Advertisement
E-Paper

স্বেচ্ছাসেবী?

বিপুল কর্মভারের দায় চাপাইয়াও তাঁহাদের পরিচিতিতে ‘স্বেচ্ছাসেবক’ তকমাটি ঝুলাইয়াছে সরকার। ফলে ন্যূনতম বেতনের অধিকার খারিজ হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে তাঁহাদের স্থায়ী ভাতা সাড়ে তিন হাজার টাকা।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। ফাইল চিত্র

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:১৯
Share
Save

স্বাস্থ্য দফতর ‘স্বেচ্ছাসেবী’ শব্দটির অর্থ ভুলিয়াছে। কর্তারা আশাকর্মীদের উপর নানা বাড়তি দায়িত্ব চাপাইতেছেন, রাজি না হইলে ভাতা আটকাইবার হুমকি দিতেছেন। সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে এক মাস ‘সহায়তা ডেস্ক’ চালাইবার নির্দেশ মানিতে অস্বীকার করিয়াছেন নবদ্বীপের তিন আশাকর্মী। হাসপাতালের দূরত্ব এবং নিরাপত্তার অভাবের জন্য তাঁহারা বিপন্ন বোধ করিয়াছেন। তাহাতে চটিয়াছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, মিড-ডে মিল কর্মীদের কাজকে ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ বলা প্রহসন মাত্র। যে কোনও সরকারি কর্মীর ন্যায় তাঁহাদের কাজের সুনির্দিষ্ট সময় এবং দায়িত্ব রহিয়াছে। জবাবদিহিও তলব করা হয়। নিয়মিত কাজের পরিমাণ কম নহে, তাহার ঝুঁকিও যথেষ্ট। দিবারাত্রির যে কোনও সময়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে লইয়া যাইবার দায়িত্ব আশাকর্মীদের। তৎসহ প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্যের নিয়মিত পরিদর্শন, পরিসংখ্যান সংগ্রহ তাঁহাদের কাজ। সে কােজ যে তাঁহারা অবহেলা করেন না, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে একাধিক সরকারি মূল্যায়নে। অধিকাংশ আশাকর্মী এলাকায় উপস্থিত এবং কাজ করিতেছেন। হাসপাতালে প্রসবের হার, এবং শিশুদের টিকাকরণের হার বাড়াইতে আশাকর্মীদের অবদান কম নহে। আশাকর্মীর বিরুদ্ধে বেসরকারি হাসপাতালের দালালি, কিংবা পরিষেবার বিনিময়ে টাকা দাবি করিবার মতো দুর্নীতির অভিযোগও মিলিয়াছে অতি সামান্য। অতএব সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় আশাকর্মীদের স্থানটি তুচ্ছ নয়।

বিপুল কর্মভারের দায় চাপাইয়াও তাঁহাদের পরিচিতিতে ‘স্বেচ্ছাসেবক’ তকমাটি ঝুলাইয়াছে সরকার। ফলে ন্যূনতম বেতনের অধিকার খারিজ হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে তাঁহাদের স্থায়ী ভাতা সাড়ে তিন হাজার টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে এবং কেন্দ্রে আশাকর্মীরা বার বার ন্যূনতম বেতন দাবি করিয়া আন্দোলন করিয়াছেন, তাহাতে ফল হইয়াছে সামান্যই। তদুপরি, যে কোনও জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে আশাকর্মীদের যোগ দিতে কার্যত বাধ্য করা হয়। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন মোট তেতাল্লিশটি কাজ আশাদের উপযোগী বলিয়া চিহ্নিত করিয়াছে। তাহার কোনটির জন্য কত প্রাপ্য, তাহা নির্দিষ্ট করিয়াছে রাজ্য ও কেন্দ্র। কাজের সহিত ভাতার সামঞ্জস্য আছে কি না, সে প্রশ্নও কেহ করে নাই। উপরন্তু, একসঙ্গে একাধিক এমন দায়ভার পালন করিতে গেলে গ্রামের বধূ-কন্যাদের কর্মজীবন ও গার্হস্থ্যজীবনের চেহারাটি কেমন হবে, তাহা কেহ ভাবে নাই।

স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ হুকুম করিবার, তামিল না হইলে শাস্তির চাবুক। পেটে খাইলে পিঠে সয়, কিন্তু অর্ধভুক্ত সমাজসেবীর উপর জুলুম অমানবিক, অন্যায়। তাহার প্রতিবাদ করিয়া দীর্ঘ দিন সকল শ্রমিক সংগঠন সম্মিলিত ভাবে দাবি করিয়া আসিতেছে যে, সকল সরকারি প্রকল্পের কর্মীদের ন্যূনতম বেতন দিতে হইবে। উপর্যুপরি চারটি জাতীয় শ্রমিক সম্মেলনে এই দাবি পেশ হইয়াছে। কেন্দ্র কর্ণপাত করে নাই। তাহাতে রাষ্ট্রের পুরুষতান্ত্রিক চরিত্রটি ধরা পড়ে। গৃহস্থালির অগণিত কাজ মেয়েরা করেন, কিন্তু পরিবারের চোখে তাহা সেবামাত্র। মেয়েদের ‘প্রাপ্য’ বলিয়া কিছুই নির্দিষ্ট করে না। রাষ্ট্রও মহিলা কর্মীকে ‘স্বেচ্ছাসেবী’ করিয়া রাখিয়া তাহার শ্রমিকের মর্যাদা কাড়িতেছে। এই ক্ষতি কেবল অর্থের নহে, মর্যাদার। আশাকর্মীদের শ্রমের মর্যাদা না দেওয়া রাষ্ট্রের অপরাধ।

Anganwadi Asha

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}