Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

সামাজিক মাধ্যম কি অসামাজিক করে তুলছে আমাদের?

এই ঘটনার ঠিক আগেই একই ধরনের বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছে জয়পুর। রাস্তায় রক্তাপ্লুত তিন জন, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেই হয়ত প্রাণগুলো বাঁচে, কিন্তু সে হুঁস কারও নেই, সকলেরই প্রাথমিক উদ্বেগ নিজস্বী অথবা ভিডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ঘটছে, তা যে বাস্তবেই ঘটছে আসলে, তা কি বুঝে উঠতে সময় লাগছে? 

সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ঘটছে, তা যে বাস্তবেই ঘটছে আসলে, তা কি বুঝে উঠতে সময় লাগছে? 

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

স্নায়ুগুলো কি এতই অসংবেদী হয়ে পড়ছে দিন দিন! না হলে প্রবণতায় এমন দুর্বোধ্য অসামাজিকতা আসার কথা নয়। মৃত্যু হানা দিচ্ছে, আমাদের চোখের সামনে থেকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে কোনও সহ-নাগরিককে, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সে সব দেখা বা দেখানোয় বুঁদ থাকছি, কিন্তু আশু কর্তব্য থেকে বিরত থাকছি।

আগরায় হতাশাগ্রস্ত তরুণ ফেসবুকে লাইভ হলেন, জানালেন জীবন সম্পর্কে তাঁর বিতৃষ্ণার কারণ, তার পরে আত্মহত্যা করলেন ওই লাইভেই। ২ হাজার ৭৫০ জন দেখছিলেন জীবন শেষ করে দেওয়ার সেই আখ্যান। এক জনও চেষ্টা করলেন না জীবনটা বাঁচানোর, কেউ এগিয়ে এলেন না, কেউ থামালেন না। অন্তত তার প্রমাণ মিলল না।

এই ঘটনার ঠিক আগেই একই ধরনের বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছে জয়পুর। রাস্তায় রক্তাপ্লুত তিন জন, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেই হয়ত প্রাণগুলো বাঁচে, কিন্তু সে হুঁস কারও নেই, সকলেরই প্রাথমিক উদ্বেগ নিজস্বী অথবা ভিডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে। রক্তাক্ত ভয়াবহতা চাক্ষুষ করার ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফলাও প্রচার জরুরি। আগেই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলে নিজস্বী বা ভিডিয়ো হবে কী ভাবে! হয়ত এমনই কোনও ভাবনা নিজেরই অজান্তে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কলকাতা লাগোয়া সোনারপুরও সাক্ষী হয়েছে একই রকম ঘটনার। ভিডিয়ো কলে যুগল, আত্মঘাতী হচ্ছে প্রেমিকা, প্রেমিক চেপে যেতে চাইছে গোটা ঘটনা।

সামাজিক মাধ্যম কি ক্রমশ আমাদের অসামাজিক করে তুলছে? ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভিডিয়ো কল— নানা রূপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম নাগালে আমাদের আজ। গোড়ায় সামাজিক মাধ্যমকে বাস্তব জীবনের অঙ্গ হিসেবে ধরা হত না। অবকাশ বা অবসর বা বিনোদন যাপনের ক্ষণে বাস্তবের বাইরের একটা জগতে উঁকি দেওয়া— এ ভাবেই দেখা হত সামাজিক মাধ্যমে আমাদের বিচরণকে। ক্রমে সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে এসেছে, সামাজিক মাধ্যম আর জীবনের বাস্তবতা মিলে-মিশে গিয়েছে। জীবনের বাস্তব পরিসরেও আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক সামাজিক মাধ্যম, কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রায় অপরিহার্য।

আরও পড়ুন
ফেসবুকে লাইভ আত্মহত্যা, ২৭৫০ দর্শকের কেউ খবর দিলেন না পুলিশে

সীমারেখার সেই বিলোপটা কি আমাদের অনেকের মাথাতেই থাকছে না? সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ঘটছে, তা যে বাস্তবেই ঘটছে আসলে, তা কি বুঝে উঠতে সময় লাগছে? নাকি বাস্তবকে এক অন্য আঙ্গিকে তথা এক শৌখিনতার মোড়কে পেশ করা সোশ্যাল মিডিয়ার মোহাবেশ এমনই অপার যে, আমরা আবিষ্ট হয়ে পড়ছি,দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হচ্ছি?

এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুব জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়া বেশ কাজের মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অগ্রগতির অন্যতম সূচকও বটে। কিন্তু ব্যবহারিক প্রয়োগটা জানা বা সারকথাটা বোঝাও অত্যন্ত জরুরি। শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রও তো অগ্রগতির সূচক। কিন্তু ব্যবহার না জানলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের পরিসরটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বুঝে নেওয়া তাই খুব দরকার। সম্পর্কের সমীকরণটা মগজের মধ্যে স্পষ্ট এঁকে নেওয়া দরকার এখনই। কিসে সাড়া দেব, কিসে হইচই করব না, সেটুকু অন্তত না বুঝতে পারলে অমিত শক্তিধর সোশ্যাল মিডিয়া আসন্ন দিনেও আমাদের অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE