Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Book Review

যখন মাঠে না গেলে ক্রিকেট দেখা যেত না

সারা বছর এ কালের মতো ক্রিকেট ধামাকা লেগে থাকত না বলে শীতের দুপুরের ইডেন সত্যি স্বর্গোদ্যান।

বিশ্বজিৎ রায়
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ১৪:০৩
Share: Save:

ক্রিকেট সমগ্র
শঙ্করীপ্রসাদ বসু
৭৫০.০০, আনন্দ পাবলিশার্স

ক্রিকেটের ময়দানে খেলুড়ে দেশের সংখ্যা কম ও ভারত সেখানে ইন্ডিয়া হিসেবে অংশগ্রহণকারী। সুতরাং ফুটবলে আর হকিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত ঠাঁই-হারা হলেও ক্রিকেটে হয়নি। ক্রিকেট কেবল এ দেশে সবার খেলা হয়ে উঠল না, ক্রমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত আর ইন্ডিয়ার ঐক্য-বিধায়ক অস্ত্র হয়ে উঠল। বিশেষ করে কপিল দেবের হাতে ক্রিকেট-বিশ্বকাপ ওঠার পর এ খেলাকে ঘিরে গণ-হিস্টিরিয়া, নব্বই-পরবর্তী পর্বে ক্রিকেট বিনোদনে পুঁজির মারকাটারি অনুপ্রবেশ।

শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘ক্রিকেট সমগ্র’ পড়তে বসলে এই কথাগুলো মাথায় খেলে যেতে পারে। তিনি যে খেলাটির কথা লিখেছেন, তা-ও ক্রিকেট বটে, কিন্তু এই বাণিজ্যকণ্টকিত বিনোদনের সঙ্গে তার দূরত্ব কয়েক আলোকবর্ষ। ‘ইডেনে শীতের দুপুর’, ‘রমণীয় ক্রিকেট’, ‘বল পড়ে ব্যাট নড়ে’, ‘ক্রিকেট সুন্দর ক্রিকেট’, ‘নট আউট’, ‘সারাদিনের খেলা’, ‘লাল বল লারউড’— সাতখানি বই নিয়ে ‘ক্রিকেট সমগ্র’। গত শতকের ষাটের দশকের ক্রিকেট উপভোগের রমণীয় প্রতিবেদন— তখন মাঠে না গেলে ক্রিকেট দেখার উপায় ছিল না। সারা বছর এ কালের মতো ক্রিকেট ধামাকা লেগে থাকত না বলে শীতের দুপুরের ইডেন সত্যি স্বর্গোদ্যান। ‘‘ইডেন গার্ডেনের মায়া থেকে নিস্তার নেই। যদি এক বার কেউ ধরা পড়ে, সে সারা পৃথিবীতে খুঁজে বেড়াবে ইডেন গার্ডেন। আর কোথায় আছে এমন মাঠ, এমন ঘাস, এমন খেলা?’’ (পৃ. ১১) সাহিত্যের অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ রসিক মানুষ— কাব্যময় রোমান্টিক ভাষায় খেলার ছবি আঁকেন।

১৯৬২। প্রধানমন্ত্রী একাদশ আর গভর্নর একাদশের প্রদর্শনী ম্যাচ। প্রতিরক্ষা ভান্ডারের সাহায্যার্থে খেলা। উমরিগড় আর নাদকার্নি জুটি জমাট। ‘‘রানের তরঙ্গ আছড়ে পড়তে লাগল মাঠের সর্বাঙ্গে’’ (পৃ ৪২৮)— বাক্যটির মধ্যে নিহিত অনুপ্রাসের দোলা যেন ব্যাট-ছুটন্ত বলের দুরন্ত গতির ছবিটিকে স্পষ্ট করেছে। অস্ট্রেলিয়া-ভারতের খেলা চলছে। ব্যাটে ফ্যাভেল, বলে দেশাই। দেশাইয়ের চেহারা খাটো। তাতে কী? ‘‘দেশাইয়ের হাত থেকে ছুটে যাওয়া বলের মতোই স্বয়ং দেশাইকেও একটা ছুটন্ত মনুষ্যবল মনে হতে লাগল।’’ (পৃ ৮০) জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশাই যেন ছুটন্ত বল। এই জাতীয়তাবাদ মাঝে মাঝে ভারত থেকে বঙ্গদেশের মাটিতে পা রাখে। তখন লেখা হয় বঙ্গের ‘পঙ্কজ রবি’ কিংবা সচল অগ্নিগিরি ‘সুঁটে ব্যানার্জি’-র কথা। ‘মন্টু ব্যানার্জি’, ‘কমল ব্যানার্জি’র মতো স-বল বাঙালিরাও বাদ যান না। তবে জাতীয়তাবাদী আবেগের চাপে সুন্দর ক্রিকেটের ময়দানে বিলিতি অ্যাডভেঞ্চারও বাদ পড়ে না। ক্রিকেট-সরস্বতী কখনও লেখককে ‘কেবল বাঙালি’ হয়ে থাকতে দেননি। ‘লাল বল লারউড’ বডিলাইন সিরিজের ইতিহাস। বডিলাইনের শিকারি ও শিকার লারউডকে ধরে তাঁর কাহিনি সাজান তিনি। এই পুরুষদের ভিড়ে ললনারা টুকি দেন একটা-দুটো- তিনটে লেখায়। শঙ্করীপ্রসাদ লেখেন, ‘‘বোমা বন্দুক নিয়ে মেয়েরা যদি লড়াই করতে পারে, তাহলে খেলার লড়াই করতে পারবে না উপযুক্তভাবে— এ কি বিশ্বাসযোগ্য?’’ (পৃ ১৩৬) এ বিশ্বাস থাকলেও মেয়েদের নিয়ে নানা কৌতুককর কথা-কাহিনিও লিখেছেন।

শঙ্করীপ্রসাদের ক্রিকেট-বিষয়ক লেখা বাংলার দুর্গাপ্রতিমার চালচিত্রের মতো— সেখানে নানা উপাদানের সমাহার। ক্রিকেট সাহিত্যের বিলিতি ঐতিহ্যকে স্মরণে রেখে দিশি পাঠকদের জন্য তিনি যে কলম ধরেছেন সেই কলমটি কালের মাত্রা ডিঙিয়ে আজও সরস-নবীন। ঘিয়ে ব্যাট আর লাল বলের মায়া যাওয়ার নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review Book Literature Cricket Sankari Prasad Basu Eden Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy