Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Environment

বিকল্পের সন্ধান

ফসলের গোড়া পুড়াইবার জন্য চাষিকে ‘অপরাধী’ ঠাহর করিবার মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্বচ্ছতার অভাব রহিয়াছে।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

ফের চাষির সহিত সংঘাত বাধিয়াছে সরকারের। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ এ বৎসর একশতেরও অধিক চাষিকে গ্রেফতার করিয়াছে। পাঁচশত চাষির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়াছে। অভিযোগ, আইন লঙ্ঘন করিয়া চাষিরা ফসলের গোড়া পুড়াইতেছেন। খেতে অগ্নিসংযোগ করিলে বায়ুদূষণ আইন ভঙ্গ হয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু ফসলের গোড়া পুড়াইবার জন্য চাষিকে ‘অপরাধী’ ঠাহর করিবার মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্বচ্ছতার অভাব রহিয়াছে। চাষি সমাজবিরোধী নহেন, আইনের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখাইতে তিনি তাহা অমান্য করিতেছেন না। খেতের পর খেতে অগ্নিসংযোগ করিলে উদ্গত ধূম ও ছাই কি গ্রামেও পরিবেশ দূষিত করে না? শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হইয়াও চাষি নিরুপায়, তাঁহার ফসলের গোড়া তুলিয়া ফেলিবার সঙ্গতি নাই। মজুরি আজ চাষের এক প্রধান খরচ, এবং তাহা দ্রুত বাড়িতেছে। ফসলের গোড়া তুলিতে মজুর নিয়োগ চাষির সাধ্যাতিরিক্ত। পুড়াইয়া ফেলিলে খরচ কম, দ্রুত অন্য চাষ শুরু করাও সহজ। উত্তরপ্রদেশের চাষিরা জানাইয়াছেন, এক বিঘা ফসলের গোড়া তুলিয়া ফেলিবার খরচ আট হাজার টাকা, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির পক্ষে সুকঠিন। উত্তরপ্রদেশ সরকার অবশ্য সুপ্রিম কোর্টকে জানাইয়াছে, ফসলের গোড়া তুলিয়া ফেলিবার যন্ত্র সরকারই জুগাইবে, দামে আশি শতাংশ ভর্তুকি মিলিবে। অভিযোগ, সেই যন্ত্র চাষি পায় নাই। পাইয়াছে পুলিশের লাঠি। চাষিদের কলার ধরিয়া গাড়িতে তুলিয়াছে পুলিশ, তিন মাসের জেল বা দশ হাজার টাকা জরিমানা করিতেছে আদালত। খেতের আগুনের মতোই চাষিদের ক্ষোভ ছড়াইতেছে।

সমস্যাটি নূতন নহে, তাহার বিভিন্ন সমাধানও ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত। তাহার অনেকগুলি হাতে-কলমে পরীক্ষা করিয়াও দেখিয়াছেন চাষি। যেমন, এক ধরনের ছত্রাকের ক্রিয়ায় ফসলের গোড়া দ্রুত পচিয়া যায়। খেতে অগ্নিসংযোগ করিলে মাটি জৈব পদার্থ হারাইয়া কঠিন ও অনুর্বর হইয়া পড়ে, কিন্তু গলিত খড় মাটিতে মিশিলে উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। পঞ্জাব-হরিয়ানার চাষিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করিয়া বিঘাপ্রতি অধিক ফসল পাইয়াছেন। অপর একটি উদ্যোগ চলিতেছে ফসলের অবশিষ্টকে নানা ব্যবহারের উপযোগী করিবার। পশুখাদ্য, কাগজ-কাডবোর্ডের উপকরণ হিসাবে তাহার ব্যবহার প্রচলিত হইলে চাষি ফসলের গোড়া নষ্ট করিবেন না, তাহা তুলিয়া বিক্রয় করিবেন। তৃতীয় উপায় ‘হ্যাপি সিডার’ জাতীয় যন্ত্রের ব্যবহার, যাহা একই সঙ্গে পূর্বতন ফসলের গোড়া তুলিয়া ফেলিবে এবং নূতন শস্যের বীজ বুনিয়া দিবে। এত বিকল্প থাকিতেও প্রতি বৎসর খেত পুড়িতেছে কেন?

খাতায়-কলমে যাহা উত্তম পরিকল্পনা, বাস্তবে তাহার রূপায়ণ কঠিন। কখনও কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় তাহা অর্থকরী উপায় নহে, কখনও পরিকল্পনার নানা ত্রুটিতে তাহা চাষির নিকটে পৌঁছাইতে পারে না। কোন বিকল্প চাষির নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য, অধিক লাভজনক, তাহার সন্ধান শেষ হয় নাই। আপাতত চাষিকে দুষ্কৃতী প্রতিপন্ন করিবার অপচেষ্টা হইতে বিরত থাকা দরকার। তবে কি চাষির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করিবার প্রয়োজন নাই? অবশ্যই আছে। কিন্তু তৎপূর্বে নিশ্চিত করিতে হইবে যে, সুলভ বিকল্প থাকা সত্ত্বেও চাষি খেতে অগ্নিসংযোগ করিয়াছেন। নাচার হইয়া নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Crop Burning Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy