Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Government

সতর্কতা জরুরি

ইতিমধ্যে বিশেষ ট্রেনগুলির জন্য যে ভিড় হইতে দেখা গিয়াছে, তাহা নিঃসন্দেহে আশঙ্কা ও আতঙ্কের কারণ।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০১:৩২
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের শিরা-ধমনীতে ফের রক্ত সঞ্চালন হইল, বলিলে অত্যুক্তি হইবে কি? সাত মাসেরও অধিক সময় বন্ধ থাকিবার পর আজ হইতে শুরু হইতেছে লোকাল ট্রেন। স্বাভাবিকের তুলনায় সংখ্যায় কম, যাত্রী-সংখ্যাও সীমিত রাখিবার কথা। কিন্তু, রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের নিকট এই সীমিত চলমানতার গুরুত্বও অসীম। কথাটি পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য, যেখানে গোটা রাজ্য কার্যত একটিমাত্র শহর— কলিকাতার— মুখাপেক্ষী। চাকুরি, ব্যবসা বা অন্য কোনও পথে জীবিকা অর্জনের জন্য বহু মানুষের পক্ষে কলিকাতায় না আসিয়া উপায় নাই। গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে লকডাউন প্রায় উঠিয়াই গিয়াছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও চালু হইয়াছে। ফলে, শহরতলি বা দূরতর অঞ্চল হইতে কলিকাতায় আসিবার প্রয়োজনও তীব্রতর হইয়াছে। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় এই জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের সীমা ছিল না। বহু বার বাস, অটো, টোটো পাল্টাইয়া, বহু টাকা খরচ করিয়া তাঁহাদের কলিকাতায় যাতায়াত করিতে হইতেছিল। সেই গণপরিবহণে সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখিবার কোনও সুযোগ মানুষের ছিল না, ফলে করোনাভাইরাস ঠেকাইবার যুক্তিতে লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখাও কতখানি কার্যকর হইতেছিল, সেই প্রশ্ন থাকিয়াই যায়। রাজ্যের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য এবং সার্বিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখিলে হয়তো লোকাল ট্রেন চালু করিবার সিদ্ধান্তটিই যুক্তিযুক্ত।

অতিমারি সংক্রমণের হার বাড়িবার আশঙ্কাটিকে উড়াইয়া দিবার প্রশ্ন নাই। সেই বিপদ অতি প্রত্যক্ষ, এবং যে ভাবে বিভিন্ন জায়গায় সংক্রমণের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রবাহ আরম্ভ হইয়াছে, তাহাতে বর্তমান স্থিতাবস্থায় নিশ্চিন্ত থাকিবার প্রশ্ন উঠে না। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে এখনও কোভিডের প্রকোপ সীমিত, তবে লোকাল ট্রেন চলিলে তাহা বাড়িবে কি না, সেই সংশয় রহিলই। কাজেই, সাবধান থাকিতে হইবে। কলিকাতায় মেট্রো রেল যে ভঙ্গিতে চলিতেছে, সেই মডেলটি অনুকরণীয়। কোনও অবস্থাতেই প্ল্যাটফর্মে বা ট্রেনের কামরাতে যাহাতে ভিড় না হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সত্য, মেট্রোর তুলনায় লোকাল ট্রেনে সেই কাজটি করা কঠিন। কিন্তু, অসম্ভব নহে। তাহার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা যেমন প্রয়োজন, তেমনই যাত্রীদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করিতে হইবে। মানুষ না চাহিলে প্রশাসনের পক্ষে যে কোনও কাজই কঠিন হয়। কাজেই, এই লড়াইয়ে যাত্রীদের প্রতিপক্ষ নহে, সহযোদ্ধা করিয়া তোলা প্রশাসনের অপরিহার্য দায়িত্ব।

ইতিমধ্যে বিশেষ ট্রেনগুলির জন্য যে ভিড় হইতে দেখা গিয়াছে, তাহা নিঃসন্দেহে আশঙ্কা ও আতঙ্কের কারণ। এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করিবার পথ কী হইতে পারে, তাহাই এখন প্রধান চিন্তা। প্ল্যাটফর্মে ও কামরায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যেমন রেল কর্তৃপক্ষের, তেমন রাজ্য প্রশাসনেরও। স্টেশনে ভিড় না হইতে দেওয়া, কামরায় দূরত্ববিধি বজায় রাখা ইত্যাদি দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষকে লইতে হইবে। অন্য দিকে, সীমার অধিক লোক যাহাতে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ না করিতে পারে, সেই দায়িত্বও কোনও পক্ষকে লইতে হইবে বইকি। স্টেশনের বাহিরে, ভিতরে লোক নিয়ন্ত্রণ করিবার ব্যবস্থা ভিন্ন শৃঙ্খলা রক্ষা অসম্ভব। মেট্রো রেলে যেমন ই-পাস দেখাইয়া তবেই স্টেশনে প্রবেশ করা যায়, লোকাল ট্রেনেও সেই ব্যবস্থা করিতে হইবে। আপাতত রেলে হকার বন্ধ রাখিবার সিদ্ধান্তটিও ঠিক। পরিস্থিতিটি যে স্বাভাবিক নহে, তাহা সবাইকেই বুঝিতে হইবে। তাহার জন্য কঠোরতার তুলনায় অনেক বেশি জরুরি সহৃদয়তা। বাস্তবিক, লোকাল ট্রেন চালু হইলেও কেন এখনও পূর্ববৎ স্বাভাবিকতায় ফিরিয়া যাওয়া সম্ভব নহে, তাহা বুঝাইতে পারিবার উপরই কিন্তু নূতন পর্বের লোকাল ট্রেনের সাফল্য নির্ভর করিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Government Local Train Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy