দি এসেনশিয়াল আম্বেডকর
সম্পা: ভালচন্দ্র মুঙ্গেকর
৪৯৫.০০
রূপা
“দেশের কল্যাণের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়”— ভারতীয় গণতন্ত্রের শৈশবে, ১৯৫২-৫৩ সালের বাজেট বিষয়ে বলতে গিয়ে দেশের অগ্রগতির পথে ‘প্রধান বাধা’টিকে চিহ্নিত করছেন আম্বেডকর। ওয়াকিবহাল লোক মাত্রেই জানেন, তাঁর কথা কতখানি সত্য প্রমাণিত। আম্বেডকর কেবল সমস্যাটার দিকেই দৃষ্টি আকৃষ্ট করেননি, তিনি এর এমন এক সমাধানের কথা বলেছিলেন, যা গ্রহণ করলে ভারতীয় উপমহাদেশ অনেক বিকশিত ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে পারত। তাঁর সমাধান ছিল: “যে হেতু সশস্ত্র বাহিনীর জন্য খরচ করার একমাত্র কারণ হচ্ছে পাকিস্তানের দিক থেকে আসা আক্রমণের আশঙ্কা… কাশ্মীর সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের মধ্য দিয়ে আমরা এই আশঙ্কা দূর করতে পারি।” আর কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের রাস্তাটা হচ্ছে গণভোট— সেখানকার মানুষের রায় জেনে সেই পথে এগোনো। আজকের ভারতে এমন দাবি তুললে তাঁকে হয়তো রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে জেলে থাকতে হত। শুধু এটুকুই নয়, তাঁর বিভিন্ন রচনা ও বক্তৃতার মধ্যে তিনি এমন অনেক কথা বলেছেন, যা স্পষ্টত ভারতের শাসকদের পক্ষে বিপজ্জনক। তিনি বলছেন, ধর্মঘট করা শ্রমিকদের জন্মগত অধিকার; বলছেন ভূমিসংস্কার ছাড়া এ দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নতির পথ নেই; দাবি করছেন শিক্ষাকে, বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করে তুলতে হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাকে পণ্য হিসেবে বিক্রির ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে, এবং এই খাতে প্রভূত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। আরও বিপজ্জনক কথা, তাঁর গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় পূর্বশর্ত হচ্ছে অসাম্য দূরীকরণ— ‘সামাজিক ফাটলগুলোই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভেঙে পড়ার কারণ’। জাতি-ব্যবস্থার বিলোপ সাধন ব্যতিরেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কোনও অসাম্যের দূরীকরণই সম্ভব নয়। এর সঙ্গে গণতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে, থাকতে হবে জোরালো বিরোধী পক্ষ, এর জন্য সরকার পক্ষকে যথেষ্ট নজর দিতে হবে; আইন ও প্রশাসনে সমতা এবং প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা— ক্ষমতাসীন কোনও দল বা ব্যক্তি যেন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে না পারেন; সাংবিধানিক নৈতিকতার পালন; সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগুরুর পীড়নের অবসান; সমাজে নৈতিক শৃঙ্খলা এবং লোকসাধারণের জোরালো বিবেক। রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে সামাজিক ও আর্থনীতিক গণতন্ত্রে প্রতিফলিত হতেই হবে। এটা না হলে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত— এই ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। তা কতটা ঠিক ছিল, আজকের ভারতবাসী তা প্রতি ক্ষণে অভিজ্ঞাত হচ্ছে।
দুর্ভাগ্য যে, আম্বেডকরের কথা ভারত শোনেনি। তাঁকে আটক করে রাখা হল হাতে সংবিধান ধরা পাথরের মূর্তিতে, অথবা এক দলিত নেতা হিসেবে। যে ব্যাপারটা সযত্নে ঢেকে রাখা হল, সেটা হল এই যে, সংবিধান রচনায় তাঁর ভূমিকা কিংবা দলিত সমাজের মুক্তির জন্য তাঁর আন্দোলনের মতো ব্যাপারগুলো ছিল এক মুক্ত মানব সমাজের জন্য তাঁর নিরন্তর সন্ধানের অংশ। যেখানে এক দিকে তিনি বিশিষ্ট অর্থশাস্ত্রী, দার্শনিক, সমাজতত্ত্ববিদ, আইনজ্ঞ ও সাংসদ, এবং অন্য দিকে, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বা জন-প্রতিবাদের সংগঠক। প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার পৃষ্ঠায় (১৭+২ খণ্ডে) ছড়ানো আম্বেডকরের বিপুল রচনা ও বক্তৃতার সঙ্কলন থেকে ভালচন্দ্র মুঙ্গেকর চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন সাড়ে চারশো পৃষ্ঠার একটি সঙ্কলন, যা থেকে এই অসামান্য দ্রষ্টার চিন্তা-সমন্বয় অনেকখানি প্রতিফলিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy