এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগে রেলের এক টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) গ্রেফতার করল পুলিশ। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের কর্মী ওই টিটিই-র নাম ব্রিজকিশোর যাদব। তিনি উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা স্টেশনে কর্মরত। অভিযোগ, সোমবার রাতে ওই স্টেশনের কাছে রেলের আবাসনে মোট চার জনে মিলে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করে।
অভিযুক্তদের মধ্যে ওই টিটিই ছাড়াও রয়েছে ওই স্টেশনেই কর্মরত রেলেরই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সঞ্জয় সিংহও। অভিযোগ উঠেছে রামনারায়ণ পাশোয়ান ও বিকাশ সিংহ নামে আরও দু’জনের বিরুদ্ধে। তারা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চোলাই মদের কারবারে জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে।
তবে মূল অভিযুক্ত ব্রিজকিশোর ছাড়া আর কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বিহারের কিসানগঞ্জ লাগোয়া ডালখোলা-বিহার সীমানা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই বধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। পলাতকদের খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুগত লাহিড়ি জানান, পুলিশের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করবেন তাঁরা। তিনি বলেন, “আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি। রেলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত থাকলে তাঁকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ি ডালখোলার কাছেই সোহারে। তাঁর স্বামী দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করেন। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। সোমবার ভোররাতে তিনি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে গিয়েছিলেন সেখানকার এক কবিরাজের কাছ থেকে মেয়ের জন্য ওষুধ আনতে। ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে ওই দিন ৩টা নাগাদ ফরাক্কা স্টেশন থেকে ডালখোলা যেতে নিউ জলপাইগুড়িগামী একটি ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনটি রাত ১০টা নাগাদ ডালখোলা পৌঁছয়। সেখান থেকে তাঁর বাড়ি বেশ দূর। অত রাতে তাই আর বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা না করে তিনি প্ল্যাটফর্মেই বসেছিলেন।
তাঁর অভিযোগ, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ টিকিট পরীক্ষক ব্রিজকিশোর এসে জানতে চায়, তিনি কোথায় যেতে চান। ওই মহিলার দাবি, সব কথা শুনে ব্রিজকিশোর তাঁকে জানায়, রাতে স্টেশনে থাকা যাবে না। সে ওই বধূকে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। মহিলা তাতে রাজি হলে ওই টিটিই প্রথমে তাঁকে স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ে নিয়ে যায়। ওই মহিলা জানিয়েছেন, তারপরে তাঁকে ‘আরও নিরাপদ’ সরকারি জায়গায় রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সেই টিটিই। তাতেও ওই বধূ রাজি হয়ে যান। এরপরই ব্রিজকুমার ওই মহিলাকে স্টেশনের কাছে রেলকর্মী সঞ্জয়ের আবাসনে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দেন। ওই এলাকার আশপাশের আবাসনগুলি ফাঁকা। এলাকাটিও নির্জন। রাত ১টা নাগাদ সঞ্জয়, রামনারায়ণ ও বিকাশকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিজকুমার ওই আবাসনে ঢুকে ওই বধূকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অত্যাচারের জেরে ওই মহিলা অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁর দাবি, “সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখি আবাসনের মেঝেতে পড়ে রয়েছি।” তারপরে বাইরে এসে স্থানীয় এক মহিলাকে সমস্ত বিষয় জানান।
ওই মহিলা তাঁকে জিআরপি-র কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু নির্যাতিতার দাবি, ঘটনাটি যেহেতু স্টেশনের বাইরে ঘটেছে তাই জিআরপি তাঁকে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলে। ওই মহিলা প্রতিবেশীদের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে ফের ডালখোলা জিআরপি দফতরে যান। সেই সময় ওই বধূ ব্রিজকুমার ও সঞ্জয়কে স্টেশনে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন বলেও দাবি করেছেন। জিআরপি-র কাছ থেকেই তখন অভিযুক্তদের নাম জানতে পারেন ওই বধূ। তবে অভিযোগ শেষ পর্যন্ত জিআরপি নেয়নি। জিআরপি-র কথাতেই ওই মহিলা করণদিঘি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ডালখোলা পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুভাষ গোস্বামীর অভিযোগ, “জিআরপি প্রথমেই ওই বধূর অভিযোগ নিলে বাকি তিন অভিযুক্ত পালাতে পারত না।”
রেলের ওই ডিভিশনের ডিআরএম অরুণকুমার শর্মা জানান, তাঁরা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন। পুলিশের সঙ্গে কথা বলেই পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। গত বছর চলন্ত ট্রেনে এক সেনা অফিসারের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে কর্মরত টিটিই নির্মল ওঝাকে পুলিশে গ্রেফতার করেছিল। তারপরে তিনি এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy