Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ইলামবাজারে সুব্রত, বোঝালেন অভিযুক্তের পাশেই দল

বীরভূমে বিজেপি সমর্থক রহিম শেখের খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জাফারুল ইসলামকেই সোমবার দিনভর দেখা গেল দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর পাশে! পাড়ুই-কাণ্ডের মতোই এ ক্ষেত্রেও দল যে অভিযুক্ত-পক্ষের পাশেই থাকছে, কার্যত তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিউড়ি হাসপাতালে গিয়ে ইলামবাজারের গণ্ডগোলে জখম এক তৃণমূল কমর্ীর্কে সব সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

ইলামবাজারে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় (বাঁ দিক থেকে) অনুব্রত মণ্ডল, জাফারুল ইসলাম এবং সুব্রত বক্সী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

ইলামবাজারে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় (বাঁ দিক থেকে) অনুব্রত মণ্ডল, জাফারুল ইসলাম এবং সুব্রত বক্সী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইলামবাজার ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

বীরভূমে বিজেপি সমর্থক রহিম শেখের খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জাফারুল ইসলামকেই সোমবার দিনভর দেখা গেল দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর পাশে! পাড়ুই-কাণ্ডের মতোই এ ক্ষেত্রেও দল যে অভিযুক্ত-পক্ষের পাশেই থাকছে, কার্যত তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিউড়ি হাসপাতালে গিয়ে ইলামবাজারের গণ্ডগোলে জখম এক তৃণমূল কমর্ীর্কে সব সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। সুব্রতবাবুর দাবি, “ইলামবাজারের ঘটনাটি একটি পূর্ব-পরিকল্পিত চক্রান্ত। কিছু রাজনৈতিক দল বাংলায় বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য তাতে এ ভাবে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে দিচ্ছে।”

ঘটনার পরে রবিবার ইলামবাজার ঘুরে গিয়েছে বিজেপি-র প্রতিনিধদল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ দিন সকালে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে বীরভূমে পৌঁছন সুব্রতবাবু। এলাকাটি সংখ্যালঘু-প্রধান বলেই হয়তো প্রতিনিধিদলে দেখা গিয়েছে দলের সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান হাজি নুরুল ইসলামকে। বোলপুর সার্কিট হাউসে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুলের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বৈঠকে বসেন। পরে সুব্রতবাবু অভিযোগ করেন, বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের দলের কমী বাবলু শেখকে কিছু দুষ্কৃতী ঘিরে ধরে। ওই দুষ্কৃতীরা এখন কিছু রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে রয়েছে। সুব্রতবাবুর কথায়, “গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ বাধা তো স্বাভাবিক!” সেই সংঘর্ষের জেরেই খুনের ঘটনা বলে তাঁর দাবি।

সোমবার সিউড়ি সদর হাসপাতালে জখম দলীয় কর্মীকে দেখে গেলেন প্রতিনিধি দলের
অন্যতম সদস্য তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। আশ্বাস দিলেন তাঁর পাশে থাকার।

ঘটনা নিয়ে দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যেও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, বিজেপি-র দল ঘুরে যাওয়ার পরেই সুব্রতবাবুদের ইলামবাজার পৌঁছে যাওয়া। এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপি হাওয়ার মধ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে সংখ্যালঘুদের বড় অংশই ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। তবু কিছু জায়গায় সব সংখ্যালঘু ভোট শাসক দল পায়নি। কোথাও তা বাম বা কংগ্রেসের পক্ষে যায়। ইলামবাজারের এই এলাকায় ভোট পেয়েছে বিজেপি। ভোটের পরে এক সংখ্যালঘু সমর্থক খুনের ঘটনা নিয়ে বিজেপি যে ভাবে ময়দানে নেমেছে, তাতে বিপদের আঁচ পেয়েই সুব্রতবাবুকে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় দৌড়তে হয়েছে এমনই মনে করছে বিজেপি-র একাংশ। দলের বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “ওখানে একাধিক বুথে আমাদের দলের প্রার্থী এগিয়েছিলেন। সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় এই ভোট পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে তৃণমূল হামলা করছে!” সুব্রতবাবু বলেন, “ইলামবাজার এলাকার মানুষ যাতে কোনও রকমের প্ররোচনায় পা না দেন, ভয়ভীতি কাটিয়ে গ্রামে থাকতে পারেন, সেই বার্তাই দিতে এসেছি।” মুখ্যমন্ত্রীর আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পরই রাজ্যের মানুষ অভিযোগ জানাতে সাহস পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।

বিজেপি-ও ইলামবাজারের ঘটনা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে (যিনি ইলামবাজারে গিয়েছিলেন রবিবার) রাজ্য বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের আইজি (সদর) অরুণ কুমার শর্মার কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানান। শমীকবাবুর বক্তব্য, “আইজি পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।” ইলামবাজার-সহ রাজ্যে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করার কথা বিজেপি-র সংখ্যালঘু মোর্চার। এই পদক্ষেপেই স্পষ্ট, সংখ্যালঘু মন পাওয়ার চেষ্টায় কসুর করছে না বিজেপি।

ইলামবাজারে দলীয় কার্যালয়ের পাশে একটি প্রতিবাদ সভা করল তৃণমূল।
বিকেলে সিউড়ি থেকে ফিরে তাতে যোগ দিলেন সুব্রত বক্সীরা। —নিজস্ব চিত্র।

সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূল কর্মী বাবলু অবশ্য নিজেই রহিম-খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত। ঘটনাস্থল ইলামবাজারের কুনুরে তাঁর বাড়ি নয়। তিনি খয়রাশোলের বাসিন্দা। ফলে, তৃণমূলের দাবি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দুধকুমারের দাবি, “সুব্রত বক্সীর কথাতেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, বহিরাগত দুষ্কৃতী আনিয়ে তৃণমূল কুনুরের বিজেপি সমর্থকদের উপরে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছিল!” রবিবারই বাবলুর স্ত্রী এলাকার ৪৩ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে। বোলপুর আদালতের বিচারক এ দিন ধৃতদের এক দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতবাবু এ দিন দাবি করেছেন, “ঘটনার দিন জাফারুল সরকারি কাজে সাঁইথিয়ায় ছিলেন।” অভিযুক্ত জাফারুল যে আগাম জামিন নেবেন না, তা-ও তিনি নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দাবি, “আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশ কেন ধরছে না, তা পুলিশকেই জিজ্ঞাসা করুন!” বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার বক্তব্য, “পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে।” সিউড়ি থেকে বেরিয়ে ইলামবাজারে এক সভায় সুব্রতবাবু বলেছেন, “যারা অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন, তাদের আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি! পুলিশকেও বলেছি, সবার অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।” অন্যত্রও বিজেপি-র উপরে হামলার অভিযোগ অব্যাহত। বেলদা গ্রামীণ থানার কান্তাবনী গ্রামে কার্তিক রক্ষিত নামে এক বিজেপি কর্মী তৃণমূলের হাতে প্রহৃত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। হরিপালের পশ্চিম গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের গজা এলাকাতেও নির্মল মুর্মু নামে এক বিজেপি সমর্থক প্রহৃত হন। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE