নির্বাচিত কবিতা
রতন থিয়াম
৩০০.০০
কলিকাতা লেটারপ্রেস
রতন থিয়াম। আন্তর্জাতিক নাট্যজগৎ তাঁকে এক কথায় চেনে। যত নাট্যচর্চাই করুন না কেন তাঁর মধ্যে এক জন কবির বসবাস রয়েছে। সুতরাং রতন থিয়াম কবিতা লিখতে পারেন ও লিখেছেনও— নির্বাচিত কবিতা, অনুবাদ প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য। নিজের কথা বলতে গিয়ে অবশ্য পাঠককে জানিয়েছেন ‘‘... কবিতা বলে ভেবে লেখা হয়নি অনেকদিন।’’ প্রবীরকুমার ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে মণিপুরী ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করার জন্য। যদিও এ কথা কবিমাত্র এবং প্রাজ্ঞজনেও বলেন যে— অনুবাদ কবিতা বলে কিছু হয় না। মূল ভাষার কাছে যেতে না পারলে কোনও কথাবার্তারই দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে প্রবীরবাবু সেই ভয়ানক সমুদ্রযাত্রারই চেষ্টা করেছেন। সূচনায় জানিয়েছেন— ‘‘মণিপুরী কৌম সংস্কৃতিকে ধরতে গিয়ে কিছু মণিপুরী শব্দের টীকাটীপ্পনীর প্রয়োজন অনস্বীকার্য।’’ ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যে রবীন্দ্রনাথ যখন অর্জুনকে নিয়ে গিয়েছিলেন মণিপুরে, তখন স্বয়ং অর্জুনের মুখ দিয়ে বলেছিলেন— ‘‘মণিপুর নৃপদুহিতা তোমারে চিনি তপস্বিনী’’। প্রায় দু’হাজার বছরেরও বেশি এক ‘মণিপুরী সভ্যতা’, যাকে ‘ও তো নর্থ ইস্ট’ বলে আমরা অবজ্ঞা, অবহেলা করে এসেছি, সেই সুপ্রাচীন মণিপুর জড়িয়ে রয়েছে বাংলার সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে। যাকে অনেকটাই সম্মান ও মাত্রা দিলেন প্রবীরবাবু। এত কথার মধ্যেও যেন কোথাও বেজে ওঠে রতন থিয়ামের সুর— ‘‘তবু/ এ সবের মধ্যেও/ দাঁড়িয়ে থেক গো বিধর্মী বনদেবী মাগো!’’ বোঝা যায় তিনি এ প্রকৃতি রক্ষার কথা ভাবেন গাছের কাছে গিয়ে। এ কাব্যগ্রন্থের সমস্ত কবিতার নাম— ‘মণিপুরী’ ভাষায়। ‘আতোপ্মা মালেম’ কবিতায় রতন থিয়াম বলছেন— ‘‘ভালো কিছু ভাবতে না পারা মনটার জন্য/ নিদেন একবার ওঝা ডেকে ঝাড়িয়ে নিলে হয় না’’। ৯৭ পৃষ্ঠায় ‘যুমাসিবু কনা কনা লৈবগে’ কবিতাটা চমক দেয়। এর বাংলা যত দূর সম্ভব ‘বাড়ি বাড়ি কে কে আছ?’ এমনই কয়েকটা লাইন— ‘‘খুব কাছেই বন্দুকের শব্দ শুনেছিলাম/ নারী পুরুষের চিৎকার কান্নার শব্দ/... অনেক বুট জুতোর শব্দ শুনতে পাই/ বাড়িতে কে কে আছ?’’
জাদু
দেবব্রত সিংহ
৪০০.০০
ভাষা ও সাহিত্য
কৃষ্ণযাত্রা, বাঁকুড়ার আঞ্চলিক ভাষা-সংলাপের সংবেদী আলেখ্য আর চলমান জীবনের আবেষ্টনে গড়ে উঠেছে ‘জাদু’-কাহিনি। দেবব্রত সিংহের জাদু উপন্যাসের এই গড়ন শুধু গ্রামজীবনের অন্তঃপ্রবাহী চলন নয়— মানুষের বাঁচার ন্যূনতম চাহিদার সঙ্গে সম্পর্ক, চাওয়া-পাওয়া, দ্বন্দ্ব, প্রেম, কষ্ট, আনন্দ, আকুতি আর লোকায়ত পালাগানের উপাদানমেশা আখ্যান। যেখানে চলন বলনে রাঙামাটির বাঁশির মতো উদাসী সুরের আবেশ ধরে থাকে। শুধু কৃষ্ণযাত্রা নয়— মনসাযাত্রা, সত্যপীর-সত্যনারায়ণের পাঁচালির নানা সুরসঙ্গীতের রেশ জড়িয়ে আছে। তবে মুখ্য হয়ে ওঠে বাউড়ি জনগোষ্ঠীর বাপ-মা হারা দরিদ্র আর গ্রামজীবনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা জীবনে জাদুর জীবনাচরণের অন্তর্দীপ্তি। কৈশোর থেকে যৌবনের পথ ধরা জাদুর মনের দোলাচল, দারিদ্র্যক্লিষ্ট অথচ প্রতিভায় আত্মনিমগ্নের কথা এই গদ্য-বয়ানে। গ্রামীণ পালাগানের পালাকার-গায়েন-নির্দেশক বংশীবদন, প্রম্পটার পানকিষ্ট, খোলবাদক বারু বৈরাগী ও নান্দু কাহার, মাধাই, রাবণ, রাঙানি, দিদিবুড়ি— এমন কত চরিত্রের সঙ্গে মিশে আছে তলঝিটকার রাসমেলা, অমরকানন, কোঁড়ো পাহাড়, বেলিয়াতোড়, ঝাঁটিপাহাড় আর রাঙামাটির বাস্তবভূমি। কুঁকড়াজোড়ের বাউড়িপাড়ার মেয়ে মহুলির বিয়ের আসরে অবস্থার ফেরে জাদুর সঙ্গে বিয়ে, জাদুর কুষ্ঠ, মহুলির বাপের বাড়ি ফিরে আসার পর আবার বিয়ে। শেষ পরিণতিতে আবার জাদু-মহুলির একত্রিত হওয়া। কৃষ্ণযাত্রায় রাধিকা চরিত্রের বিপরীতে জাদুর অভিনয়ের সূত্রে মহুলির সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে, কারণ এ রাধিকা ছেলের মেয়ে সেজে অভিনয় নয়, এখানে পালায় ‘ফিমেল’ নামার কথা গাঁয়ে গাঁয়ে চোঙা ফুঁকে প্রচার করেছে। রাধাকৃষ্ণ লীলায় বৈষ্ণব পদের উদ্ধৃতি আছে; শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চৈতন্যভাগবতের প্রামাণ্য কথার মধ্যে গ্রামীণ মানুষের বিনোদনের কাহিনি মোহিনী রূপ পেয়েছে সাবলীল গদ্যে। বাঁকুড়ার উত্তর ভাগের বিস্তৃত জনপদে আঞ্চলিক ভাষা-ব্যবহারের স্বতোৎসারিত গতিপথে কাহিনি এগিয়েছে। লেখকের গল্প বলার আকুতি আছে; আর লোকায়ত জনমানসকে কাছ থেকে দেখার অনুভূতি এই বৃহদাকার উপন্যাসের বুনন তৈরি করেছে। প্রকৃতি পরিবেশ আর কথালাপের এক সরল একাত্মতা ঘিরে আছে এই কথাবৃত্তান্তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy