Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

ইতিহাসের সত্যসন্ধান

মীর কাসিম বইটির নতুন সংস্করণে সম্পাদক শেখর ভৌমিক এই বিতর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আলোচনার সঙ্গে সমসাময়িক নানা মতের যথাযথ বিচার করেছেন।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৭:০২
Share: Save:

মীর কাসিম
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
২৫০.০০
কল্লোল

প্রশ্নটা মৌলিক— কবির কল্পনা না ইতিহাসের সত্য— সৃজনে অগ্রাধিকার কার? কবি যা রচিবে তাই কি সত্য, নাকি স্রষ্টাকে ইতিহাসের সত্যের কাছে নতজানু হতেই হবে? উনিশ শতকের শেষে আর বিশ শতকের গোড়ায় বাংলায় জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার আবহে এই প্রশ্নটি খুব বড় হয়ে উঠেছিল। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ছিলেন ইতিহাসের সত্য-প্রতিষ্ঠার একনিষ্ঠ সাধক— সিরাজদ্দৌলা (১৩০৪ বঙ্গাব্দ) ও মীর কাসিম (১৩১২ ব.) বই দুটিতে তিনি তথ্যভিত্তিতে এই দুই নবাব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিতে সচেষ্ট হন। এমনকী চন্দ্রশেখর উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র মিরকাশিম ও তকি খাঁর চরিত্রচিত্রণে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছেন বলে তীব্র ভাষায় অভিযোগ করতেও দ্বিধা করেননি অক্ষয়কুমার। এই নিয়ে পত্রপত্রিকায় যে বিতণ্ডা শুরু হয়, তাতে রবীন্দ্রনাথ অক্ষয়কুমারের সমর্থনে কলম ধরেন, তবে তিনি এ কথাও বলেন যে ইতিহাসের রসটুকুর প্রতিই ঔপন্যাসিকের লোভ, তার সত্যের প্রতি তাঁর কোনও খাতির নেই। মীর কাসিম বইটির নতুন সংস্করণে সম্পাদক শেখর ভৌমিক এই বিতর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আলোচনার সঙ্গে সমসাময়িক নানা মতের যথাযথ বিচার করেছেন। পরিশিষ্টে যোগ করেছেন ‘ভারতী’ পত্রিকায় (বৈশাখ ১৩০৪) প্রকাশিত ‘মীরকাসিম’ নিবন্ধ, যেখানে বঙ্কিমের সমালোচনা করেন অক্ষয়কুমার এবং গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় তার অনেকটা বর্জন করেছিলেন তিনি; এবং ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘মীরকাসিমের শেষজীবন’।

আনন্দধারা
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
৫০০.০০
সপ্তর্ষি প্রকাশন

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় লেখক হতে চেয়েছিলেন। তাঁর একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল ‘দেশ’ পত্রিকায়। ‘আনন্দধারা’-র পাতায় সেই লেখক হেমন্তের পরিচয়। ঠিক তাঁর গানের মতো। ঋজু, জটিলতাহীন, আন্তরিক, সোজা মনের সঙ্গে কথা বলতে পারে, এমন লেখা। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বইটি। আত্মজীবনী বলা যাবে না, এত বড় জীবনের গল্প ৮৮ পাতার পরিসরে বলা অসম্ভব। কয়েকটা খণ্ডচিত্র বলা যেতে পারে। হাতা গোটানো শার্ট আর ধুতিতে যে চলমান সঙ্গীত বঙ্গজীবনের অঙ্গ প্রায় পৌনে শতাব্দীকাল, তিনি অকপটে বলেছেন নিজের ছোটবেলার দারিদ্রের কথা; প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর লোকের বাড়িতে গিয়ে প্রায় সেধে গান শোনানোর কথা; গায়ক হয়ে ওঠার পথে কত মানুষের অযাচিত সাহায্য পেয়েছেন, সে কথা। অপ্রাপ্তির কথাও বলেছেন, কিন্তু আশ্চর্য মালিন্যহীন ভঙ্গিতে। বম্বেতে যখন সুরকার হিসেবে তিনি খ্যাতির শীর্ষে, তখন অন্য সঙ্গীত পরিচালকরা তাঁকে আর গায়ক হিসেবে ডাকতেন না। কেন, কারণটা সর্বজনবিদিত— ঈর্ষা। অথচ, হেমন্ত লিখেছেন, তাঁরা হয়তো ভাবতেন তিনি তাঁদের সুরের ওপর নিজের মত চাপিয়ে দেবেন। কী ভাবে সবাই সফল মানুষের সব কাজেই প্রবল সমর্থন জানায়, আর নতুনদের খুঁত ধরে, সে কথাও লিখেছেন হেমন্ত। কিন্তু, সেই মালিন্যহীন ভঙ্গিতে। সম্পাদক অভীক চট্টোপাধ্যায় এই সঙ্গে সংযোজন করেছেন হেমন্তের সঙ্গীতজীবন সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বহু খুঁটিনাটি তথ্য। শতবর্ষে বইটি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়ে সপ্তর্ষি প্রকাশন উপকার করল। তবে, বেশ সাধারণ মানের কাগজে ছাপা আড়াইশো পাতারও কম দৈর্ঘ্যের বইয়ের দাম পাঁচশো টাকা কেন?

লাইফ ইন মেটাফরস/ পোর্ট্রেটস অব গিরিশ কাসারাভল্লি
ও পি শ্রীবাস্তব
৩৯৫.০০
রিলিজ়ম ফিল্মস

গিরিশ প্রথম যখন ইউ আর অনন্তমূর্তির কাছে যান তাঁর গল্প থেকে ‘ঘাটশ্রাদ্ধ’ ছবি করার আর্জি নিয়ে, গিরিশকে তখন চিনতেন না তিনি, কিন্তু দেখে মনে হয়েছিল ‘‘সে এমন একজন কেউ যে ভিন্ন ভাবে ভাবতে পারে, ফিল্মস্কুলে গিয়ে যে ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখেছে।’’ সঙ্গে এমন মন্তব্যও করেছেন অনন্তমূর্তি যে, ‘ঘাটশ্রাদ্ধ’ তেমনই একটি ছবি যা তাঁর গল্পটিকে আরও ঋদ্ধ করেছে, এমন কিছু আছে ছবিটিতে যা তাঁর গল্পে ছিল না... বলতে-বলতে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন: ‘‘সো গিরিশ হ্যাজ় অলওয়েজ় হ্যাড দ্য পোটেনশিয়াল টু বি আ রাইটার।’’ মানুষের প্রতিদিনের গল্প বলেন গিরিশ তাঁর ছবিতে, তাঁদের অনতিতুচ্ছ জীবনযাপনের গল্প, মনে হয়েছে অনন্তমূর্তির। আর আদুর গোপালকৃষ্ণন মনে করেন, এই ভারতীয়তাই ফিল্মের নিঃসঙ্গ শিল্পপরিক্রমায় তাঁকে আর গিরিশকে পরস্পরের সঙ্গী করে তুলেছে। এ ভাবেই শ্যাম বেনেগাল, অরুণ খোপকার, জন ডব্লিউ হুড, মৈথিলী রাও, এন মনু চক্রবর্তী, দীপ্তি নাভাল, পি শেষাদ্রি, রাডা সেজ়িক, বিদ্যার্থী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লিখেছেন পুঁজিনির্ভর মূলধারার ছবির সঙ্গে অবিরত পাঞ্জা লড়ে যাওয়া কন্নড় চলচ্চিত্রকার গিরিশ কাসারাভল্লির সমান্তরাল সিনেমা নিয়ে। লিখেছেন গিরিশের আত্মীয়-বন্ধুরাও, আছে তাঁর ব্যক্তিজীবন কর্মজীবনের তথ্যনথিও। নিজের ভূমিকা-প্রবন্ধ সহ পরিপাটি মুদ্রণে, সুসম্পাদনায় এই সংকলন-গ্রন্থটিকে সাজালেও ও পি শ্রীবাস্তব এ-বইয়ে এমন ভাবে নিজের নাম ব্যবহার করেছেন, মনে হচ্ছে যেন তিনিই এ-বইয়ের রচয়িতা— সাঙ্ঘাতিক ত্রুটি!

অন্য বিষয়গুলি:

Review Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy