ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে আমরা এক অশান্ত টালমাটাল পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। শেষ এক সপ্তাহ ধরে যে দেশকে আমরা দেখছি সে কি আমাদের চেনা? একটি সংশোধিত আইন। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও নিজেকে এই দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার পরীক্ষা। লোকসভা ও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে পাশও হয়ে গেল, পেল আইনের স্বীকৃতি। কিন্তু আইনসভাই তো গোটা দেশ নয়। দেশের কোণে কোণে ছড়াল প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ, যা অচিরেই চেহারা নিল আগুনের। এই সপ্তাহব্যাপী ঘটনাধারার চাঞ্চল্যকর সংযোজন, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া।
সংবাদসূত্রে খবর, রবিবার রাত্রে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে হওয়া একটি সমাবেশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ অবধি গড়ায় এই সংঘর্ষ এবং পুলিশ ব্যাপকভাবে লাঠি চালায়। এই ঘটনায় প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী আহত হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ঘরে ভাঙচুর চলেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের এই তোলপাড় করা ছবি সামনে আসতে স্বভাবতই নানা মত সামনে আসছে। ছাত্রদের কথায়, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লাঠি চালিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য পাথর ছোঁড়া আটকাতে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে।
এই বোধহয় চেনা ভারতবর্ষ। কথা কাটাকাটির রাজনীতিটাই সব, মানবিকতা থাকুক পিছনের সারিতে। দোষারোপের পালা ভুলে তাকানো যাক ইতিহাসে। সমাজে প্রতিবাদের আঁতুড়ঘর ছাত্রসমাজ, এ নিয়ে নিশ্চয়ই কেউ তর্ক জুড়বেন না। আর তার কণ্ঠরোধে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় প্রশাসন। সাহেবি আমলে কার্লাইল সার্কুলার, চিনের তিয়েন আমেন স্কোয়ার, এরাজ্যের একাত্তর, প্রেসিডেন্সি-যাদবপুর নিয়ে বাবা-মায়েদের নিত্য চিন্তা—এ সবের মূলেই রয়েছে কিছু প্রতিবাদী দামাল ছেলেমেয়ে। জামিয়ার ওই ছাত্রদের সব কিছু হয়তো সমর্থনীয় নয়। পাথর ছোঁড়া বা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট (অভিযোগ যদি সত্যি হয়) সমালোচনাযোগ্য। কিন্তু লাঠিই কি তার উত্তর? রক্তাক্ত হওয়াই কি তার শাস্তি? নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়েও এ প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারি না কেউ। যেহেতু আমরাও ওই বসন্তগুলো পেরিয়ে এসেছি, তাই জানি সিস্টেমকে প্রশ্ন করার সাহস দেখায় ওই বয়সটাই। টিয়ার গ্যাস কখনওই রাষ্ট্রের উত্তর নয়, যদি সে রাষ্ট্র সহমর্মী হয়। এই ঘটনার পর টুইটারে শান্তি, সহনশীলতার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর প্রধান সেনাপতি যে কায়দায় বিলটি পাশ করালেন তা কি ভিন্নমতকে চরমভাবে দমন করে রাখা নয়? যে দেশের ছাত্রসমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে সে ছাত্রসমাজ কখনওই মানবে না এই আগ্রাসন। আমরাও জানি সিএএ-তে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নাম সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া আসলে সংবিধানকে অবমাননা। তাই প্রতিবাদ কিন্তু চলবেই। তাই জামিয়ার হাত ধরেছে যাদবপুরও। বিক্ষোভের ধর্মই এই, দমন যত কঠিন হয়, তার তীব্রতাও তত বাড়ে।
এ পরিস্থিতির সমাধান কী জানি না। তবে এটুকু জানি চায়ের কাপে সেই সমাধান নেই। ভোটের আগে ছাত্রসমাজের নতুন ভোটারদের টানতে তো রাজনৈতিক নেতারা আবেগময় ভাষণ দেন। আজ তাঁদেরও বোধহয় দায়িত্ব আছে পাশে দাঁড়ানোর, সমাধানসূত্র খোঁজার। যাতে একটা সেতু রচিত হয়। পেশিশক্তির আস্ফালন আর রডের আঘাতের উত্তর কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে ভয়ঙ্কর হতে পারে।
১৫ ডিসেম্বরের এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ৪৮ বছর আগে। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসে বাংলাদেশ। সেই লড়াইও কিন্তু শুরু হয়েছিল চার ছাত্রের মৃত্যু দিয়ে। ১৯৫২-র সেই ঘটনাকে ভারতের বুকে ফিরিয়ে আনতে নিশ্চয় ভারত-রাষ্ট্র চাইবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy