শায়েরি লিখছেন বসে মির্জা গালিব, বাঁ পাশের রেকাবিতে ল্যাংড়া আম রাখা— এ ধরনের ছবি গোটা বই জুড়েই আরও এঁকেছেন দেবাশীষ দেব, অলঙ্করণ তো বটেই, এ-বইয়ের প্রচ্ছদও তাঁর, বইটির শুরুতেই লেখা: দেবাশীষ দেব চিত্রিত। গালিবের ছবিটির ক্যাপশন: ‘ল্যাংড়া আমের সুগন্ধ গালিবের খুব পছন্দের ছিল...’। ছবির সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে রজতেন্দ্রর লেখা: ‘‘মির্জা গালিবের মতো আর কোনো লেজেন্ডারি কবি, আমকে এত ভালোবেসেছেন বা আম নিয়ে এত অসামান্য শায়েরি লিখেছেন বলে আমার জানা নেই।’’ এই সূত্রেই লেখক পাঠককে শুনিয়েছেন গালিব ও আম নিয়ে তাঁর সেজোজ্যাঠার মুখে শোনা গল্পটি। একদিন গালিব সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সঙ্গে তাঁর লালকিল্লার একটি আমবাগানে বেড়াতে-বেড়াতে একটি ল্যাংড়া আমের গাছের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে সে-গাছের পাকা আমগুলিকে লক্ষ করতে থাকেন। সম্রাটের প্রশ্নে গালিব হেসে বলেন, ‘‘জাঁহাপনা, বুজুর্গদের মুখে শুনেছি যে, ‘দানে দানে পর লিখ্খা হোতা হ্যায় খানেওয়ালা কা নাম।’ তাই পড়ার চেষ্টা করছি, কোন কোন আমের গায়ে গালিব-গালিব লিখে রাখা আছে!’’
রোববারের বাজার
রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
৪৯৯.০০, দে’জ পাবলিশিং
রসনার স্বাদ, ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া রন্ধনপ্রণালী, আর নিত্যদিনের বাজারকে প্রায় শিল্পের উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে এ-বই। কাটোয়ার ডাঁটা, থোড় ও মোচা, লালশাক, এঁচোড়, আখের গুড়, শজনেডাঁটা ও শজনেফুল, কাচকিমাছ, লাউ, গোবিন্দভোগ চাল, পমফ্রেট, বোয়ালমাছ, তপসেমাছ, ধনেপাতা, ভেটকিমাছ, চিতলমাছ, খেজুরগুড়, আঙুর, মেটে, লটেমাছ, কাঁঠাল, আনারস, কড়াইশুঁটি, কাঁকড়া, মাংস... এমন কিছু নেই যা বাদ পড়েছে রজতেন্দ্রর লেখার তালিকা থেকে। লেখার জন্যে তিনি একটা ছোট্ট মাছ বা ফল খুঁজে বার করার নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন একাধিক বাজারে, আড়তে, গাঁ-গঞ্জের হাটে, মাঝি ও জেলেদের সঙ্গে নদীনালায়, জঙ্গল পাহাড় বা সমুদ্রের পাশে গড়ে-ওঠা বিচিত্র সব হাটেবাজারে। হাঁটুজলে নেমে মুখ ঝুঁকিয়ে খুঁজেছেন কাচকি কিংবা বেলেমাছের কোনও হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি। আবার বেগুন বা ডুমুরের একটি বিরল পদ খাবার জন্যে ট্রেনে করে ছুটে গিয়েছেন মফস্সলে। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে চিরুনি-তল্লাশি করে বার করেছেন হারিয়ে-যাওয়া কোনও ভাতের হোটেল। লিখেছেন সেই সব মানুষের কথাও যাঁরা যত্ন-আদর করে রেঁধে-বেড়ে খাইয়েছেন তাঁকে। সেই স্মৃতিগুলিই সজীব সম্পদ বইটির।
অঞ্চলচর্চা ও আঞ্চলিক ইতিহাস প্রসঙ্গ
সম্পাদক: পল্লব মিত্র
৩০০.০০, পারুল
ইতিহাসবিদ সুধীরকুমার মিত্রের জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের পরামর্শে যে সব উদ্যোগ গৃহীত হয়, তারই অন্যতম এই সঙ্কলনগ্রন্থ। এ বইয়ে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের একটি সামগ্রিক ছবি তুলে ধরতে চাওয়া হয়েছে। প্রথমেই রয়েছে কয়েকটি সার্বিক আলোচনা, আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার প্রেক্ষিত ছাড়াও আছে মন্দির টেরাকোটা, মন্দির গাত্রচিত্র, কুুলুজি বৃত্তান্ত ইত্যাদি প্রসঙ্গ। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা জেলাভিত্তিক, তার আওতায় আছে মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি। ইতিহাসের পাশাপাশি কোথাও কোথাও আছে পুরাকীর্তির বিস্তারিত আলোচনা। তৃতীয় পর্বে সুধীরকুমার মিত্রকে নিয়ে ৬টি লেখা। শেষে সুধীরকুমার মিত্রের দশটি বই নিয়ে দশ জন পাঠকের পাঠ-প্রতিক্রিয়া। বেশ কয়েকটি পুনর্মুদ্রণের সঙ্গে নবীন ও প্রবীণ (তাঁদের মধ্যে কয়েক জন প্রয়াত) গবেষকদের লেখায় সমৃদ্ধ বইটি সব মিলিয়ে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার ঐতিহ্যবাহী পরম্পরার চমৎকার একটি ছবি তুলে ধরেছে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy