চাঁদড়ায় শিবির। —নিজস্ব চিত্র।
বাঘ এসেছিল। বাঁচানো যায়নি। চাঁদড়া রেঞ্জের বাগঘোরায় খুন হয় রয়্যাল বেঙ্গল। বন্যপ্রাণ রক্ষা কেন জরুরি, সেই চাঁদড়াতে সেটাই বুঝল খুদে পড়ুয়ারা।
বন্যপ্রাণ রক্ষা নিয়ে বুধবার চাঁদড়ায় এক সচেতনতা শিবিরের আয়োজন হয়। বেড়া বাগঘোরা, বক্সীবাঁধ, চিলগোড়া, সরগৌরিশোল, চুয়াশোল, পলাশিয়া প্রভৃতি এলাকার ছেলেমেয়েরা শিবিরে যোগ দেয়। সবমিলিয়ে প্রায় দু’শোজন ছাত্রছাত্রী ছিল।
জঙ্গলে যখন বাঘ ছিল, তখন বাঘের ‘ভয়’ দেখিয়েও শিকার ঠেকানো যায়নি। দফতরের পক্ষ থেকে জঙ্গলমহলে পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল। পোস্টারে দফতর জানিয়েছিল, যে সাইকেল, মোটর সাইকেল কিংবা গাড়ি করে জঙ্গলে শিকার করতে আসা হবে, সেই যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হবে। হাতেনাতে ধরা পড়লে শিকারির বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গলমহলে বন দফতরের এমন পোস্টার এই প্রথম। অবশ্য এমন পোস্টারও শিকার ঠেকাতে পারেনি। জেলার এক বনকর্মী মানছেন, “অনেকে গাড়ি ভাড়া করে শিকার করতে এসেছেন। দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। জঙ্গলের ধারে যানবাহন রেখে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকেছেন।” তাঁর কথায়, “আসলে অভাবটা সচেতনতারই। দফতর চেয়েছিল, শিকারিদের সচেতন করতে। তবে সর্বত্র সমান সচেতনতা গড়ে তোলা যায়নি।”
ঝরাপাতার জঙ্গলে আগুন ধরানো জঙ্গলমহলের চেনা ছবি। চোরাশিকারি ও কাঠপাচারকারীরা জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে বাঘ, এই আশঙ্কায় অনেকে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ। জঙ্গল আগুনের গ্রাসে চলে গেলে শুধু বাঘ, হাতি, হরিণ কেন, যে কোনও জন্তুই আতঙ্কে থাকবে বলে জানাচ্ছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা। এ দিনের শিবির থেকেও সেই সচেতনতামূলক বার্তাই দেওয়া হয়। শিবিরে উপস্থিত পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা পড়ুয়াদের জানান, বনভূমি কমলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। জীবজন্তু, পশুপাখি-সহ অন্য প্রাণীরও জীবন সংশয় হয়। তাই সবদিক থেকেই পরিবেশ বাঁচানো এবং বন্যপ্রাণ রক্ষা করা জরুরি।
এক বনকর্মীর কথায়, “যে জঙ্গলে মানুষের অবাধ যাতায়াত থাকবে, সেই জঙ্গলে বাঘ কখনও থাকবে না। শুধু বাঘ কেন, কোনও জন্তুই থাকবে না।”
মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “বন্যপ্রাণ রক্ষা করা নিয়ে এক সচেতনতা শিবির হয়েছে। চাঁদড়ায় এই শিবিরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই ছিল।” মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “এরাই তো আগামী প্রজন্ম। একজন সচেতন হলে সে আরও একশোজনকে সচেতন করতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy