কবিতাসমগ্র
শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
৫০০.০০
সিগনেট প্রেস
১৯৫৪-য় বিদায় নিয়েছেন— ‘রূপ কেন নির্জন দেবদারু-দ্বীপের নক্ষত্রের ছায়া চেনে না’র কবি জীবনানন্দ দাশ। তার ঠিক আগের বছরে প্রকাশ পেয়েছে তারুণ্যের আগুনে ঝলসে ওঠা ‘কৃত্তিবাস পত্রিকা’। বলা যেতে পারে প্রায় সূচনালগ্ন থেকেই শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় উঠে বসেছিলেন র্যাঁবো লিখিত প্রবাদপ্রতিম ‘লে ব্যাতো ইভ্র’ বা সেই ‘মাতাল তরণী’তে। তিনি অতীত ও মূল ‘কৃত্তিবাস’-এর এখনও জীবিত দু’জনের অন্যতম প্রতিনিধি, এমনকি পঞ্চাশের দশকের কবিকুলেরও অন্যতম জীবিত প্রতিনিধি (সঙ্গের ছবি)। তাঁর ৭৩২ পাতার কবিতাসমগ্র-তে অগ্রন্থিত কবিতা-সহ মোট তেরোটি বইয়ের কবিতা রয়েছে। সোনার হরিণ দিয়ে যাত্রা শুরু, আর একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে-তে কাব্যগ্রন্থ সম্পূর্ণ হয়েছে।
পঞ্চাশের কবিদের জীবনযাপন-কবিতাযাপন-কবিতা সবটাই পরবর্তী কালে মিথ হয়ে গিয়েছে। যা আদৌ ঘটেনি এমন অনেক গল্পও এঁদের সম্পর্কে এখনও নানা আড্ডায় ঘোরে ফেরে। ‘নমিতা মুখোপাধ্যায়’ ছদ্মনামে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন শরৎকুমার। কথিত আছে, উত্তর কলকাতা নিবাসী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক তলার ছোট্ট ঘরে (পরিবারের সদস্যরা থাকতেন উপরে) এক দিন হাজির হন শরৎকুমার। জানিয়ে দেন, তিনিই সেই ‘নমিতা মুখোপাধ্যায়’। এর পরে তারাপদ রায়ের নেতৃত্বে মুহূর্তে তাঁর পরণের কোট ইত্যাদি খুলে নিয়ে তাঁকে আড্ডায় আসীন করা হয়। বাকিটা তো ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসেরই অংশভাক হিসেবে শরৎকুমার লিখেছিলেন— ‘রাত বারোটার পর কলকাতা শাসন করে চারজন যুবক/ চৌরঙ্গী ভবানীপুর থেকে শ্যামবাজার বদ্বীপ’— এও আজ কিংবদন্তি। এমনকি আছি সংযত, প্রস্তুত-এ ‘বিরাজমোহন’ বা ‘বঙ্গভূম’— সে দিনের, অর্থাৎ ১৯৯৩-পরবর্তী বাংলা কবিতায় প্রবল আলোড়ন ফেলেছিল। যেমন ফেলেছিল ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বেহুলার প্রতি অর্ফিয়ুস’ কবিতাটি। শরৎকুমারের একেবারে প্রথম দিকের কবিতা ‘শান্তিনিকেতনে সন্ধ্যা’ পড়তে পড়তে এক ধরনের অকারণ ভালবাসা জন্মায়। রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘অকারণ পুলকে আঁখি ভাসে জলে...’। ১৩৭২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত আহত ভ্রূবিলাস-এর ‘খুকী সিরিজ’ সে দিনের বাংলা কবিতার পাঠিকাদের তো বটেই, পাঠকদেরও ভয়ানক চঞ্চল করেছিল। ‘খুকী তোমার নাম কী? চৈতালী।/ আমার নাম শরৎ— মনে ধরে?/ তুমি ছুটছ দিচ্ছ করতালি/ পাল্লা দেবো? কোমর ব্যথা করে!’ কবিতার নাম ‘কাঠবেড়ালি’। আবার টুলু বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ-তেও তিনি অনন্য। ‘টুলু ওর নাম নয়, আমি ওকে টুলু বলে ডাকি/ দূর থেকে,...’। ছন্দ-ছন্দহীনতায় শরৎকুমার বরাবরই স্বতন্ত্র। দু’মলাটের মধ্যে তাঁকে পাওয়া এক মস্ত উপহার।
ধর্ম/ একটি চিন্তাশীল প্রকল্প
সম্পাদক: রণজিৎ অধিকারী
২৫০.০০
পূর্ব (পূর্ব মেদিনীপুর)
‘‘শুভবুদ্ধির শক্তি ঠিক এখানেই, তার উদ্যম প্রকট নয়, কিন্তু ক্লান্তিহীন, মানুষের আত্মসমালোচনা ও আত্মসংশোধনের প্রয়োজনবোধ সে জাগিয়ে রাখতে পারে। পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলি, তা সে ধর্মের হোক অথবা সমাজগঠনের, আত্মসংশোধনের এই নম্রতার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে...।’’ লিখছেন গৌতম বসু, তাঁর ‘অধর্ম’ প্রবন্ধে। ‘পূর্ব’ পত্রিকার আলোচ্য সংখ্যাটির বিষয় ‘ধর্ম।’ সম্পাদকের উদ্বেগ, আজকের ‘রাজনীতির দূষণ’ সরিয়ে যুক্তিনিষ্ঠ ধর্মকথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হয়তো ব্যর্থ হতেন বাংলার রেনেসাঁসের তারকারাও। অহিংস, ক্রোধহীন, নির্লোভ, অপরকে গ্রহণে সক্ষম মানুষ হয়ে ওঠার যাত্রা চলে একই সঙ্গে অন্তরে-বাহিরে। শঙ্খ ঘোষ বলছেন, অপরিচয় থেকে অজ্ঞানতা, তা থেকে সন্দেহ, তা থেকে বিদ্বেষ, আর তারপর মানসিক হিংসা, এ ভাবে দাঙ্গার জমি প্রস্তুত হয়। দাঙ্গার পূর্বসূরি ‘মানসিক দাঙ্গা’-কে যদি আটকাতে হয়, তবে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরিচয় বাড়াতে হবে। মুকুন্দদাস-প্রমুখ বেশ কিছু গীতিকার, পালাকার কী ভাবে বাংলার যাত্রাপালায় হিন্দু-মুসলিমের দূরত্ব ঘুচিয়ে ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়েছিলেন, একটি দীর্ঘ রচনায় তার ভারি সুন্দর বিবরণ দিয়েছেন প্রভাতকুমার দাস।
সুনীতি, আধ্যাত্মিকতা, দ্বিজাতিতত্ত্ব, হিন্দুত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিকতা, নারীবাদ এমন নানা প্রসঙ্গে ধর্মের আলোচনা তিরিশটিরও বেশি প্রবন্ধে। অনেকগুলি রচনা পুনঃপ্রকাশিত, তাতে সঙ্কলনটি সমৃদ্ধই হয়েছে। ধর্মের চিন্তা তো কেবল অন্যের প্রতি কর্তব্যের চিন্তা নয়, আত্মানুসন্ধানও বটে। হিরণ মিত্র প্রশ্ন করছেন, ‘‘শিল্পের বা চিত্রের ধর্ম কী? মঞ্চের ধর্ম কী, ভাস্কর্যের ধর্ম কী?’ নিজের কাজ ও বোধের মধ্যে তার উত্তর পেয়েছেন তিনি। ‘ধরা যাক, নাচতে নাচতে আঁকা। আপাত হাস্যকর, দৃশ্যত মজাদার মনে হবে, কিন্তু মন ও শরীর তার দুই অবস্থানে এক অপূর্ব-মিলন ঘটালে। মনঃসংযোগ গভীর, শরীর নেচে চলেছে।’’ রঙে-রেখায় তার প্রকাশ ঘটল মঞ্চে ৩০ ফিট ক্যানভাসে। ‘‘অর্থাৎ সেই সচলতা, রঙ রেখা, সঙ্গীত তুলি ক্যানভাস এক সূত্রে বাঁধা পড়া, এক অবস্থানে চলে যাওয়া। এই এক সূত্রে চলে যাওয়াটাই এখানে তার ধর্ম।’’ জাতিধর্ম, সম্প্রদায়-চেতনা কমিয়ে আনতে হবে, বলছেন হোসেনুর রহমান। স্বাধীন ভারতবর্ষে সংবিধানের শাসন মেনে আমরা ‘কম হিন্দু, কম মুসলমান’ হয়ে উঠছি। ‘‘এর অর্থ ধর্মত্যাগ করা নয়, ধর্মের ঐশ্বর্যকে ব্যাপক করে তোলা।’’ সঙ্কলনে নাটক, গল্প, কবিতা আছে, সুধীর চক্রবর্তীর সংগ্রহের লোকায়ত গানও রেখেছেন সম্পাদক, ধর্ম যেখানে তর্কজাল ছিঁড়ে সহজ মানবতায় মু্ক্তি পেয়েছে। ‘মনেতে মথুরা আছে/ মক্কা কাবার ঘর/ তারই মাঝে বিরাজিছে/ মানুষ সুন্দর’ (একলিমুর রাজা চৌধুরী)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy