Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Drunt Motorman

অপ্রকৃতিস্থ চালক, স্টেশন পেরিয়ে ছুটল ট্রেন

কমবেশি চার কিলোমিটার এগিয়ে ফুলিয়া এবং শান্তিপুরের মাঝখানে বাথনা কৃত্তিবাস হল্ট স্টেশনে গিয়ে ট্রেন থামল। থামল তো থামলই, আর নড়াচড়া নেই।

চালককে ঘিরে ক্ষোভ ফুলিয়া স্টেশনে। বুধবার।

চালককে ঘিরে ক্ষোভ ফুলিয়া স্টেশনে। বুধবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৩০
Share: Save:

পৌষ সংক্রান্তির রাত।

ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা ব্যস্ত সময়ের থেকে কিছুটা কম। রুটিরুজির কারণে নিত্য যাতায়াত করা যাত্রীরা অবশ্য রয়েছেন ট্রেনে। রাত ১২টা নাগাদ ট্রেন ফুলিয়া স্টেশনে ঢোকার কথা। যাত্রীরা নামবেন বলে তৈরি হচ্ছেন।

কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ফুলিয়া স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াল না, ছুটে চলল। তবে বেশি দূর নয়, কমবেশি চার কিলোমিটার এগিয়ে ফুলিয়া এবং শান্তিপুরের মাঝখানে বাথনা কৃত্তিবাস হল্ট স্টেশনে গিয়ে ট্রেন থামল। থামল তো থামলই, আর নড়াচড়া নেই। বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরে উৎসুক যাত্রীরা চালকের কামরায় গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, চালক তখন প্রকৃতিস্থ নেই। ট্রেনের গার্ডকে খবর দেন তাঁরা। গার্ড খবর দেন রেলের আধিকারিকদের। রেলপুলিশ ও রেল রক্ষী বাহিনী যায়। শীতের রাতে এই বিপত্তিতে যাত্রীদের অনেকে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে শান্তিপুর থেকে অন্য একটি ট্রেন এনে যাত্রীদের ফুলিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে।

বুধবার প্রায় মাঝরাতে রানাঘাট-শান্তিপুর শাখার এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই চালকের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ৯টা ৫০ মিনিটের আপ শান্তিপুর লোকাল নির্ধারিত সময়েই শিয়ালদহ থেকে ছেড়েছিল। ওই ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন ফুলিয়ার সঞ্জিত সাধুখাঁ, জীবন ঘোষেরা। তাঁরা বলেন, “আগে থেকেই চালক ঠিকঠাক চালাচ্ছিলেন না। অনেক সময়েই প্ল্যাটফর্ম থেকে এগিয়ে বা পিছিয়ে ট্রেন দাঁড়াচ্ছিল।’’ ট্রেন-যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, পায়রাডাঙা স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে গিয়েও ফিরে আসে ট্রেনটি। আবার কালীনারায়ণপুর স্টেশনের আগে চূর্ণী নদীর সেতু অতিক্রম করে তীব্রগতিতে ছুটতে থাকা ট্রেনটি আচমকা ব্রেক কষে। তার পরে ফুলিয়ায় পৌঁছে ওই কাণ্ড। শান্তিপুর থেকে পাঠানো ট্রেনে বাড়ি ফিরতে প্রায় ভোর হয়ে যায় যাত্রীদের। সঞ্জিতেরা বলেন, ‘‘রোজ এই ট্রেনে আমরা ফিরি। কিন্তু এমন ঘটলে যাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়?”

অনেকেরই মনে পড়ছে, ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফুলিয়া স্টেশনেই দু’টি লোকাল ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছিল । জখম হন বেশ কয়েক জন। ২০১৪ সালের ২০ অগস্ট দুপুরেও আপ শান্তিপুর লোকাল ফুলিয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তা নিয়ে সেই সময়ে যাত্রী বিক্ষোভও হয়। বৃহস্পতিবার শান্তিপুর শাখার রেলযাত্রী সমিতির সভাপতি নিখিল মজুমদার বলেন, “এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”

পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন আপ ও ডাউন মিলিয়ে ৪০টি ট্রেন ফুলিয়া স্টেশন হয়ে চলাচল করে। এ দিন যে ট্রেন নিয়ে বিভ্রাট, তার পরেও একটি আপ ট্রেন ছিল। তবে কোনও যাত্রী এই ঘটনায় রেলের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাননি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, “ব্রিদ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে চালক ও গার্ডের পরীক্ষা হয়েছে। মদ্যপানের প্রমাণ মেলেনি। দু’জনের সঙ্গেই কথা বলা হচ্ছে। কী কারণে এমন ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Drunt Motorman Santipur Local Fulia Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy