Advertisement
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
Pension Scheme

অবসরগ্রহণের পরে কী হবে

অবসরের পর সঞ্চয় ফুরিয়ে অন্যের উপরে নির্ভরশীল, এমন বহু উদাহরণ আমাদের চার পাশেই। তাঁদের দুর্গতিও পরিচিত।

নীলাঞ্জন দে
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:২০
Share: Save:

দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে আম আদমি পার্টির ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি রয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান তথা পেনশন স্কিম তৈরির। সরকারি চাকরির পরে নিয়মিত পেনশন পান, এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে অতি সীমিত। অবসরের পর সঞ্চয় ফুরিয়ে অন্যের উপরে নির্ভরশীল, এমন বহু উদাহরণ আমাদের চার পাশেই। তাঁদের দুর্গতিও পরিচিত। এমন অবস্থায় যদি রাজনীতি তাঁদের পেনশন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলে, তবে তাকে স্বাগত জানানোই বিধেয়। হংকংয়ে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাইরে থেকেও ‘ওল্ড এজ অ্যালাওয়েন্স’ পাওয়া সম্ভব। স্থানীয় ভাবে একে বলা হয় ‘ফ্রুট মানি’— মূল উদ্দেশ্য, সত্তর বছর বা তার বেশি বয়সিদের হাতে কিছু নগদ টাকা তুলে দেওয়া। তবে তা অবশ্যই শর্ত-নির্ভর।

গত কয়েক দশকে ভারতে পেনশন পরিকাঠামোয় নানা সংস্কার করা হলেও মূল ভাবনা একই রয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ) তৈরি হওয়ার পর বিশেষ শ্রেণির ফান্ড চালু হয়েছে, তার দৌলতে সরকারি কর্মচারী না হলেও পেনশন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে— অবশ্য সে ক্ষেত্রে পেনশন ফান্ডে নিয়মিত টাকা জমাতে হবে। লগ্নির দায় গ্রাহকের, পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার থাকেন, ফলাফল বাজার-নির্ভর। বিভিন্ন বিমা সংস্থা যে ‘অ্যানুইটি প্ল্যান’ বিক্রি করে, সেগুলো কিন্তু এই রকম প্রকল্প নয়। তার নিজস্ব সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে, সে কথা মাথায় রেখে সচেতন ভাবে সেই প্রকল্প লগ্নি করা বা না-করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল। আরও একটি কথা মনে রাখা জরুরি— বাজারচলতি পেনশন প্রকল্পে যে পরিমাণ পেনশনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা নেহাতই ‘নমিনাল’ বা টাকার অঙ্কে। মূল্যস্ফীতির হিসাব তার মধ্যে ধরা থাকে না। যখন এক কেজি চালের দাম ৫০ টাকা, তখন ১০০০ টাকার মূল্য যত, চালের দাম ৫০০ টাকায় পৌঁছলে সেই ১০০০ টাকার মূল্য যে তার দশ ভাগের এক ভাগ, এ কথাটা মাথায় রাখলেই স্পষ্ট হবে, কেন ‘নমিনাল’ অঙ্কের প্রতিশ্রুতিকে আরও গভীর ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর অনেক দেশেই চালু হয়েছে ‘ডিফাইনড কনট্রিবিউশন’ প্রকল্প। এই পদ্ধতির কেন্দ্রে আছে শেয়ার বাজার— লগ্নিকারী প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সেখানে কোনও প্রকল্পে লগ্নি করেন, এবং সেখান থেকে আসা লাভের টাকা অবসরকালীন জীবনে আয় হিসাবে পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে অবসরকালীন জীবনে আর্থিক ভাবে সচ্ছল থাকার জন্য কর্মজীবনে সাশ্রয়ী হওয়া, নিয়মিত বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাতে অবসরকালীন তহবিল তৈরি হবে। কর্মজীবনে দাঁড়ি টানার পর সেই তহবিল হয়ে উঠবে আয়ের উৎস। অর্থাৎ, এই গোত্রের পেনশন স্কিমে থাকতে গেলে উপার্জনকারী গ্রাহক যে টাকা দেবেন নির্ধারিত পন্থা অনুযায়ী, তার উপর নির্ভর করবে কী ভাবে তিনি বাকি জীবন কাটাবেন। এর উল্টো দিকে আছে ডিফাইনড বেনিফিট প্রকল্প, যেখানে অবসরের পর কী হারে হাতে টাকা আসবে, তার একটি ধারণা আগে থেকে পাওয়া যায়। দেখা যাচ্ছে, গোটা দুনিয়াতেই ক্রমে ডিফাইনড বেনিফিটের তুলনায় ডিফাইনড কনট্রিবিউশন প্রকল্পের চাহিদা বাড়ছে। এতে এক দিকে গ্রাহকের লাভের সম্ভাবনা বেশি, অন্য দিকে ঝুঁকিও বেশি।

পেনশন-জনিত সম্পদের চরিত্র দীর্ঘমেয়াদি। এই তহবিলের টাকা পরিকাঠামোর উন্নয়ন খাতে ব্যবহার করা সম্ভব— দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে তা করা হয়। ভারতেও পেনশন ফান্ডে লগ্নি ক্রমশ বাড়ছে— গত পাঁচ বছরে পেনশন বাবদ যত টাকা দেওয়া হয়েছে, তহবিলে মোট লগ্নির পরিমাণ তার চেয়ে বেশি। গত নভেম্বরে পেনশন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাব বলছে, মোট লগ্নির সঙ্গে মোট প্রদত্ত পেনশনের ফারাক তহবিলে থাকা মোট সম্পদের ১৫.২%। এ ছাড়াও, পেনশন লগ্নিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে, নানা গোষ্ঠী যুক্ত হচ্ছে, মহিলারাও পিছপা নন।

এখন প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে ভবিষ্যতে কী হতে পারে? যেখানে সামাজিক সুরক্ষার এত অভাব, যেখানে বেশির ভাগ মানুষ স্থায়ী পেনশনের আওতায় আসেন না, যেখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বিপুল মানুষ কাজ করেন, সেখানে কী হবে? খেয়াল রাখতে হবে যে, আগামী দিনে ভারতের জনসংখ্যায় প্রবীণ নাগরিকদের অনুপাত ক্রমেই বাড়বে। তখন? একাধিক দেশে এই ধরনের প্রশ্ন আলোচনার কেন্দ্রে; বয়স্কদের পে-আউট নিয়েও অনেক তর্ক-বিতর্ক চলছে। মনে পড়বে ফ্রান্সের কথা, বছর দুই আগে যেখানে অবসরের বয়স বদলের নীতির জন্য ধর্মঘট হয়েছিল, সঙ্গে রাস্তা জুড়ে আন্দোলন। পেনশন পাবেন কেবল চৌষট্টি বছর বয়সি হলে, পুরনো নিয়মে বাষট্টিতে আর পাবেন না, এই চিন্তার তাড়না শেষ অবধি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে পৌঁছেছিল।

স্পষ্টতই, পেনশনের প্রশ্নটি রাজনৈতিক ভাবে অতি স্পর্শকাতর। তবে, ভারতের মতো দেশে, যেখানে এখন কর্মরত জনসংখ্যার সিংহভাগ কোনও রকম পেনশন প্রকল্পেরই আওতায় আসেন না, সেখানে রাজনৈতিক স্তরে যদি সর্বজনীন পেনশন তহবিল গঠনের কথা নিয়ে চর্চা শুরু হয়, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে লাভজনকই হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pension Scheme old age allowance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy