Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Book

প্রয়োজনীয় বই, কিন্তু স্মৃতিকথা বলা চলে না

সঙ্কলনে আছে আরও কিছু নাম, যাঁদের বিদ্যাসাগরকে নিয়ে স্মৃতিরচনা ততটা পরিচিত নয়।

দিঠি বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:১৬
Share: Save:

স্মৃতিকথায় বিদ্যাসাগর
সম্পাদক: অজয় গুপ্ত
৩৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং

অনেক সময় কোনও ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে নিয়ে এত লেখালিখি হয় যে, তারই আলাদা ইতিহাস সন্ধান জরুরি হয়ে পড়ে। বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরে প্রকাশিত বইয়ের দিকে চোখ রাখলেও কথাটা বোঝা যায়। এই সঙ্কলনটির প্রকাশও নিশ্চয় এমন ভাবনা থেকেই।

সূচিপত্র দেখলে বইটি হাতে তুলে নিতেই হবে। শিবনাথ শাস্ত্রী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী, এঁরা কী বলেছেন বিদ্যাসাগর বিষয়ে, তা বহুপরিচিত হলেও এক জায়গায় এগুলি পাওয়ার লোভ সংবরণ সহজ নয়। মধুসূদনের ইংরেজি চিঠির সঙ্গে পড়া যায় সেগুলির সুশীল রায়-কৃত অনুবাদ। মনে পড়ে, ফিরে পড়া দরকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত-র কথামৃত-ও। যেমন, বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করার আগে শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের জামায় হাত দিয়ে বলেন, “জামার বোতাম খোলা রয়েছে, এতে কিছু দোষ হবে না তো?” আশ্বাস দেওয়া হয়, “কিছুতে দোষ হবে না, আপনার বোতাম দেবার দরকার নেই।” শ্রীম-র মন্তব্য, “বালককে বুঝাইলে যেমন নিশ্চিন্ত হয়, ঠাকুরও তেমনি নিশ্চিন্ত হইলেন।” দোর্দণ্ডপ্রতাপ পণ্ডিতের দর্শনার্থী পরমহংস ঠাকুরের এহেন আত্মসংশয় কী বোঝায়, ফের ভাবতে বসতে ইচ্ছে করে।

সঙ্কলনে আছে আরও কিছু নাম, যাঁদের বিদ্যাসাগরকে নিয়ে স্মৃতিরচনা ততটা পরিচিত নয়। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজনারায়ণ বসু, নবীনচন্দ্র সেন, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য-রা কী লিখেছেন, পড়তে কৌতূহল হবেই। কিন্তু কৌতূহল নিবৃত্তির পথে জেগে ওঠে কাঁটা। বোঝা যায়— না, এঁরা সরাসরি লেখেননি এ বিষয়ে। তাঁদের লেখাপত্রে, কথাবার্তায়, এমনকি অন্যদের রচনায় তাঁদের বিষয়ে মন্তব্য থেকে সম্পাদক বার করে আনছেন তাঁদের বিদ্যাসাগর-ভাবনা। যেমন, ঈশ্বর গুপ্তের পরিচিতি দিয়ে শুরু প্রবন্ধে পড়ি সংবাদ প্রভাকর-এর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিদ্যাসাগর-সংবাদ। কিন্তু সত্যি কি এটাই ঈশ্বর গুপ্তের সম্পূর্ণ বিদ্যাসাগর-ভাবনা? একে কি ‘স্মৃতিকথা’ বলা চলে কোনও হিসেবেই? অক্ষয়কুমার দত্তের নাম দিয়ে যে প্রবন্ধ শুরু, তাতে পড়ি, কী ভাবে তিনি বিধবাবিবাহ সংস্কার সমর্থন করেছিলেন, কী লিখেছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। মূল্যবান নিশ্চয়, কিন্তু স্মৃতিকথা নামে একে চালানো অসম্ভব। একই পদ্ধতি রাজনারায়ণ বসু, দীনবন্ধু মিত্র, নবীনচন্দ্র সেনের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ অধিকাংশই সম্পাদক-‘রচিত’ প্রবন্ধ। কিছু আবার সম্পাদকের রচনাও নয়। বঙ্কিমচন্দ্র কী ভাবতেন বিদ্যাসাগর বিষয়ে, তা নিয়ে যোগনাথ মুখোপাধ্যায় যা লিখেছেন, বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিকথা শিরোনামে তা-ই পড়ি। ভারতকোষ-এ বিদ্যাসাগর বিষয়ে যোগেশচন্দ্র বাগল লিখেছেন বলে সেটিকে পাই তাঁর বিদ্যাসাগর-স্মৃতি হিসেবে। এ কি ব্যাকরণসম্মত না যুক্তিসঙ্গত? ‘রচয়িতা’র দীর্ঘ পরিচয়-ভূমিকা দেখেও কিছু ঠাহর করা অসম্ভব। কেননা এক দিকে গাঁধী বিদ্যাসাগর নিয়ে কী লিখেছেন তা পড়ার আগে অসহযোগ থেকে স্বাধীনতার স্কুলপাঠ্য ইতিহাস পডি, অন্য দিকে যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, আহমদ শরীফের লেখার সঙ্গে কোনও ভূমিকাই পাই না। শঙ্খ ঘোষের সাক্ষাৎকারের (২০০৯ সাল নয়, সেটি ২০১৯ সালের) অতি-সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় অন্য তথ্যের অভাবে, এমনকি তাঁর বিদ্যাসাগর বইটিরও উল্লেখ ব্যতিরেকে, জানানো হয় কী কী পুরস্কার তিনি পেয়েছেন! সম্পাদনা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এতটাই যে কঠিন, মনে করায় বইটি। বিদ্যাসাগর-চর্চার জগতে বইটির যে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, তা মিলবে কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Book review Ishwar Chandra Vidyasagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE