গুলি পটকা নয় যন্ত্রবিদ্যা: দেশ সাধনায় রবীন্দ্রনায়কেরা
মলয় রক্ষিত
১২৫.০০
স্পার্ক
‘শেষ কথা’ গল্পে বিজ্ঞানী-ভূতত্ত্ববিদ নবীনমাধব অথবা ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার নন্দকিশোর— রবীন্দ্রনাথের এই নায়কদের বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কটা ছিল ছকভাঙা। তাঁরা বুঝতেন, ব্রিটিশ ভারতে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে মেধার অভাব নেই, আছে যন্ত্র ও অর্থের। এই দেশকে যদি স্বাধীন করতে হয়, তা হলে বিজ্ঞানকে দশের কাজে লাগাতে হবে। বিপ্লবী দলগুলির বোমা বানানোর রমরমা আমলে রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়েছিলেন জাতীয়তাবাদের ভাবনায়। আর সেই চিন্তা রূপ পেয়েছে তাঁর একাধিক গল্প-উপন্যাসের নায়কদের মধ্যে।
সেই নায়কদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে পাঠকের সামনে এক নতুন ভাবনা তুলে ধরেছেন মলয় রক্ষিত। উঠে এসেছে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথের বিকল্প চিন্তার ধারা— বিজ্ঞানের হাত ধরে ঐক্য, জাতীয়তা, দেশসেবার সঙ্কল্প। বিজ্ঞানের সর্বনাশা রূপ নিয়ে বিচলিত হলেও রবীন্দ্রনাথ জানতেন, বিজ্ঞানের অগ্রগতিই সভ্যতার চেহারা পাল্টে দিচ্ছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথের মনের এই দ্বন্দ্ব এবং তাঁর কর্মকাণ্ডে তার ছাপ নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, তাঁর সাহিত্য, সর্বোপরি বিজ্ঞান জগতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক চিনতে শেখায় এই বই।
বাংলার লোকশিল্প: নন্দনতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব
শিবেন্দু মান্না
২৫০.০০
অরুণা প্রকাশন
বাঙালির জাতিসত্তার মধ্যে সংস্কৃতি যে স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত, তাতে লোকশিল্প অন্যতম উপাদান। আক্ষরিক ও অন্তর্নিহিত অর্থে লোকশিল্পের এক ব্যবহারিক রূপকল্প আছে। কালক্রম পেরিয়ে বাঙালি জীবনে দৈনন্দিন শিল্পের উজ্জীবন থেকে গিয়েছে। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে শিল্পকলা আর শিল্পীর আন্তঃসম্পর্কের বয়ান বাঙালির জীবনসংস্কৃতির পরম্পরার সাক্ষী। বাঙালির জীবনচর্যার সঙ্গে লোকশিল্পের একাত্মতার সম্পর্কের এই তত্ত্ব ক্ষেত্রগবেষণার প্রাজ্ঞতায় ও পূর্ববর্তী চর্চার সূত্রে আলোচনা করেছেন শিবেন্দু মান্না। কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, কারুশিল্প, চারুশিল্পের সঙ্গে লোকশিল্পের যে মৌলিক পার্থক্য আছে, আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় সে প্রশ্নও উঠেছে। মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য, পুতুলশিল্পের ধারা, ডোকরা শিল্পের কথা দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। ব্যাপক অর্থে, লোকসংস্কৃতি ও লোকশিল্পকলার আধুনিক ভাবনার গতিপ্রকৃতি, বিষয়আশয় ও নৃতাত্ত্বিক পরিমণ্ডল চর্চার নিরিখে মূল্যায়ন ঘটেছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক লোকসংস্কৃতি চর্চা মূলত বাংলার ভাষা-সাহিত্যের অন্তর্গত লোকসাহিত্য চর্চা। চর্চার এই প্রয়াসে, লেখকের উপলব্ধিতে বাংলার লোকশিল্পের অন্তর্ভাবনার অভিমুখ তৈরি হয়েছে।
বেদনাতুর আলোকরেখা
একরাম আলি
২০০.০০
দে’জ
১৯৯১ সালের বাইশে শ্রাবণ যদি কারও মনে হয়, “পঞ্চাশতম মৃত্যুবর্ষ হল একটি পাপ-পরিখা, প্রতিটি লেখককেই মৃত্যুপরবর্তী জীবনে এক বার অতিক্রম করতে হয়”, তাঁর শ্লেষকে অতিরিক্ত বলা চলে না। এমনিতেই গ্রন্থস্বত্বের সমাপন এক বড় ঘটনা, তার উপর রবীন্দ্রনাথের স্বত্ব। ‘বাইশে শ্রাবণ: পঞ্চাশ বছর পর’ প্রবন্ধে একরাম আলি লিখেছেন, (রবীন্দ্ররচনা) যেন এত দিনে সাবালক হল, আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই।
‘স্কুল-ছুটদের রবীন্দ্রনাথ’ এই বইয়ের জরুরিতম লেখাগুলির একটি। বীরভূমের শৈশবে ছোটকুষ্টিকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কারের এমন ছবি দুর্লভ। কিংবা খালি গা, হাঁটু অবধি লুঙ্গি-পরা মজিদদাদুর ছবি, যিনি যৌবনে গাড়োয়ান ছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে ভুবনডাঙার রাস্তায় প্রাতর্ভ্রমণে দেখতেন। তাঁরা বলতেন ‘ঠাকুর’; সরে দাঁড়াতেন গাড়ি নিয়ে, ঠাকুরকে হাঁটার পথ ছেড়ে দিতেন। ফিরে ভাবেন একরাম, কী ভাবে রবীন্দ্রনাথকে দেখতেন মজিদদাদুরা? ‘সবার থেকে আলাদা’? না, সবার মাঝে?
বেদনাতুর আলোকরেখা বইয়ের প্রবন্ধমালায় কেবল সুখপাঠ্যতা নেই, আছে একটা অনায়াস বোধময়তা, যা দিয়ে বাঙালি কবিবলয়কে দ্রুত পরিক্রমা করেন লেখক। বলয়ে থাকেন জীবনানন্দ দাশ, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, আলোক সরকার, শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ভূমেন্দ্র গুহ, মানিক চক্রবর্তী, শামসের আনোয়ার, নিশীথ ভড়। আর এই সমস্ত কবিতাসন্ধান যেন ধরে থাকে সূচনা-প্রবন্ধের সূত্রটি— লেখকের আজীবন না মেটা কৌতূহল— “কবিরা কোথায় জন্মান?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy