Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যে পাটশিল্পের বেহাল অবস্থা দেখে ক্ষোভ দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

পশ্চিমবঙ্গে পাট শিল্পের হাল হকিকত খতিয়ে দেখে রুষ্ট হয়েই ফিরে গেলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার এবং অর্থ ও শিল্প-বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আইনে এই শিল্পের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং দিল্লির প্রচুর অর্থ সহায়তা সত্ত্বেও এ রাজ্যের বেহাল চটকল ও শ্রমিক সংগঠনগুলির ব্যর্থতার কারণে রফতানির পরিমাণ হু হু করে কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশ তার পাটের রফতানি গত দু’বছরে দ্বিগুণ করে ফেলেছে। আগামী ১৬ নভেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাটশিল্প নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে পাট শিল্পের হাল হকিকত খতিয়ে দেখে রুষ্ট হয়েই ফিরে গেলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার এবং অর্থ ও শিল্প-বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আইনে এই শিল্পের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং দিল্লির প্রচুর অর্থ সহায়তা সত্ত্বেও এ রাজ্যের বেহাল চটকল ও শ্রমিক সংগঠনগুলির ব্যর্থতার কারণে রফতানির পরিমাণ হু হু করে কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশ তার পাটের রফতানি গত দু’বছরে দ্বিগুণ করে ফেলেছে।

আগামী ১৬ নভেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাটশিল্প নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে কলকাতায় এসে সরেজমিনে এই শিল্পের পরিস্থিতি বুঝে গেলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এর আগে ইউপিএ সরকারের কোনও মন্ত্রী কখনও কলকাতায় এসে এ ধরনের পর্যালোচনা বৈঠক করেননি। গত এনডিএ সরকারের আমলে কাশীরাম রানা ও শাহনওয়াজ হুসেন শেষ বার এখানে এসে বৈঠক করে যান। ইউপিএ সরকারের পক্ষ থেকে প্রাক্তন বস্ত্রমন্ত্রী দয়ানিধি মারান অবশ্য একবারই এসেছিলেন, তবে তা ছিল পাটশিল্পের পক্ষ থেকে আয়োজিত রফতানি সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠান। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, “পর পর সরকার এসেছে। কিন্তু পাটশিল্পের উন্নতিতে কেউই কিছু করেনি। আমরা তা করব। ঠিক যেমন ভাবে আমরা গুজরাতে বস্ত্রশিল্পের উন্নতি ঘটিয়েছি।” এ দিন বৈঠক সেরে দিল্লি পাড়ি দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজে যেচে আমায় পাটশিল্পের উন্নতিতে যথাসাধ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।” কিন্তু এ রাজ্যের চটকলগুলি এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলির কাজকর্মের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বাংলাদেশ দিনের পর দিন রফতানি বাড়িয়ে চলেছে। তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে আইনগত নিরাপত্তা এবং এত অর্থ সাহায্য পাওয়ার পরেও এ রাজ্য থেকে রফতানি পিছিয়ে পড়ছে কেন?”

চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ-র হিসেবে, এ রাজ্য থেকে গড়ে বছরে রফতানি হয় ২২৩২ কোটি টাকার পাট সামগ্রী। অপর দিকে বাংলাদেশ গত ৫ বছরে ৪.৭ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে চলতি বছরে ৮.৭ লক্ষ মেট্রিক টন সামগ্রী রফতানি করেছে। আরও একটি চমকপ্রদ হিসেব দিয়েছে আইজেএমএ। বাংলাদেশের চেয়ে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই চটকলের সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি। সে দেশের চেয়ে এখানে কর্মী সংখ্যা পাঁচ গুণ, বাংলাদেশ বছরে যত কাঁচা পাট উৎপাদন করে, ভারতে তার পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। তবু পিছিয়ে পড়ছে ভারত।

এই হিসেব দেখে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই অবস্থা? আইজেএমএ-র চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “আমরা মন্ত্রীদের জানিয়েছি বাংলাদেশে পাটশিল্পকে ঘিরে যেসব সরকারি ব্যবস্থা আছে, এ দেশে তা নেই।” কী সেই ব্যবস্থা? সে দেশে চটের প্রতিটি সামগ্রী রফতানির উপর ১০ শতাংশ ভর্তুকি রয়েছে। বাংলাদেশের ১৬টি ব্যাঙ্ক চটকলগুলিকে বছরে ১৫৮ কোটি টাকা কম সুদে ঋণ দেয়। কাঁচা পাট উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ সরকার বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেয় সে দেশের পাট নিগমকে। এবং চাল, সিমেন্ট, চিনি এবং খাদ্যশস্য প্যাকেজিং-এর জন্য চটের বস্তা বাধ্যতামূলক সে দেশে।

কিন্তু বস্ত্র মন্ত্রকের অভিযোগ, বাংলাদেশের চেয়ে অনেক আগেই চটের বস্তা ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য খাদ্যশস্য প্যাকেজিং থেকে নানা বিষয়ে আইনগত নিরাপত্তা, চটকলগুলির আধুনিকীকরণ ইত্যাদি খাতে যথেষ্ট বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তবু কখনও শ্রমিক সমস্যা, কখনও চটকল কর্তৃপক্ষের পরিচালন ব্যর্থতা এবং অবৈধ কাজকর্মের জন্য সরকারের উদ্যোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমনকী ২০০৫ ও ২০১১ সালে তৈরি দুটি জাতীয় পাটনীতিও অকেজো হয়ে গিয়েছে।

এ সব দেখে শুনে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী কলকাতা ছাড়ার আগে বলে যান, “১৯৮৭ সালে জুট প্যাকেজিং মেটেরিয়ালস (কম্পালসরি ইউজ ইন প্যাকিং কমোডিটিজ) আইন আর বহাল রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, এত সংরক্ষণ সত্ত্বেও একটা শিল্প যদি পিছিয়ে পড়ে, তবে সেই আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে ভাবতে হবে।”

কৃষক সংগঠনের দাবি। প্লাস্টিকের ব্যাগ ও পলিপ্যাক বন্ধ করে পরিবেশ-বান্ধব পাটের ব্যাগ ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে দাবি জানালেন বামপন্থী কৃষক সংঠনের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ও বস্ত্রমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের সঙ্গে দেখা করে বামপন্থী কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই দাবি জানান। সিপিএমের কৃষক সভার নেতা বিপ্লব মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিসান সভার নেতা হাফিজ আলি সৈরানি প্রমুখ জানান, রাজ্যের ৪০ লক্ষ পাট চাষি ও আড়াই লক্ষ চটকল শ্রমিক পাটের উপরে নির্ভরশীল। তাঁদের কথা বিবেচনা করে উপযুক্ত দামে জুট কর্পোরেশনকে পাট কিনতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, প্লাস্টিকের ব্যাগ পরিবেশ এবং মাটি দূষণ করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE