—প্রতীকী চিত্র।
প্রবন্ধে যা হয় না, এমনকি আত্মকথাতেও নয়, সাক্ষাৎকার সেই কাজটা করে ফেলতে পারে— কোনও একটা ধরতাইয়ের পথ বেয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারে এমন কথাও, সচেতন ভাবে লেখার সময় যে কথাগুলো হাতের কলম লিখে ফেলতে পারে না। প্রশ্নকর্তার কাজ হল সেই উৎসমুখটি খুলিয়ে নেওয়া। তা যে সব সময় উস্কে দেওয়া প্রশ্নের মাধ্যমেই সম্ভব, তা কিন্তু নয়। কখনও কখনওবক্তার কথার সুরটুকু ধরে রাখতে পারলেই যথেষ্ট হয়। আলোচ্য সঙ্কলনটিতে দুই প্রশ্নকর্তা সেই কাজটা বহুলাংশে পেরেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে চণ্ডীদাস মাল জানিয়েছিলেন, “আগে যখন গানটা গেয়েছি, অর্থাৎ কম বয়সে, তখন বেশি ছটফট করেছি। দ্রুতলয়ে গেয়েছি। মনে হত, গানটা পালিয়ে যাবে। তালটা পালিয়ে যাবে। প্রথম দিকে সব গানের মানে বুঝেও যে গেয়েছি, তা নয়।... বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমার গানে এখন ছটফটানি ভাবটা আর নেই। গানটা এখন আর পালিয়ে যাচ্ছে না।” প্রবীণ শিল্পী তাঁর অনুভব থেকে যে কথাগুলি বলেছিলেন, মরমিয়া শ্রোতা সে কথা অভিজ্ঞতায় জানেন— সমঝদাররা বৃদ্ধ ওস্তাদের কাছে তানকর্তব প্রত্যাশা করে যান না; যান ওস্তাদ তাঁর গানে সারা জীবনের বোধের অর্জন ঢেলে দেবেন বলে। একই অনুভূতির কথা আসে মোহন সিংহ খাঙ্গুরার সাক্ষাৎকারে— “একই গান দশজন শিল্পীর গলায় দশ রকমের। এই তফাতটা কেন হচ্ছে? নোটেশন অনুসারে কোনো তফাত হচ্ছে না, কিন্তু অনুভবে, রস অনুসারে একটাই গান দশজন শিল্পীর গলায় দশ রকমের হচ্ছে। এমনকী একজন শিল্পীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি একটা গান আজ যেরকম ভাবে গাইছেন, কাল সেই গানটা তাঁর গলায়হয়ে যাচ্ছে অন্যরকম।... পুরোটাই আসলে অনুভবের তফাত, বোঝাপড়ার তফাত। শিল্পীর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একটা গানের অনুভবও পাল্টে যেতে থাকে।”
কথাবার্তা: সাক্ষাৎকার সংকলন
সৌরভ দে, দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়
৪৫০.০০
দেবভাষা
বইটিতে মোট বারোটি সাক্ষাৎকার রয়েছে। উল্লিখিত দুই শিল্পী ছাড়াও রয়েছে রণেন আয়ন দত্ত, রতনলাল ব্রহ্মচারী, সৌম্যেন্দু রায়, সুরেশ দত্ত, যোগেশ দত্ত, বুদ্ধদেব গুহ, নির্মলা মিশ্র, থাঙ্কমণি কুট্টি, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ও দেবারতি মিত্রের সাক্ষাৎকার। প্রতিটি সাক্ষাৎকারই নেওয়া হয়েছিল শিলাদিত্য পত্রিকার জন্য, ফলে সাক্ষাৎকারগুলি তুলনায় দীর্ঘ। যিনি কখনও কোনও মুদ্রিত মাধ্যমের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, তিনিই জানেন যে, যত কথা আলোচনা হয়, তার সামান্য অংশই শেষ অবধি প্রকাশিত হয়ে পাঠকের সামনে আসে। এই সঙ্কলনের সাক্ষাৎকারগুলির ক্ষেত্রে স্বীকার করতে হয় যে, নিজেদের মনে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করার তাগিদের চেয়ে প্রশ্নকর্তারা বক্তার কথার চলনকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। গুণটি দুর্লভ।
আরও একটি কথা উল্লেখ করার মতো। অনেকগুলি সাক্ষাৎকারে স্বভাবতই এসেছে বক্তার পূর্বসূরিদের প্রসঙ্গ— কোনও ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ গুরু; কোনও ক্ষেত্রে তা নন। প্রত্যেকেই যে যত্নে, যে শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন পূর্বজদের, তাও শিক্ষণীয় বটে। কোনও কৃতিত্বই যে পারম্পর্যহীন হতে পারে না, এই কথাটা কোনও এক বিচিত্র কারণে বাঙালি ভুলতে বসেছে। সাক্ষাৎকারগুলি মনে করিয়ে দেয়, শ্রদ্ধা বস্তুটি শিক্ষারই অঙ্গ। রণেন আয়ন দত্ত যখন অন্নদা মুনশির কথা বলেন, বা মোহন সিংহ খাঙ্গুরা বলেন ধ্রুবতারা যোশীর কথা, সেই সশ্রদ্ধ উচ্চারণ শিক্ষণীয়। গুণী বাঙালির মনের ভিতরটা কেমন, এই সাক্ষাৎকার সংগ্রহ তারই কিছু নিদর্শন পাঠকের সামনে উপস্থিত করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy