা পূরণ করিতে ব্যর্থ হইলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হইবে, কী রূপে তাহার মোকাবিলা সম্ভব? সেই প্রশ্নের উত্তর কাহারও কাছে নাই। অথচ বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তাহার ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আধিক্য, এবং তাহার ফলস্বরূপ ফসল উৎপাদনে ঘাটতি— এই ঘটনাক্রম নিবারণ অতি দুঃসাধ্য। বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ যে হারে বাড়িতেছে, তাহা অপ্রতিহত থাকিলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং বিবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিকে ব্যাহত করিবে। অতি দ্রুত নষ্ট হইবে কৃষিজমির উর্বরতা। খাদ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য নষ্ট হইবে, তাহার ঝুঁকি ‘অতি উচ্চ’, বলিতেছে রিপোর্ট।

বাংলার কৃষক অবশ্য আন্তর্জাতিক রিপোর্ট না পড়িয়াই এই বক্তব্যের সত্যতা উপলব্ধি করিয়াছে। মরসুমি বায়ু-বাহিত বৃষ্টি প্রতি বৎসরই আরও বিলম্বে আসিতেছে, এ বৎসর এখনও তাহার দেখা মেলে নাই। চারারোপণের সময় প্রায় পার করিয়া শেষে মুষলধারে বর্ষণ চাষিকে আরও বিপন্ন করিতেছে। ধান-পাট-আলু-গম প্রভৃতি ফসলের যে চক্রের সহিত চাষি পরিচিত, ঋতুচক্রে বিপর্যয়ের কারণে তাহা সম্পূর্ণ অব্যবস্থিত হইয়া পড়িতেছে। অজানা পোকার উপদ্রব, ফসলের অচেনা রোগের প্রাদুর্ভাবে চাষি উৎকণ্ঠিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বাংলা তথা ভারতের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চাষিকে কেবল এই সান্ত্বনা দিতে পারে যে, এই দুর্ভোগ তাঁহার একার নহে। ইউরোপের শস্যভাণ্ডার ফ্রান্সেও এ বৎসর ফসল বুনিতে নাজেহাল হইয়াছেন চাষিরা। জুলাই মাসে ইউরোপ জুড়িয়া যে তাপপ্রবাহ বহিয়াছে, তাহাতে খরাকবলিত হইয়াছে ফ্রান্স। অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বৃষ্টি এবং বন্যার জন্য সয়াবিন ও ভুট্টার চাষ বিলম্বিত হইয়াছে। যাহা ছিল ব্যতিক্রম, সেই সকল প্রাকৃতিক সঙ্কট এখন নিয়ম হইয়া উঠিয়াছে। কী করিয়া পরিত্রাণ মিলিবে, চাষি তাহা জানেন না।

বিশেষজ্ঞরা তাহার পথ দেখাইয়াছেন। একটি প্রধান উপায়, ভূসম্পদের যথাযথ ব্যবহার। বৃক্ষরোপণ, সৌরশক্তির অধিক ব্যবহারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করিবার নিদান নূতন নহে। তবে রিপোর্ট বলিতেছে, ফসল নষ্ট করাও বন্ধ করিতে হইবে, কারণ তাহা হইতে উৎপন্ন মিথেন বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। তৎসহ দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন দরকার। যে সকল ফসল অতিরিক্ত জল দাবি করে, অধিক কার্বন নিঃসরণের কারণ হয়, সেইগুলি বর্জন করিতে হইবে। ইহার কোনওটিই সাধ্যাতীত নহে। কিন্তু শুধু কথাগুলি বলিলেই চলিবে না। সত্যই যদি কৃষিক্ষেত্রে বিশ্ব-উষ্ণায়নের সহিত লড়িতে হয়, তবে একটি সার্বিক কৃষিনীতি প্রয়োজন। ভর্তুকির চরিত্র হইতে কৃষিপণ্যের বাজার, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা হইতে আবহাওয়াভিত্তিক তথ্য-নেটওয়ার্ক, সব কিছুকেই ঢালিয়া সাজিতে হইবে। প্রকৃতির সহিত লড়াই কঠিন কাজ। সেই লড়াইয়ে রাষ্ট্রকে কৃষকের পার্শ্বে থাকিতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Climate Change Famine Global Worming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy