প্রতীকী ছবি।
‘একাত্তরের সাহিত্য’ কী? ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনও কবি, লেখক, সাংবাদিক ছিলেন না যিনি বাংলাদেশ নিয়ে লেখেননি। সেই লেখাপত্রকেই ‘একাত্তরের সাহিত্য’ বলেছেন এ বইয়ের সঙ্কলক-সম্পাদক মুনতাসীর মামুন। পদাতিক, আমার বাংলা-র রচয়িতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও লিখেছেন একাত্তরের সাহিত্য, সেই সময় খবরকাগজে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর পাঁচটি লেখা দুই মলাটে ধরা এ বইতে— এক দিক থেকে দেখলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বৃহত্তর অর্থে মানবতাবাদের ইস্তাহার। যুদ্ধের শেষ পর্ব তখন, ১৬ ডিসেম্বর আসেনি তখনও— সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। “শিল্পী-সাহিত্যিকদের মধ্যে শত্রুমুক্ত বাংলাদেশে তিনিই প্রথম প্রবেশ করেছিলেন,” লিখেছেন সম্পাদক। কবি-সাংবাদিকের চোখে মুক্তিফৌজের লড়াই পায় অন্য মাত্রা: যখন ফিরে আসছেন, “আকাশে লাল চন্দনের ফোঁটার মতো চাঁদ সেই শত্রুদের শনাক্ত করছে— যারা মানুষ নয়।” ‘ক্ষমা? ক্ষমা নেই’ বা ‘একটি নির্দয় দয়েল পাখি’-র মতো লেখাগুলির সমধিক গুরুত্ব তাদের অমোঘ সত্যকথনে— মুক্তিযুদ্ধে যে নির্বিচার গণহত্যা হয়েছিল বাংলাদেশে, তার অবিকৃত বিবরণ। সেই সঙ্গে সঙ্কলিত ‘নিখোঁজ’ লেখক-চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের দুই ছেলে অপু-তপুকে ১৯৭২-এ লেখা সুভাষের একটি চিঠি, বেদনায় সজল।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মুক্তিযুদ্ধ
সঙ্কলন ও সম্পা: মুনতাসীর মামুন
২৫০.০০ বাংলাদেশি টাকা
জার্নিম্যান বুকস, ঢাকা
ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ভালবাসেন দুই বাংলার মানুষই, অথচ তাঁর ছবিজীবন নিয়ে খুচরো চর্চাই সার, হাতেগোনা পত্রিকার সংখ্যা বা লেখালিখি ছাড়া বাংলায় বই কোথায়! সে কাজটাই করেছেন নাফিস সাদিক, ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ ও তাঁর সৃষ্টিজগৎকে গভীরভাবে বোঝার অন্তরঙ্গ প্রয়াস’, তাঁকে নিয়ে ‘বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ’! গোড়ায় তাঁর জীবন নিয়ে একটি লেখা ‘ঋতুর উনপঞ্চাশ বছর’, তার পর তাঁর চলচ্চিত্রকৃতির মূল্যায়ন— ‘ঋতুর চলচ্চিত্র’ অংশে, অবশ্য মূল্যায়ন না বলে পর্যবেক্ষণ বললেই খাপ খায় বেশি। দহন, বাড়িওয়ালি, চোখের বালি, রেনকোট, সব চরিত্র কাল্পনিক, আবহমান, চিত্রাঙ্গদা-র মতো ছবিগুলি লেখকের বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ‘চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে ঋতু’ অংশে অভিনেতা, লেখক-সম্পাদক, অনুষ্ঠান উপস্থাপক ঋতুপর্ণকে আলতো ছুঁয়ে যাওয়া রয়েছে এ বইয়ে, তবে বইটির মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণের পাঁচটি সাক্ষাৎকার— তার মধ্যে চারটি প্রকাশিত হয়েছিল ইংরেজিতে, পাঠক এখানে অনুবাদে পড়তে পারবেন। ব্যক্তি ও শিল্পী ঋতুপর্ণের পছন্দ-অপছন্দ, তাঁর বেড়ে ওঠার সময়ের কলকাতা, সমসময়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ, ছবি নির্মাণের প্রেরণা ও অনুঘটক, সবই ধরা সেখানে। তবে শব্দবিশেষের ব্যবহার বিভ্রান্তি ঘটায়, যেমন সুইডিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘বারিমন’ (বার্গম্যান?)। ঋতুপর্ণের জীবনপঞ্জি, চলচ্চিত্র, অন্যান্য সৃষ্টি ও জাতীয় পুরস্কারের তালিকা ছাড়াও ঋতুপর্ণের েলখা গানগুলির বাণী একত্রে সঙ্কলিত এখানে, বড় প্রাপ্তি।
ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার
নাফিস সাদিক
৬০০.০০ বাংলাদেশি টাকা
বাতিঘর, ঢাকা
বার্ধক্যে এসে চার খণ্ডে আত্মজীবনী লিখেছিলেন হাসান আজিজুল হক— ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত, এই পুরাতন আখরগুলি এবং দুয়ার হতে দূরে। কৈশোর, যৌবন পার করে তারুণ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে শেষ হয়েছিল সেই আত্মকথামালা। গত শতকের সেই যে আইজুল, যে বড় হয়ে হাসান আজিজুল হক হয়ে উঠল, তার তৈরি হওয়ার কাহিনির আঁচ পাওয়া যায় এই সব লেখায়। ছেলেবেলার দিনগুলিতে পড়াশোনার চেয়েও বেশি করে ঘিরে থাকে বন্ধুত্ব, পারিবারিকতা, গ্রামসমাজ, প্রকৃতি।
অচেনা হাসান আজিজুল হক
রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়
২০০.০০ বাংলাদেশি টাকা
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা
ফকিরচাঁদ, অমরেশ, শহীদুল, সমরেশ— কত বন্ধুদের সঙ্গে এক গাঁয়ের বালকের বেড়ে ওঠা। সেই দলেরই এক জন রঞ্জু, রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমানের যবগ্রামের পড়শি, স্কুলেরও সতীর্থ— কৈশোরে দেখা ‘আজিজুলদা’র গল্পে সাজিয়ে তুলেছেন স্মৃতিপ্রবন্ধমালা। পাঠক পড়তে পড়তে জেনে ফেলেন, কখনও সেই অতীতকিশোর প্রবল শীতে পুকুরে নামার কৌশল শেখায়, কখনও বা সরস্বতী পুজো আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে রাত জেগে ঠাকুর সাজায়। ফেলে যাওয়া যবগ্রামকে বড়বেলায় দেখতে আসার কথাও জেগে থাকে আনন্দে বিষাদে। হাসানের সাহিত্য যাঁরা ভালবাসেন, তার পিছনের সহজ, গভীর, মননশীল ব্যক্তিমানুষটিকে এমন নিবিড় ভাবে পাওয়াও কম কথা নয় বড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy