Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নেট-বাজারে বাড়ছে বাড়ি বিক্রি

বই ও বৈদ্যুতিন পণ্যের বাজার দখলে আসছে দ্রুত। এ বার এ দেশে আস্ত বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও পছন্দের বাজার হয়ে উঠছে ইন্টারনেট। উন্নততর প্রযুক্তি আর নতুন প্রজন্মের ক্রেতা এই দুইকে হাতিয়ার করেই নেট-বাজারে বাড়ি বিক্রিকে জনপ্রিয় করতে ঝাঁপাচ্ছে আবাসন শিল্প।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২০
Share: Save:

বই ও বৈদ্যুতিন পণ্যের বাজার দখলে আসছে দ্রুত। এ বার এ দেশে আস্ত বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও পছন্দের বাজার হয়ে উঠছে ইন্টারনেট। উন্নততর প্রযুক্তি আর নতুন প্রজন্মের ক্রেতা এই দুইকে হাতিয়ার করেই নেট-বাজারে বাড়ি বিক্রিকে জনপ্রিয় করতে ঝাঁপাচ্ছে আবাসন শিল্প।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালে ভারতে আবাসন শিল্পের মাপ দাঁড়াবে ১১ লক্ষ কোটি টাকা। আর সেই বাজারের ৩০% দখল করবে ইন্টারনেট। অর্থাৎ, বিক্রিবাটার প্রায় এক তৃতীয়াংশই হবে নেটে। অনলাইনে বাড়ি কেনাকে লোভনীয় করতে আকর্ষণীয় উপহারের টোপও দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি।

মোবাইল, ল্যাপটপ বা জামাকাপড় এখন অনলাইনে হরবখত কিনলেও, ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনা নিয়ে খুঁতখুঁতে অনেকে। কারণ, অত বড় অঙ্কের টাকা ঢালার আগে সরেজমিনে তা দেখতে চান তাঁরা। তাই বাড়ি কেনার জন্য নেট থেকে তথ্য সংগ্রহের চল যতটা, এখনও ততটা নয় অনলাইনে বাড়ি কিনতে তৈরি ক্রেতার সংখ্যা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই ছবি বদলাচ্ছে দ্রুত। শীঘ্রই নেটে বাড়ি কিনতে পিছপা হবেন না অনেকে।

টাটা হাউজিং-এর (যার শাখা সংস্থা টাটা ভ্যালু হোমস অনলাইনে বাড়ি বেচে) প্রধান ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনলাইনের সুবিধা নয়া বাজার তৈরি করছে। যথেষ্ট তথ্য দেওয়া থাকায় মিলছে বাড়তি স্বচ্ছতাও।” বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডস-এর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা অভিজিৎ দাসের মতে, “নেটে কেনাকাটায় মানুষ যত স্বচ্ছন্দ হবেন, তত তার ব্যবহার বাড়বে বাড়ির মতো দামি জিনিস বিক্রিতে। তা ছাড়া, সদ্য শুরু হওয়া যে সমস্ত প্রকল্পে এখনও ইঁট পড়েনি, সেখানে ফাঁকা জমি দেখে বিশেষ কিছু বোঝা যায় না। ফলে সে ক্ষেত্রে ব্রোশিওর দেখে আর অনলাইনে কেনার মধ্যে তেমন ফারাক নেই।”

অনলাইনে বাড়ি বিক্রির এই সম্ভাবনাময় বাজার ধরতেই ঝাঁপাচ্ছে কমনফ্লোর ডট কম, হাউজিং ডট কম, মকান ডট কমের মতো সংস্থা। উদ্যোগী হয়েছে টাটা ভ্যালু হোমস, সিদ্ধা গোষ্ঠীর মতো নির্মাণ সংস্থা। এমনকী সুযোগ হাতছাড়া করছে না স্ন্যাপডিলের মতো ই-কমার্স সংস্থাও।

ক্রেতা টানার বিপণন কৌশল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে উপহারের চমক রাখছে সংস্থাগুলি। যেমন, দিল্লিতে ফ্ল্যাট বুক করায় গাড়ি দিয়েছে এক নির্মাণ সংস্থা। কারও আবার প্রতিশ্রুতি উপহার হিসেবে আই-ফোন, ল্যাপটপ বা নতুন ফ্ল্যাট আসবাব দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার।

পনেরো দিনের অনলাইন বাড়ি মেলা করছে কলকাতারই আবাসন বিপণন সংস্থা এন কে রিয়েলটর্স। সংস্থার মুখপাত্র বিপ্লব কুমারের দাবি, প্রতি বুকিংয়ে অ্যাপল-এর কোনও-না-কোনও গ্যাজেট দিচ্ছেন তাঁরা। বাজার ধরতে নিজেদের সব প্রকল্পকে নেটে সামিল করছে সিদ্ধা গোষ্ঠীও।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মূলত দু’টি বিষয়ের জন্য নেট-বাজারে বাড়ি বিক্রির সাফল্য নিয়ে এত আশাবাদী সংস্থাগুলি। নতুন প্রজন্মের ক্রেতা আর নয়া প্রযুক্তি। সমীক্ষা বলছে, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্রেতাদের গড় বয়স এখন ২৯-৪২ বছর। গত বছরেও যা ছিল ৩১-৪৫। অর্থাৎ নেট ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। সেই সঙ্গে, বাড়ি কেনার আগে তা নেটেই দেখে-শুনে নেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তব করতে এসেছে অ্যাপও। যেমন, কমনফ্লোর ডট কমের নতুন অ্যাপেই সম্ভাব্য ক্রেতা ‘মডেল ফ্ল্যাট’ দেখার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। সংস্থা কর্তা সুমিত জৈনের দাবি, ওই প্রযুক্তিতে প্রায় সত্যি হয়ে ওঠে বাড়ি দেখার অনুভূতি।

ফলে সব কিছু মিলিয়ে ক্রমশ বাড়ি-বাজারেরও দখল নিতে হাত বাড়াচ্ছে ইন্টারনেট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু মেট্রো শহরে সীমাবদ্ধ না-থেকে এই বাজার দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে ছোট ও মাঝারি শহরেও। এমনকী অনলাইনে বাড়ি বিক্রির নিরিখে আগামী দিনে বড় শহরকেও টেক্কা দিতে পারে তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

gargi guhathakurta home selling on internet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE