Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বর্তমান অন্ধকার

লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে আড়াই মাস কাটিয়া গিয়াছে, কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের দেখিয়া কখনওই এমন কথা মনে হয় নাই যে, তাঁহারা একটি সুষ্ঠু সুবিন্যস্ত বাহিনী হিসাবে কাজ করিতেছেন।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা একই বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলিতেছেন, তাঁহাদের কথায় তাল কাটিতেছে, সুর কাটিতেছে, এমনকি থাকিয়া থাকিয়াই বিবাদী স্বর ধ্বনিত হইতেছে— ইহাতে কোনও অভিনবত্ব নাই। বস্তুত, ইহাই কার্যত শতাব্দী-অতিক্রান্ত দলটির অনন্য চরিত্রলক্ষণ। দলনেতারা (সুবিধা মাফিক) ইহাকে সহিষ্ণুতা বলিয়াও গর্ব করিয়া থাকেন। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ঝটিকা-আক্রমণের পরে ‘প্রধান বিরোধী দল’ সংসদে এবং সংসদের বাহিরে যাহা করিতেছে, তাহাকে কোনও ভাবেই গণতান্ত্রিক বহুস্বরের প্রকাশ বলিয়া চালানো অসম্ভব। ইহা নির্ভেজাল বিশৃঙ্খলা। সংবিধানের ৩৭০ ধারাকে নিষ্ক্রিয় করিয়া কাশ্মীরের ইতিহাস-ভূগোল বদলাইয়া দিবার হঠকারী জবরদস্তির প্রতিবাদে সংসদে ভাষণ দিয়াছেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। অথচ দলের একাধিক প্রবীণ ও নবীন নেতা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়া সরকারের এই পদক্ষেপের প্রতি সপ্রশংস সমর্থন জানাইতে ব্যস্ত। লোকসভায় দলনেতা হিসাবে পদোন্নতি-প্রাপ্ত অধীর চৌধুরী আবার তাঁহার ভাষণে রাষ্ট্রপুঞ্জকে টানিয়া আনিয়া কূটনীতির মহাভারত অশুদ্ধ করিয়া দিয়াছেন এবং দৃশ্যত— আক্ষরিক অর্থেই দৃশ্যত— সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলিয়াছেন। দুই দিন ধরিয়া কংগ্রেসের নেতাদের কীর্তিকলাপ এক গভীর আত্মিক সঙ্কটের লক্ষণ।

এক অর্থে এই সঙ্কট বিপুল রাজনৈতিক ব্যর্থতার পরিণাম। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে আড়াই মাস কাটিয়া গিয়াছে, কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের দেখিয়া কখনওই এমন কথা মনে হয় নাই যে, তাঁহারা একটি সুষ্ঠু সুবিন্যস্ত বাহিনী হিসাবে কাজ করিতেছেন। কয়েক দিন আগে ইউএপিএ সংশোধন সংক্রান্ত বিতর্কেও সংসদে কংগ্রেসের অবস্থানে স্ববিরোধিতার পরিচয় মিলিয়াছিল। কাশ্মীর প্রশ্নে সেই ব্যাধি চরমে উঠিল। শেষ অবধি দলের কর্মসমিতিকে বিশেষ বৈঠক ডাকিয়া বিবৃতি প্রকাশ করিতে হইয়াছে, তাহাতে নিয়মরক্ষা হইয়াছে, মুখরক্ষা হয় নাই। বিবৃতির বয়ান নিতান্ত প্রত্যাশিত: কেন্দ্রীয় সরকার যে অগণতান্ত্রিক উপায়ে এবং একতরফা ভাবে কাশ্মীরের অবস্থানে পরিবর্তন ঘটাইয়াছে, তাহা আপত্তিকর। অর্থাৎ, কংগ্রেসের আপত্তি পদ্ধতিগত, নীতিগত নহে। প্রশ্ন একটিই। ৩৭০ ধারা রদ করিলে আপত্তি নাই, তাহা রদ করিবার পদ্ধতি লইয়া আপত্তি আছে— এই কথাটিই দলের সমস্ত কণ্ঠ হইতে একই ভাবে উচ্চারিত হইল না কেন?

উত্তর অনুমেয়। কাশ্মীর প্রশ্নে কংগ্রেস ভয়ানক রকমের দোটানায়। এমন একটি প্রশ্নে বিপক্ষে ভোট না দিলে বিরোধী দলের মুখ থাকে না, কিন্তু সেই বিরোধিতার কোনও নৈতিক ভিত্তিভূমি কংগ্রেসের পায়ের নীচে অবশিষ্ট নাই। কারণ অনেক দিন ধরিয়াই, বিশেষত ইন্দিরা গাঁধীর সময় হইতে, বিভিন্ন কংগ্রেসি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বশাসনের অধিকার হরণে তৎপর থাকিয়াছে, সফলও হইয়াছে। দলের সংসদীয় শক্তি এবং নেতৃত্ব সবল থাকিলে হয়তো এই দ্বন্দ্বকে বাগ্মিতার মোড়ক পরাইয়া এক ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাইত। অনেক দলই তেমন কৌশল প্রয়োগ করিয়াছে— সংসদে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়া ভোটদানের আগে বাহির হইয়া আসিবার সিদ্ধান্তে নৈতিকতার স্থান নাই, কিন্তু কংগ্রেসের মতো আপনার মুখ আপনি পুড়াইবার অপদার্থতাও নাই। কংগ্রেসকে এক দিকে মারিয়া রাখিয়াছে তাহার ইতিহাস, তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে নির্বাচনী ও পরবর্তী ব্যর্থতা। রাহুল গাঁধী ও তাঁহার দল ভোটে ধরাশায়ী হইবার এখনও ধুলা ঝাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইতে পারে নাই— দলীয় সভাপতি লইয়া অচলাবস্থা এখনও অব্যাহত। এই করুণ অবস্থায় মোদী এবং শাহের অভিযানে তাঁহাদের আম এবং ছালা, দুইই গিয়াছে। এই দলের ভবিষ্যৎ ইতিহাসই বলিবে, বর্তমান অন্ধকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Article 370 Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy