কে না জানে, বাঙালি বেড়াতে ভালবাসে। তীর্থক্ষেত্র কি নিসর্গশোভা, দুই-ই বাঙািলকে টানে। হাওয়া বদলের জন্য নিয়ম করে পশ্চিমে যেতে যেতে কত জায়গায় যে বাড়িঘর বানিয়ে বাঙালি অস্থায়ী উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল তার ঠিক নেই। কিন্তু এখন দিনকাল অন্য রকম। ধীরেসুস্থে শুয়েবসে বেড়ানোর দিন ফুরিয়েছে। এখন সবই প্যাকেজ ট্যুর, সাত দিনে সত্তরটা জায়গা না দেখতে পারলে কী করে হবে?
তবু ভরসার কথা, কেউ কেউ অন্য রকম ভাবেন। শুধু তাই নয়, আশাও করেন, সমমনস্ক মানুষ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। সেই আশায় বিপুল পরিশ্রম করে এমন কিছু ‘দ্রষ্টব্য’ স্থান নিয়ে একের পর এক বই তৈরি করে ফেলেন। নিছক ভ্রমণকাহিনি তো নয়ই, আবার গবেষণাগ্রন্থও নয়। দরকারি তথ্য সবই আছে, আছে যাবতীয় বইপত্রের হদিশ, দুর্লভ ছবি, মানচিত্র। অতিরিক্ত যা আছে তা হল ভেতরের আবেগটা জাগিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্ররোচনা। এক দিনে দেখে নিতে চান? ঠিক আছে। তবে কি না, দিন তিনেক থাকলে ভাল হয়। চেনা রাস্তা ছেড়ে একটু এগিয়ে দূরেরটা দেখবেন না?
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তর সাম্প্রতিক তিনটি বই এই গোত্রের। সৌম্যেন পালের সঙ্গে মহাবলীপুরম (আনন্দ), আর একক ভাবে খাজুরাহো এবং মান্ডু (দুটিরই প্রকাশক পত্রলেখা, যথাক্রমে ২০০.০০ ও ২২০.০০)। সব কটিই ভ্রমণই প্যাকেজ ট্যুরে লভ্য, কিন্তু প্রসেনজিৎ চান অন্য চোখে দেখতে। ‘যাঁরা অন্তত তিনটি রাত্রি মান্ডুতে কাটানোর মতো ভাগ্যবান হবেন, তাঁদের তিনটি বিকেলে সূর্যাস্ত দেখতেই হবে তিনটি আলাদা জায়গা থেকে।’ কিংবা, বর্ষায় মান্ডুর যে রূপ মুগ্ধ করেছিল সম্রাট জাহাঙ্গিরকে, তা-ও পেতে পারেন, শুধু খেয়াল রাখতে হবে, ‘‘কখনও এমন বৃষ্টিও হয়, যাকে ঠিক ‘হওয়া’ বলা যায় না। বলতে হয় ‘আসা’।’’ মান্ডুর ইতিহাস, স্থাপত্য-পরিচয়, প্রতিটি দ্রষ্টব্যের খুঁটিনাটি, কী ভাবে দেখবেন, এ সব তো আছেই।
খাজুরাহো নিয়ে বাংলায় নানা বই লেখা হয়েছে, আলোচনাও বিস্তর। যথারীতি নানা স্বাদের ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে আছে পণ্ডিতদের স্থাপত্য ও শিল্পকলার আলোচনা। প্রসেনজিৎ এই চর্চার ধারাবাহিকতাকে ছুঁয়ে গিয়েছেন, তুলে ধরেছেন খামতিও। তাঁর বইয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন প্রাচীনতম চৌষট্টি যোগিনী থেকে শেষ পর্যায়ের ঘণ্টাই ও অন্যান্য মন্দিরের। চন্দেল্ল রাজাদের এই ধর্মীয় রাজধানীর একদা আশির বেশি মন্দিরের মধ্যে টিকে আছে মাত্র কুড়ি-বাইশটি। শুধু তাদের স্থাপত্য নয়, অজস্র মূর্তির অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য খুঁটিয়ে দেখিয়েছেন প্রসেনজিৎ। ভাস্কর্যে যৌনতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে না গিয়ে সাবলীল ভাবে তারও আলোচনা করেছেন যাতে দর্শক স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন। সব মিলিয়ে বইটি অবশ্যই শুধু খাজুরাহো দেখতে যাওয়ার যথেষ্ট রসদ হাতে তুলে দিতে পেরেছে।
কিছু আগেই প্রকাশিত হয়েছে প্রসেনজিতের টীকা সহ নগেন্দ্রনাথ মিত্রের সচিত্র পুরীতীর্থ (পরশপাথর, ১৫০.০০)। একশো বছর আগে প্রথম প্রকাশিত বইটি পুরী সংক্রান্ত বহু তথ্যে ভরা। পুরীর যাত্রাপথ থেকে শুরু করে মন্দিরগুলির পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছিলেন আন্দুল রাজস্টেটের ম্যানেজার নগেন্দ্রনাথ, আলোচনায় এনেছেন কোনার্ক ও নিকটবর্তী অন্যান্য দ্রষ্টব্যের কথাও। পুরনো ছবি ও মানচিত্রগুলি প্রয়োজনীয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy