Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
USA

ধ্বংসের প্রতিযোগিতা

শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই, এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা, শুরু হয় বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ— জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:২৪
Share: Save:

গত শতাব্দীর মধ্যভাগে এক অসুস্থ মানসিকতা দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রকে গ্রাস করিয়াছিল। আমেরিকা এবং তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন প্রবৃত্ত হইয়াছিল এক ঠান্ডা লড়াইয়ে। ধনতন্ত্র না সমাজতন্ত্র, কে বেশি শক্তিধর, তাহা প্রমাণ করিবার উদগ্র বাসনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরই অভিশাপ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যদি বিষাক্ত গ্যাসের কারণে রসায়নশাস্ত্রের হইয়া থাকে, তাহা হইলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরমাণু বোমার কারণে পদার্থবিদ্যার বলা যাইতে পারে। পরমাণু বোমার মূল কাজ— তারই পরমাণুর বিভাজন— জার্মানির বিজ্ঞানীরা প্রথম বুঝিতে পারেন। অ্যাডলফ হিটলারের ভয়ে ভীত ইউরোপের বহু বিজ্ঞানী তখন আমেরিকায় আশ্রয় লইয়াছেন। উহাদের মধ্যে স্বয়ং আলবার্ট আইনস্টাইনও আছেন। আইনস্টাইন সমেত আমেরিকায় আশ্রিত বিজ্ঞানীরা ভাবিলেন, পরমাণু বোমার মূল নীতি যখন জার্মানিতে আবিষ্কৃত হইয়াছে, তখন জার্মান বিজ্ঞানীরা পরমাণু বোমাও বানাইবেন। এই ভীতি হইতেই আমেরিকার পরমাণু বোমা বানাইতে নামা। শেষ অবধি আমেরিকা পরমাণু বোমা প্রস্তুত করে ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ বৎসরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণামে সোভিয়েট ইউনিয়ন মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া দাঁড়ায়। আমেরিকা পরমাণু বোমা বানাইলে সোভিয়েট ইউনিয়নকেও তাহা বানাইতে হয়। বানাইতে কত দিন লাগিবে? আমেরিকা অনুমান করিয়াছিল, সাত বৎসর। আমেরিকা জানিত না যে, গুপ্তচর মারফত আমেরিকায় প্রস্তুত পরমাণু বোমার নকশা সোভিয়েট ইউনিয়ন সংগ্রহ করিয়াছিল আগেই। সোভিয়েট ইউনিয়ন ১৯৪৯ সালে— অর্থাৎ আমেরিকার অনুমানের তিন বৎসর পূর্বে, পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ করিলে আমেরিকা বিস্মিত হয়। অনুসন্ধান জানায়, গুপ্তচর কর্তৃক বোমার নকশা পাচার হইয়াছিল। অতঃপর উদ্বিগ্ন আমেরিকা পরমাণু বোমা অপেক্ষা অধিক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন হাইড্রোজেন বোমা তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আমেরিকা তাহা তৈরি করিতেছে দেখিয়া, সোভিয়েট ইউনিয়নও সেই পথ অনুসরণ করে। শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই, এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা, শুরু হয় বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ— জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে।

পরমাণু বোমা কিংবা হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হইয়াছিল, তাহা জানিতে চাহিয়াছিলেন ইংল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী গিলেস হ্যারিসন। তাঁহার ফিজ়িকাল রিভিউ লেটারস জার্নাল-এ প্রকাশিত পেপার বলে, সমীক্ষার জন্য ১৯৬২ হইতে ১৯৬৪ সালের মধ্যবর্তী সময় বাছিয়া লইয়াছিলেন হ্যারিসন। অর্থাৎ, যে সময়ে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ তুঙ্গে উঠিয়াছিল। ওই কালে আমেরিকায় নেভাডা মরুভূমি, সোভিয়েট ইউনিয়নে কাজাখস্তান মরুভূমি এবং প্রশান্ত মহাসাগরে বিস্ফোরণগুলি ঘটিয়াছিল। হ্যারিসন দেখেন, যে যে তারিখে আমেরিকা এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন পরমাণু এবং হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ করে, সেই সেই তারিখের অব্যবহিত পরে ইংল্যান্ডে গড়ে ২৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। খরার ন্যায় অতিবৃষ্টিও ফসলের পক্ষে ক্ষতিকর। তেজস্ক্রিয়তা যে কত ক্ষতিকর, তাহা তো জানা। কিন্তু তাহা যে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে অতিবৃষ্টির কারণ হইয়া দাঁড়ায়, তাহা হ্যারিসনের সমীক্ষা বলিয়া দেয়। হায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা!

অন্য বিষয়গুলি:

First world war USA USSR atomic race Cold war
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy